ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি) এর শরণার্থী আনুয়ারাইটে ম্যানোহোয়া যখন ২০১৪ সালে শীতের মাঝামাঝি সময়ে কানাডায় এসেছিলেন, তখন নতুন বাড়িতে এসে তাকে বেশ কয়েকটি বিষয়ের সাথে অভ্যস্ত হতে হয়েছিল। প্রথমত, কানাডার বরফ শীতল আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা বেশ কঠিন ছিল। নতুন আবহাওয়ার সঙ্গে আরো যে বিষয়টি যুক্ত হয়েছিল তা হল অপরিচিত খাবার।
ডিআরসি-তে আনুয়ারাইটের বাবা বিদ্রোহীদের কাছ থেকে শিশুদের উদ্ধারকারী একটি সৈন্যদলে কাজ করতেন। বিদ্রোহীরা একবার আনুয়ারাইটেকে হত্যা করার জন্য এসেছিল । কিন্তু বিদ্রোহীরা ভুল করে আনুয়ারাইটের পরিবর্তে তার মাকে লক্ষ্য করে হাতে এবং চোয়ালে গুলি করেছিল। আনুয়ারাইটের মা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন।
এ ঘটনার পর তার পরিবার উগান্ডায় পালিয়ে যায়, যেখানে তারা পাঁচ বছর অবস্থান করেছিলেন। পরবর্তীতে তারা সপরিবারে শরণার্থী হিসেবে কানাডা চলে আসেন। বাবা-মা এবং দশ ভাইবোন সহ আনুয়ারেইটে এখন অটোয়ার বাসিন্দা। তিনি কাজ করছেন একটি কেয়ার হোমে ।
আনুয়ারাইটে বলছিলেন, কঠিন সময়গুলোতে একমাত্র খাবারই তার পরিবারের বন্ধনকে একত্র করে রাখত। অটোয়ার বসবাসরত আনুয়ারাইটের এক চাচা-চাচি তাদের নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে বেশ সহযোগিতা করেছিলেন।বিশেষত, উত্তর আমেরিকার খাবারের নতুন মিষ্টি স্বাদের সঙ্গে যখন তাদের অভ্যস্ত হতে হচ্ছিল তখন তার চাচা-চাচি তাদের পছন্দের কঙ্গোর খাবারগুলি রান্না করতে সাহায্য করেছিলেন। ।
প্রথমবারের মতো কানাডিয়ান খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আনুয়ারাইট হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘সবকিছুর মধ্যে চিনি ছিল!তারা আমাদের চিকেন পরিবেশন করতেন, তবে তারা চিকেনের মধ্যে মধু দিয়ে দিয়েতেন। যে খাবারটিরই স্বাদ নিয়েছিলাম, তাতে চিনি ছিল।সত্যি বলতে কি বাড়িতে আমরা এসব খাবারে একেবারেই চিনি ব্যবহার করি না।’
আনুয়ারাইটে এখন নিজেই কঙ্গোর খাবার রান্না করেন। পন্ডু স্যুপ তার অন্যতম প্রিয় খাবার। সুস্বাদু এই কঙ্গোলিজ ডিশটি কাসাভা গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করা হয় । আনুয়ারিট ব্যাখ্যা করছিলেন যে, স্যুপটি ফুফু নামে এক ধরণের ডাম্পলিং এর সাথে পরিবেশন করা হয়।
তিনি বলেছেন যে এই স্বাদগুলি তাকে পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে কাটানো সময়কে স্মরণ করিয়ে দেয়, তার বাবা-মা, দাদা-দাদি, এবং ভাইবোনরা একই থালায় খাবার ভাগ করে খেতে টেবিলে জড়ো হতো। ‘আমরা সবাই স্যুপের একটি প্লেট ভাগ করে নিতাম।’ চার জনের জন্য এক প্লেট স্যুপ। প্লেটটি মাঝখানে রেখে সবাই টেবিলের চারদিকে ঘিরে বসতাম।
আনুয়ারাইটে বলছিলেন, তারা এখনও একসাথে খাবার রান্না করেন ।‘এটি ভিন্ন ধরনের একটা পারিবারিক বন্ধন তৈরি করে । প্রেম, বন্ধন এসবের মধ্য দিয়ে আপনি সময়টি উপভোগ করতে পারেন।’ তিনি হস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে বলছিলেন, ‘এটি সুখস্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়’।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কঙ্গো (ডিআরসি) এর ২২ বছর বয়সী শরণার্থী আনুয়ারিটে ম্যানোহোয়ার কঙ্গোলিজ খাবারের এই রেসিপিগুলো অন্তর্ভূক্ত হয়েছে ইউএনএইচসিআর-র কুকবুক, ‘টেস্ট ফ্রম হোম’ রেসিপিস ফ্রম দ্য রিফুজি কমিউনিটি তে । সেখানকার রেসিপিগুলোর মধ্যে আনুয়ারাইটের পছন্দের পন্ডু স্যুপের রেসিপির বিস্তারিত বর্ণনা থাকছে পাঠকদের জন্য।
পন্ডু অফ কঙ্গো/ কাসাভা পাতার স্যুপ:
পরিবেশন করা যাবে ৪ থেকে ৬ জনের জন্য
উপকরণ ও পরিমান:
- ২ পাউন্ড মাংস বা মাছ
- ২ পাউন্ড কাসাভা পাতা (গাছের নিচের অংশের পাতা)
- ৪ টি কাঁচা মরিচ
- ২-৩ টি বেগুন (টুকরো করে কাটা)
- ৩ টি পেঁয়াজ (বাটা)
- ১ টি পেঁয়াজ (কুচি করে কাটা)
- ৪ কোয়া রসুন (থেতলে দেয়া)
- ৩ টেবিল চামচ পাম ওয়েল
- ২ টেবিল চামচ পন্ডু ওঙ্গা বা অল পারপাস সিজনিং
- ২ প্যাকেট পন্ডু ম্যাগি বা চিকেন স্টক (সিজনিং)
- ২ প্যাকেট এডিজেএ স্পাইস কিউব ফ্লেভার -সিজনিংয়ের জন্য (ঐচ্ছিক)
- এক চিমটি সোডিয়াম গ্লুটামেট (ঐচ্ছিক)
- লবন-স্বাদ মতো
প্রস্তুতপ্রণালি:
- পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, পাতা ও রসুন ধুয়ে নিন এবং একটি ব্লেন্ডারে একসাথে পিষে নিন।
- একটি বড় পাত্র পানি দিয়ে পূর্ণ করুন এবং এটি ফুটতে দিন।
- পানি ফুটতে শুরু করলে, পিষে নেওয়া মিশ্রণটি কাসাভা পাতা ও কেটে রাখা বেগুনের সাথে যুক্ত করুন।
- মাংসের জন্য – কাসাভা পাতা এবং মাংস একসঙ্গে সিদ্ধ করুন।
- মাছের জন্য – কাসাভা পাতা প্রথমে প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য ফুটতে দিন এবং তারপরে মাছ যুক্ত করুন।
- সিজলিং যোগ করুন এবং পাম ওয়েল দেওয়ার আগে ১৫-৩০ মিনিট ধরে উপকরণগুলো রান্না করুন।
- পন্ডু মিশিয়ে নিন।ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে আরও ২০-৪৫ মিনিটের জন্য দমে রেখে এটিকে সিদ্ধ হতে দিন।
- মজাদার স্বাদের জন্য ফুফু বা ভাত দিয়ে পন্ডু স্যুপ পরিবেশন করুন।
সূত্র: ইউএনএইচসিআর