বিদেশে ফেরত অভিবাসী এবং মানবপাচারের শিকার নারী ও শিশুদের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এবং সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ আয়োজনে মানবপাচারের শিকার নারীদের ও বিদেশ ফেরতদের নিয়ে যশোরে সম্পন্ন হয়েছে তিন দিন ব্যাপী “ফুল চাষ ও ব্যবসা উদ্যোগ” বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
গত ১০ এপ্রিল প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী আবুল কালাম। অনুষ্ঠানে আরো সংযুক্ত ছিলেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেওয়ান আসরাফুল হোসেন।
তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক তৌসিফ আহমদ কোরেশী ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আলী কবির।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, করোনার কারণে অনেক কর্মীকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে হচ্ছে। এজন্য এসব বিদেশ ফেরত কর্মী ও মানবপাচারের শিকার নারীদের এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন উদ্যোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি। গত মাসে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর অতি দ্রুততার সঙ্গে এই প্রশিক্ষণের আয়োজনের জন্য তিনি ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামকে ধন্যবাদ জানান।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান মানবপাচারের শিকার ও বিদেশ ফেরতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা লড়াই করে দেশে ফিরেছেন। আপনারা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘যখন যার প্রয়োজন, তার পাশেই থাকে ব্র্যাক।’ মানবপাচারের শিকার ও বিদেশ ফেরতদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে আসার জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী আবুল কালাম প্রশিক্ষণার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হবে।’
প্রশিক্ষণে ফুল চাষ, বিপণন কৌশল, আধুনিক পদ্ধতিতে প্যাকেজিং, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের পাশাপাশি ব্যবসা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা, ব্যাংক ঋণ দান পদ্ধতি ও ব্যবসার আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীরা যশোরের গদখালীতে সরজমিনে ফুল উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি জনাব আব্দুর রহিম এসময় তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। প্রশিক্ষণ চলাকালে সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রশিক্ষণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।
১২ এপ্রিল, প্রশিক্ষণের সমাপনী দিনে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান প্রশিক্ষনার্থীদেরকে সার্টিফিকেট প্রদান করেন। এসময় প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করায় তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী আবুল কালাম সমাপনী অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের সাফল্য কামনা করেন এবং সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্তিতে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা আরো জানান, বিদেশ থেকে ফেরত আসা অভিবাসী এবং মানবপাচারের শিকার নারী-শিশুদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনরেকত্রীকরণে কাউন্সিলিং, দক্ষতা বিকাশ এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরিতে দুই প্রতিষ্ঠান নিবিড়ভাবে কাজ করবে। ফিরে আসা নারী-শিশু এবং বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, ঋণ ও আর্থিক সহায়তা, ব্যবসা নির্বাচন এবং কর্মসংস্থান অথবা উদ্যোগের সুযোগ তৈরিতে সহায়তার আশ্বাস দেন তারা।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের যশোরের জেলা ব্যবস্থাপক দেবানন্দ মন্ডল, খুলনার জেলা ব্যবস্থাপক ঐতিহ্য বিশ্বাস মাম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যশোরের মাঠ কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান ও ব্র্যাকের অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন।