সম্প্রতি ৫০০ জনেরও বেশি শরণার্থী মালয়েশিয়ার কেদাহের একটি বন্দী শিবির থেকে পালিয়ে গেছে। যদিও ক্যাম্প থেকে পালাতে গিয়ে একটি মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দুভার্গ্যবশত এক সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ ছয়জন মারা গেছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রাণঘাতী এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে এবং দাবি করা হচ্ছে, শরণার্থী শিবিরের দুর্বল ও অমানবিক ব্যবস্থাপনা বন্দি শরণার্থীদের পালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে।
এদিকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি হামজাহ বিন জইনুদ্দিন বলেছেন, ‘শরণার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা, অন্য শরণার্থীদের মালয়েশিয়ায় না আসার জন্য একটি ‘শিক্ষা’। তিনি আরো বলেন, ‘এই শরণার্থীদের মালয়েশিয়া ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। সেইসঙ্গে জনগণ তাদের মুখোমুখি হলে কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে। যাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুনরায় আটক কেন্দ্রে পাঠানো যায়।’
ভয়ঙ্কর এই বিবৃতিগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়, উদ্বাস্তদের তাদের নিজ দেশে গুরুতর নিপীড়ন, সহিংসতা এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার চেষ্টা করার জন্য মালয়েশিয়া এলে নির্যাতিত হতে হবে। এই কথাটি তাদের বিপদকে আরো বাড়িয়ে দেয় এবং উদ্বাস্তুদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে। যেখানে তাদের জীবন আরো বিপন্ন। এটি মালয়েশিয়ার শরণার্থীদের প্রতি হওয়া অমানবিক আচরণের একটি ভয়ঙ্কর অনুস্মারক।
যদিও ১৮ হাজারেরও বেশি শরণার্থী নিরাপত্তার খোঁজে মালয়েশিয়ায় এসেছে। ১৯৫১ সালের কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় মালয়েশিয়া। একারণে দেশটি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রাথীদের ‘আইনি’ মর্যাদা দেয়ার নিয়ম মানতে বাধ্য নয়। মূলত প্রতিরক্ষামূলক কাঠামোর এই অভাব, কেবলমাত্র অভিবাসন অপরাধের প্রতি তাদের দুর্বলতা বাড়ায় না বরং তাদের অন্যান্য অপরাধের ঝুঁকিকেও বাড়িয়ে দেয়। যেগুলোর কারণে তারা তাদের নিজ দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে। যেমন যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (এসজিবিভি), যা আটক কেন্দ্রে বন্দি নারী ও শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে।
২০১৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) মহামারি চলাকালীন মালয়েশিয়া শরণার্থী শিবিরে প্রবেশাধিকার পায়নি। যার ফলে এই শিবিরে দীর্ঘদিন আটকে রাখা শরণার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ কাজ করছে। আসলে ব্যক্তি হিসেবে তাদের এই ধরনের অনিরাপদ জীবন কাম্য নয়।
উইমেন্স এইড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএও) মালয়েশিয়ার সরকারকে মানবিক নীতির ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে উদ্বাস্তুদের আটক শিবিরে রাখার কথা বলেছেন। সেইসঙ্গে বাইরের উদ্বাস্তুদের উপর প্রভাব ফেলে এমন পরিস্থিতি মানবিক দৃষ্টিতে মোকাবিলার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা এও বলেছেন, উদ্বাস্তুদের অবশ্যই অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা যাবে না এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখার সক্ষমতাসহ স্বাধীনভাবে চলাফেরার স্বাধীনতা দিতে হবে। যাদের মধ্যে বেশি উদ্বেগ বিরাজ করে, তাদের দীর্ঘদিন আটকে রাখা প্রশমিত করার জন্য ইউএএইচসিআর-এর মতো সংস্থাগুলিকে এই শিবিরগুলোতে অবিলম্বে প্রবেশাধিকার দেওয়া আবশ্যক।
লেখক: কিরন কাউর, অ্যাডভোকেসি অফিসার, উইমেন্স এইড অর্গানাইজেশন (ডবিøউএও)। কিরন কাউরের এ লেখাটি টিআরটি অবলম্বনে সংক্ষেপে ভাষান্তরিত করা হয়েছে।