খালি চোখে ভিন্ন ভিন্ন দুটি দেশের মাঝখানে সীমানা পিলার দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই একটি রেখা লাখো মানুষ আর সংস্কৃতির মধ্যে কি জটিল পরিস্থিতিই না তৈরী করে। এই সীমানাকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত শোনা যায় যুদ্ধ, হত্যার মতো ঘটনা। পৃথিবীতে এমন কিছু সীমান্ত অঞ্চল রয়েছে যেগুলো এরই মধ্যে ভয়ংকর আর হিংস্রতার তকমা পেয়েছে।এমনকি তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তও।চলুন জেনে নেয়া যাক দশ দেশের পাঁচটি সীমান্ত সম্পর্কে।
দক্ষিণ কোরিয়া-উত্তর কোরিয়া
১৬০ মাইল দীর্ঘ কোরিয়ার বেসামরিক অঞ্চল বা ডিএমজেড দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে বিভক্ত করেছে। বলা হয় এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সীমান্ত এলাকা। এখানে সবসময় ভারি অস্ত্র, বোমাসহ যুদ্ধ মোকাবিলার যাবতীয় সরঞ্জামাদি মজুদ থাকে।আসলে কোরিয়ান যুদ্ধ দুই কোরিয়ার মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি,শঙ্কা কখনোই থামাতে পারেনি। উভয় পক্ষ যাতে করে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা না চালাতে পারে বা আক্রমণ করে সীমান্ত পেরোতে না না পারে সেজন্যই মূলত এই সীমা রেখায় দুই দেশের সেনাবাহিনী দূরত্ব বজায় রেখে একে অপরের দিকে অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে থাকে। এখান থেকে কেউ অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা মানেই নির্ঘাত মৃত্যু; গুলি করে হত্যা করা হয়।। যা থেকে আমেরিকান নাগরিক পর্যন্ত বাদ যায়নি।
ভারত-পাকিস্তান
ভারত পাকিস্তান সীমানা নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই। এমন কোনো দিন নেই যে, এ দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা তৈরী হয় না। দুই দেশের মধ্যে ১ হাজার ৮০০ মাইলের সীমানা রয়েছে, যা নিয়ে সবসময়ই বাড়তি নিরাপত্তায় রত দুই দেশ। পৃথিবীতে একমাত্র ভারত সেই দেশ, যে তার সীমানায় উচ্চশক্তিসম্পন্ন ফ্লাড লাইটের ব্যবস্থা রেখেছে। সেই ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু, তিনটি যুদ্ধ এবং কমপক্ষে ২৫ বছর ধরে কাশ্মির নিয়ে বিবাদে জড়াতে দেখা গেছে এই দুই দেশকে। এখন এই মুহূতেও দুই দেশের চূড়ান্ত বিবাদ মারাত্মক আকার ধারন করছে।
ইসরায়েল-সিরিয়া
সীমান্ত নিয়ে ইসরায়েল ও সিরিয়ার সংঘাত বহুকালের। ১৯২০ সালে ব্রিটেন সীমানা টেনে ফ্রান্সকে সিরিয়ার দিকে টেনেছিল। এরপর আবার সংঘাতের কেন্দ্রে যুক্ত হলো গোলান মালভূমি । এই গোলান মালভূমিকে নিয়ে ১০০ বছরের মতো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। দুই দেশই বেশ কয়েকবার সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে। আজও এর পরিসমাপ্তি ঘটেনি। এখনো নিয়মিত এখানে গুলি ছোড়াছুড়ি হয় উভয় পক্ষ থেকে। সিরিয়ায় গৃহ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই সংঘাত আরো বেড়ে গেছে।
মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টেক্সাস পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৯৮৯ মাইল এলাকা জুড়ে মেক্সিকো ও যুক্তেরাষ্টের সীমান্ত অঞ্চল রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে বৈধ উপায়েও পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ পাড়ি দেয়। এই সীমান্তের অধিকাংশই গ্রাম ও মরুভূমিতে ঘেরা। প্রায় ২০ হাজার বর্ডার প্যাট্রোল সদস্য নিয়োগ রয়েছে, যা ২৪ ঘণ্টা এই সীমান্তবর্তী বড় শহরগুলো পাহারা দিচ্ছে। যদিও মরুভূমির বেশিরভাগ জায়গাই অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। আর এই মরু অঞ্চল দিয়েই প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখের মতো মানুষ অনিরাপদভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে, যাদের মধ্যে কয়েক হাজার প্রাণ হারায়। বিশেষ করে পাচারকারীদের কাছে এল পাসো-জুয়ারেজ অঞ্চল খুবই পছন্দের। এখানে মাদক অস্ত্র চোরাচালানের রমরমা ব্যবসা আছে। পুলিশ ও মাফিয়াদের মধ্যে প্রায়শই এখানে মুখোমুখি যুদ্ধ করতে দেখা যায়। এতে শত শত হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই সংঘাত আমেরিকান অঞ্চল গুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ।
বাংলাদেশ-ভারত
পৃথিবীর ভয়ংকর পাঁচ দেশের সীমান্তর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫৪৫ মাইল দীর্ঘ সীমানা । যা সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ সীমান্ত। দুই দেশের সীমানার মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে এমনওদেখা যায়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিনা অনুমতিতে ঢুকে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালায়, যা নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমশ অসন্তোষ বাড়ছে। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হয়ে প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় কালোবাজারি পণ্য ঢোকে। এছাড়া বাগজপত্র বিহীন অভিবাসীও আসা যাওয়া করে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রায়ই গুলি চালায় এবং হত্যার ঘটনা ঘটে নিয়মিত। ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার নিরীহ মানুষের হত্যার ঘটনা ঘটেছে এই দুইদেশের সীমান্তে। যে অভিযোগের প্রায় পুরোটাই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে বর্তায় এদেশের বেশিরভাগ নাগরিক।