সম্প্রতি মেলিলার স্প্যানিশ ছিটমহল থেকে মরক্কোকে আলাদাকারী সীমানা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করেছিলো প্রায় দুই হাজার অভিবাসী। এ সময় ২০ জনেরও বেশি অভিবাসী মারা গেছে বলে জানা গেছে। সরকারীভাবে তদন্ত করে এই মৃত্যুর যথাযথ কারণ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি।
গত শুক্রবার অভিবাসীরা মূলত সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে একটি কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিলো। এসময় উত্তর আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চলটির ঘেরের চারপাশে মরক্কোর পুলিশ এবং স্প্যানিশ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষ হয় তাদের।
মরক্কো বলেছে, সংঘর্ষের এ ঘটনায় ২৩ জন অভিবাসী নিহত হয়েছে এবং বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এটিকে তারা অভিবাসীদের আটকানোর একটি ‘পদক্ষেপ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। এ ঘটনায় কয়েকজন পিষ্ট হয়েছে এবং অন্যরা বেড়ার উপর থেকে পড়ে গেছে। স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মরক্কোর অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস (এএমডিএইচ) কে জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ২৯ জন।
আরো পড়ুন:
সমুদ্রে মারা যাওয়া অভিবাসীদের মৃতদেহ সংগ্রহ করেন তিনি, পৌঁছে দেন স্বজনদের কাছে
অভিবাসীদের নিহত হওয়ার বিষয়টি মেলিলায় সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। যা মরক্কোর উপকূলে আরেকটি স্প্যানিশ ছিটমহল সেউটাসহ গত এক দশক ধরে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে হাজার হাজার আফ্রিকান অভিবাসীকে আকৃষ্ট করেছে।
স্প্যানিশ পুলিশ অনুমান করে যে, গত বছর ১৩ হাজরেরও বেশি অভিবাসী মরক্কো থেকে স্পেনে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছিলো। সে সময় ১৪০ জনের বেশি মরক্কোর পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে পাঁচজন গুরুতর আহত হয়। মূলত তরুণ অভিবাসীদের মধ্যে দুই ঘন্টার সংঘর্ষ হয়; লাঠি চালাচালি শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক আকারে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছিলো।
ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী এএমডিএইচ বলেছে যে, অভিবাসীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেখানে মরক্কোর নিরাপত্তা বাহিনীদের চোখের সামনে সীমান্তের বেড়ার কাছে কয়েক ডজন অভিবাসী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ স্প্যানিশ ছিটমহলে ‘একটি সহিংস ও সংগঠিত হামলা’ বলে অভিহিত করার জন্য ‘স্থানীয় মাফিয়াদের’ দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন যে, স্প্যানিশ এবং মরক্কোর পুলিশ ‘এই সহিংস আক্রমণ প্রতিহত করতে’ সহযোগিতা করেছিলো।
স্পেনের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান এস্তেবান বেল্টরান, স্পেন এবং মরক্কোর কর্তৃপক্ষকে ‘সীমান্তের উভয় পাশে’ যে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ ঘটেছে, তা দ্রæত তদন্ত করার আহŸান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অ্যামনেস্টি মরক্কোর নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ‘অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের বিরুদ্ধে অত্যধিক শক্তি ব্যবহার’ দেখানোর চিত্রও দেখা গেছে। তারা বলেছে, ‘তারা এমন লোকদের মারতে লাঠিসোটা ব্যবহার করেছে, যারা ইতোমধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং যারা কোন প্রতিরোধের প্রস্তাব দেয়নি’।
আরো পড়ুন:
মানবাধিকার রক্ষা নয়, অভিবাসী বন্টন নিয়েই বেশি চিন্তিত ইউরোপ
বেল্টরান স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষকে মেলিলা থেকে জোরপূর্বক অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি অনুশীলন যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে নিষিদ্ধ ছিল। কারণ এটি সম্ভাব্য শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য আশ্রয় চাওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যহত করে।
তিনি এও বলেন, বেশিরভাগ অভিবাসী স্প্যানিশ ছিটমহলে প্রবেশের চেষ্টা করছে। যারা দক্ষিণ সুদানের সংঘাত থেকে পালিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে যুদ্ধ শরণার্থীর মতো আচরণ করা উচিত।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষের আশ্রয় চাওয়ার জন্য একটি আইনি ও নিরাপদ পথ তৈরি করা অতীব জরুরি।’ মরক্কোর মানবাধিকার সংস্থাগুলোও তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
স্পেন গত মাসে ঘোষণা করে যে, এটি মরক্কোর সার্বভৌমত্বের অধীনে পশ্চিম সাহারাকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য রাবাতের পরিকল্পনাকে সমর্থন করে। মরোক্কোর সঙ্গে বিকৃত কূটনৈতিক সম্পর্ক সংশোধন করতে যাওয়ার পর থেকে শুক্রবার মেলিলায় প্রবেশের প্রথম প্রচেষ্টা ছিল। পশ্চিম সাহারা স্বাধীন হবে নাকি মরক্কোর অংশ হবে, তা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘ ১৯৯০ সাল থেকে একটি গণভোট আয়োজনের চেষ্টা করেছিলো, যদিও তা শেষ অব্দি ব্যর্থ হয়।
স্পেন গত মাসে ঘোষণা করে যে, এটি মরক্কোর সার্বভৌমত্বের অধীনে পশ্চিম সাহারাকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য রাবাতের পরিকল্পনাকে সমর্থন করে। মরোক্কোর সঙ্গে বিকৃত কূটনৈতিক সম্পর্ক সংশোধন করতে যাওয়ার পর থেকে শুক্রবার মেলিলায় প্রবেশের প্রথম প্রচেষ্টা ছিল। পশ্চিম সাহারা স্বাধীন হবে নাকি মরক্কোর অংশ হবে, তা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘ ১৯৯০ সাল থেকে একটি গণভোট আয়োজনের চেষ্টা করেছিলো, যদিও তা শেষ অব্দি ব্যর্থ হয়।
সূত্র: বিবিসি