বিমানের আঘাতে অভিবাসী পাখির মুত্যৃর হার বেড়েছে ৪০০ গুণ

0
736
অভিবাসী পাখি- বিমান সংঘর্ষ

জীবনরক্ষার তাগিদে মানুষের মতো পাখিরাও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। অভিবাসনের ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে পাখিদের সুবিধা হলো, ওরা দুই ডানায় ভর করে পাসপোর্ট কিংবা ভিসা ছাড়াই সীমান্ত পাড়ি দিতে পারে; এদেশ-ওদেশ ঘুরে বেড়াতে পারে। মুক্ত আকাশে এতকাল ধরে এভাবেই ডানা ঝাপটিয়ে নিশ্চিন্তে গন্তব্যে পৌঁছাতো পাখিরা। কিন্তু তাতেও এখন বাঁধা যোগ হয়েছে।

অভিবাসনের সময় মানুষের মতো পাখিদেরও জীবন এখন হুমকির মুখে, ওদেরও রক্ত ঝরছে। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনি তথ্য। কর্নেল ল্যাব অব অর্নিথোলজির নেতৃত্বের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসনের সময় ঝাঁক বেঁধে আকাশে উড়তে থাকা পাখিদের সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষের মাত্রা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ৪০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটি এলাকায় অবস্থিত বিমানবন্দরগুলোতে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এমন ফলাফল পেয়েছেন গবেষকরা।


‘ছয় বছর সময়কালে কেনেডি, নেওয়ার্ক ও লাগার্ডিয়া বিমানবন্দরে রেকর্ডসংখ্যক পাখির শরীরে বিমানের আঘাত লাগে। মূলত পাখিরা যখন অভিবাসনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল, ঠিক সেইসময়গুলোতেই এ আঘাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার ঘটেছে। বিশেষ করে শরৎকালের দিকে, বছরের শুরুর দিকে জন্ম নেয়া অল্প বয়সী পাখি, যারা আকাশে উড়ে উড়ে অভিবাসনের জন্য অনভিজ্ঞ, তারাই সবচেয়ে বেশি আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে।

গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন কর্নেল ল্যাবের রোজ পোস্ট ডক্টরাল ফেলো সিসিরিয়া নিলসন। বর্তমানে তিনি ডেনমার্কে ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন-এ কর্মরত আছেন। নিলসনই প্রথম গবেষক যিনি ‘বার্ড স্ট্রাইকস অ্যাট কমা এয়ারপোর্টস এক্সপ্লেইনড বাই সিটিজেন সায়েন্স অ্যান্ড ওয়েদার রাডার ডাটা’ শিরোনামে এ গবেষণাটি করেছিলেন, যা গত ১৯ আগস্ট অ্যাপ্লাইড ইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়।

‘নব্বই শতাংশ আঘাতের ঘটনা ঘটে পরিযায়ী প্রজাতির পাখির সঙ্গে।’ নিলসন বলেন, ‘তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমাদের ধারণা, যে সময়টিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পাখি অভিবাসনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে সেই সময়গুলিতে বিমানের সঙ্গে তাদের সংর্ঘষ হয়। এই ঝুঁকি ৪০০ শতাংশ থেকে ৭০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।


বছরজুড়ে পাখিদের চলাচলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করলে পাখিদের জীবন রক্ষার পাশাপাশি বিমান ও যাত্রীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী পাখিদের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। ২০০৯ সালে ১৫৫ জন যাত্রী নিয়ে ইউএস এয়ারওয়েজের একটি বিমান লাগার্ডিয়া থেকে উড্ডয়নের পরপরই কানাডার একঝাঁক পাখির সঙ্গে আঘাত লাগে। অবস্থা বেগতিক দেখে বৈমানিক বিমানটিকে হাডসন নদীতে জরুরী অবতরণে বাধ্য হন।


গবেষকরা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ রাডারের মাধ্যমে কাছাকাছি দুটি স্টেশন থেকে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখতে পেয়েছেন, কখন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পাখি অভিবাসনের জন্য বিমানবন্দর এলাকা থেকে চলাচল করে। ল্যাবের ই-বার্ড প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে নির্দিষ্টভাবে জানা গেছে বছরজুড়ে ঠিক কোন কোন ঘটনা ঘটেছে বিমানবন্দরের আকাশে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে পাখির আকার যত বড় ঠিক তত বেশি আঘাত লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।


যে প্রজাতির পাখি সবচেয়ে বেশিবার সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তাদের বিপদ স্কোর দেয়া হয়েছিল। যেসব পাখির সঙ্গে বিমানের আঘাত লাগার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডা গিজ, গ্রেট হিরন, ম্যালার্ড ও টার্কি শকুন। এর মধ্যে কানাডা গিজ ক্ষতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।


পাখির সঙ্গে সংঘর্ষ হলে বাণিজ্যিক বিমানগুলো অনেক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। বিশেষ করে উড্ডয়ন ও অবতরণের ক্ষেত্রে, যখন কিনা বিমান ও পাখি একইসঙ্গে আকাশসীমা ব্যবহার করতে চায়। মিলিটারি বিমানগুলো অবশ্য কম ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ এ বিমানগুলো খুবই দ্রুতগামী।

পাখিদের চলাচল, গতিবিধি ও অভিবাসনের সময় পর্যবেক্ষণ করে বিমান কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নিলে একদিকে যেমন বিমান রক্ষা পাবে দুর্ঘটনার হাত থেকে, তেমনি মানুষ ও পাখির জীবন রক্ষার পাশাপাশি সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সূত্র: কর্নেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here