‘অভিবাসনের ইতিহাস’ রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে জার্মানিতে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসকারী এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ হয় বিদেশি বংশোদ্ভ’ত নয় তাদের অন্তত একজন অভিবাসী পিতামাতা রয়েছে।
মঙ্গলবার জার্মানির পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ডেস্টাটিস’ কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে যে, অভিবাসী ব্যাকগ্রাউন্ড তথা অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে এমন লোকদের সংখ্যা জার্মানির মোট জনসংখ্যার ২৭ দশমিক ২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমান, ইউরোপীয় দেশগুলোয় বসবাসকারী প্রায় ৮২ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ২২ দশমিক ৩ মিলিয়ন বিদেশি বংশোদ্ভ’ত বা বিদেশি শিকড়যুক্ত মানুষ, যা কিনা ২০০৫ সালে প্রথম পরিচালিত জরিপ থেকে সর্বাধিক সংখ্যক।
কোথা হতে অভিবাসীরা আসছে?
অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে এমন বেশিরভাগ মানুষেরই আদি নিবাস ইউরোপ ও এশিয়ায়। এছাড়া অন্যান্য প্রায় ৭ দশমিক ৫ মিলিয়নের সঙ্গে ইইউ দেশগুলির, ৩ দশমিক ৫ মিলিয়নের মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে এবং ১ দশমিক ১ মিলিয়নের আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। স্বতন্ত্র দেশগুলোর দিকে দৃষ্টি রাখলে দেখা যায়, তুরস্ক ১২ শতাংশ, এরপর রয়েছে যথাক্রমে পোল্যান্ড ১০ ও রাশিয়া ৬ শতাংশ।
কোন ভাষায় তারা কথা বলে?
সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, ৪৬ শতাংশ ক্ষেত্রে অভিবাসনের ইতিহাসযুক্ত মানুষেরা তাদের বাড়িতে একচেটিয়া বা বেশিরভাগ সময়ই জার্মান ভাষায় কথা বলে। তুর্কি হলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ভাষা, যেখানে অভিবাসী ব্যাকগ্রাউন্ডের ৪ শতাংশ মানুষ বাড়িতে কথা বলে, তারপর রাশিয়ান ৭ শতাংশ ও আরবি ৫ শতাংশ।
ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের অবস্থা কী?
সমীক্ষাটিতে ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার কথিত বিশেষ অভিযানের ফলে সৃষ্ঠ পরিবর্তনগুলি অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। অথচ এ সময়ে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যূত হয়েছিল। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় তিন লাখ আট হাজার ইউক্রেনীয় জার্মানিতে বসবাস করেছিলেন। যদিও গতকাল মঙ্গলবার পৃথক একটি ঘোষণায় জার্মান পুলিশ জানিয়েছে, রাশিয়ার কথিত বিশেষ অভিযান শুরুর পর থেকে তিন লাখ ৩৫ হাজার ইউক্রেনীয় শরণার্থী জার্মানিতে প্রবেশ করেছে। যা দেশটিতে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরো বেশি। কারণ ইউক্রেনীয়রা ভিসা ছাড়াই জার্মানিতে যেতে পারে। অনুমান করা হয়, জার্মানিতে অবস্থানরত শরণার্থীদের প্রায় অর্ধেকই শিশু ও যুবক।
উল্লেখ্য, জার্মানির বিশাল অর্থনীতি কয়েক দশক ধরে অভিবাসী কর্মীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজনীতিবিদরা দেশটিতে আরো বেশি মাত্রায় অভিবাসনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। যদিও একই সময়ে জার্মান ও ইইউ রাজনীতিবিদরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। যে কারণে এখন ইউক্রেন থেকে আগত শরণার্থীদের প্রতি সংহতির প্রস্তাবে তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র: ডয়েচেভেলে (ইংরেজি)