বয়স ৪৫ বছর পেরোনোর পরই পেনশন সুবিধা প্রাপ্তি ও যৌনপেশাকে শ্রম তালিকার অন্তর্ভূক্তির দাবিতে এবার রাজপথে নামলো কলকাতার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। গতকাল কয়েক হাজার যৌনকর্মী এ উপলক্ষ্যে একটি মশাল মিছিল করেছে। সংবাদমাধ্যম এএনআই এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে।
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি নামে যৌনপেশার সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন এ মিছিলের আয়োজন করে। সংগঠনটি ‘আনস্টপ্যাবল উইমেন’স সিনথেসিস কমিটি’ অথবা শুধুই দুর্বার নামেও পরিচিত। সংগঠনটির সদস্য হিসেবে ৫০ হাজারেরও অধিক যৌনকর্মী রয়েছে।
মহান মে দিবসের প্রাক্কালে নিজেদের দাবি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক এ যৌনকর্মীর কলকাতার রাজপথে জড়ো হয়। মিছিলে অংশগ্রহণ করতে আসা যৌনকর্মীদের বক্তব্য, তাদের পেশা বাকিসব পেশার মতোই। তাই তাদেরকে নিয়মিত শ্রমিকের মর্যাদা দিতে হবে।
‘আমাদের কাজ সাংবিধানিক এবং নিয়মিত কর্মীর মর্যাদা পাওয়ার জন্য আমাদের সন্তানদের তাদের মায়েদের প্রয়োজন’-বলেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিশাখা লস্কর।
বহু বছর ধরে যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি যৌনপেশার সামাজিক ও আইনি স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। সংগঠনটির বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ট্রাফিকিং ইন পার্সনস (প্রিভেনশন, কেয়ার অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন) বিল যৌনপেশাকে শেষ করে দিতে পারে। এই বিলে আইনে পরিণত হলে যৌনপেশাকে অপরাধের তালিকায় ফেলা হতে পারে বলেও সংগঠনটির আশঙ্কা।
সোনাগাছি যৌনপল্লীতে প্রায় ১৫ হাজার যৌনকর্মী বসবাস করছে। ধারণা করা হয়, পুরো পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৭০ হাজার যৌনকর্মী রয়েছে। যদিও ভারতের বিপুলসংখ্যক নারী যৌন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দেশটিতে এখনো পতিতাবৃত্তিকে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সামগ্রিক বিবেচনায় এই খাতটি এখনো অতলে পড়ে আছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী ভারতে প্রায় ২০ লাখ নারী যৌনকর্মী রয়েছে।
দুর্বার নামের সংগঠনটি আরো দাবি করেছে যে, করোনাকালে যৌনকর্মীরা নিদারুণ কষ্টের মধ্যে জীবন কাটিয়েছে। এখনও সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় ৭০ হাজার যৌনকর্মী। এর মধ্যেই কেন্দ্রের বিল নতুন করে ভয় দেখাচ্ছে। দুর্বারের মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরাও মানবপাচার বন্ধ করার পক্ষে। কেউ যাতে পাচারের শিকার হয়ে যৌনপেশায় না আসে, তা নিশ্চিত করতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। কিন্দু কেন্দ্র যা চাইছে তাতে এই পেশাই বিপদে পড়বে। যৌনকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে তাদেও ছেলেমেয়েরাও বিপদের মুখে পড়বে। এই কারণেই আমরা লাগাতার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। শনিবারের মিছিল তারই অংশ।’
প্রতি বছর মে মাসের এক তারিখ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উদযাপন করা হয়। ভারতের চেন্নাইয়ে প্রথমবারের মতো ১৯২৩ সালে লেবার কিষাণ পার্টির উদ্যোগে শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। শ্রমিকদের সম্মান জানাতে এবং তাদের কঠোর শ্রমের স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলনকে ত্বরাণি¦ত করতে প্রতি বছর মে দিবস পালন করা হয়। বছরের এই একটি মাত্র দিনকেই শ্রমিকদের জন্য পালিত হয়। সারা পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই মে দিবস নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয়।
সূত্র: এএনআই