অনিয়মিতভাবে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করার সময় আত্মপ্রকাশকারী নায়ক ও নায়িকার প্রথম মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্য দিয়ে শুরু হয় ‘রিফিউজি’ চলচ্চিত্রের গল্প। নায়িকা বাংলাদেশ থেকে আগত। যে কিনা একটি মুসলমান পরিবারের অন্তর্গত। তাকে আবার বিহারী মুসলমান হিসেবেও শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে; ভারত ভাগের সময় যারা পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলো। অন্যদিকে নায়ক নিজেকে শরণার্থী হিসেবে দাবি করেন। কেননা, এই পরিচয় ছাড়া তার আর কোনো নাম নেই। যারা অর্থ উপার্জনের জন্য সীমানা অতিক্রম করতে বাধ্য হয় তাদের সহায়তা করেন তিনি।
বিহারী মুসলমানদের সমস্যা ও দুর্দশা খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ দেশভাগ তাদের তেমন কোনো উপকারে তো আসেইনি উল্টো তাদের ওপর বেশ বিরূপ প্রভাব ফেলেছিলো। এখনো তাদের প্রতি পাকিস্তানিদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। নির্মাতা জেপি দত্ত যদি এদিকে একটু নজর দিতেন তবে চলচ্চিত্রটি বেশি জোরালো হতে পারতো। শরণার্থী সংকট এবং রোমান্টিকতা; দুটো একসঙ্গে তুলে ধরতে গিয়ে তিনি খানিকটা বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন হয়তো।
আরো পড়ুন: চলচ্চিত্র ‘মাদার অ্যান্ড সান’ : বাস্তুচ্যূত মা-ছেলের জটিল সম্পর্কের গল্প
এখানে অভিষেক বচ্চন যে মেয়েটির প্রেমে পড়েন, তাকে বিয়ে করা একটি জলন্ত সমস্যা। তবে রোমান্টিক ট্র্যাকটি নিঃসন্দেহে চিত্তাকর্ষক। অন্যদিকে চলচ্চিত্রের বাকি অংশ কিছুটা অযৌক্তিক সিকুয়েন্স এবং ঘটনা দিয়ে ভরা।
কুলভূষণ খারবান্দা; যিনি অভিবাসী বিহারী মুসলমান পরিবারের প্রধান। তাকে দিয়ে দারুণ কিছু সংলাপ উপস্থাপন করানো হয়েছে। যেমন-বাংলাদেশি হোনা কোই গুনাহ হ্যায় কেয়া? (বাংলাদেশি হওয়াটা কি পাপ?)। এই দৃশ্যগুলি উদ্বাস্তুদের পরিণতিকে আরো বেশি অর্থপূর্ণ করে তোলে। কিন্তু অভিষেকের বিপরীতে প্রধান অভিনয়শিল্পী কারিনা কাপুর সীমান্তে যখন একটি সন্তানের জন্ম দেন, সেই দৃশ্যগুলো অনেকটা মেকি লাগে।
চলচ্চিত্রটি শরণার্থী বিষয়ক একটি মানব গল্প। বিশেষ করে ‘শরণার্থী’ নামক একজন ব্যক্তি, যিনি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের একটি গ্রামে বাস করেন। তারা বাংলাদেশ থেকে মুসলমান শরণার্থীদের সীমানা পাড়ি দিতে সাহায্য করেন। কারণ তারা মনে করেন, সেখানে তারা কম নিপীড়িত হবেন এবং একটু ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: চলচ্চিত্র ‘ইলেভেন ডেইজ ইন মে’ : ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা না করলে ঘুম আসে না ইসরায়েলি সেনাদের
কিন্তু সেই সীমান্ত অতিক্রম করা অতোটাও সহজ নয়। এতে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। কারণ সেখানে পাকিস্তানিদের পাহারাদার রয়েছে। উদ্বাস্তুরা এই সীমানা অতিক্রমরে সময় নানারকম আইনি কার্যকলাপের সম্মুখীন হয়। এবং তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এসব আইনের চেয়েও উদ্বেগের ও ভয়াবহ ব্যাপার হলো, মরুভূমিতে নানাবিধ লড়াই ও কষ্ট সহ্য করে জীবনযাপন করার বিষয়টি।
রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যক্তিগত সুখের সামগ্রিক বিষয়বস্তু ভারতীয় চলচ্চিত্রে অনেকটাই দেখা যায়। শরণার্থী ন্যায্য হওয়ার এবং এই বার্তাটি উপস্থাপন করার জন্য যে মানুষ ‘জাতি’ ধারণার জন্য একে অপরকে হত্যা করে, সেখানে শরণার্থীদের ভালো জীবনের আশা করা আকাশ-কুসুম কল্পনা ছাড়াই কিছুই নয়। চলচ্চিত্রে এমন একটি ন্যারেটিভ দিয়ে শেষ হয়; যেখানে সীমানা নেই এমন একটি বিশ্বের স্বপ্ন উপস্থাপন করা হয়। ‘যেখানে থাকবে না কোনো পাসপোর্ট, থাকবে না কোনো ভিসা’।
আরো পড়ুন: প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ফ্লি: স্বদেশ আর ভিটেমাটি হারানো এক শরণার্থীর ত্যক্ত স্মৃতিকথা
২০১০ সালে নির্মিত ‘রিফিউজি’ চলচ্চিত্রটি একমাত্র ভারত-বাংলাদেশকে একত্রিত করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দুই দেশ একসঙ্গে করমর্দন করছে এবং সেখানে শরণার্থী বিষয়টিও উপস্থিত রয়েছে। সবমিলিয়ে চলচ্চিত্রটির বয়ান আজকের তথা চলমান শরণার্থী সংকটকালেও সমান গুরুত্বের দাবিদার।
নিবন্ধটি ভাষান্তর করেছেন রীতা জান্নাত