ভারতের মিজোরামে গত এক সপ্তাহে মায়ানমার থেকে আগত অন্তত ৮ হাজার নতুন শরণার্থী যোগ হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সামরিক জান্তার হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে মায়ানমারের লক্ষ লক্ষ নাগরিক এরই মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া আরও কয়েকটি দেশে মায়ানমার থেকে পালিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে। এর মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম অন্যতম।
সবমিলিয়ে মিজোরামে এ পর্যন্ত মায়ানমারের শরণার্থী সংখ্যা দাঁড়ালো ২২ হাজারে। শরণার্থীদের এই তালিকার মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদরাও।
এদিকে পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষ্যে এবার ক্রমশ বাড়তে থাকা শরণার্থীদেরকে পরিচয়পত্র দিতে যাচ্ছে মিজোরাম সরকার। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে। অবশ্য কোভিড মহামারির প্রকোপ বাড়তে থাকায় আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বেশিরভাগ শরণার্থী ছোটো ছোটো নৌকায় করে তিয়াউ নদী পার হয়ে বনজঙ্গল পেরিয়ে মিজোরামে প্রবেশ করেছে। এদের বেশিরভাগ মায়ানমারের চিন রাজ্যের নাগরিক। মূলত এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিজোরামের মানুষদের নৃ-তাত্ত্বিক মিল রয়েছে।
মিজোরামের মূখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা বেশ কয়েকবার কেন্দ্র সরকারের কাছে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেছিলেন।
এরপর পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত বছর উত্তর-পূর্ব রাজ্যসমূহ-মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশে একজন উপদেষ্টা পাঠিয়েছিল।
ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যসমূহ থেকে মায়ানমারের সঙ্গে ১ হাজার ৬৪০ কিমি অরক্ষিত সীমান্ত রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বলা হয়েছে, জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেশন ১৯৫১ ও এর ১৯৬৭ প্রটোকলে ভারত স্বাক্ষর করেনি এবং কোনো বিদেশীকে ‘শরণার্থী’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়ার এখতিয়ার কিংবা ক্ষমতা নেই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের।
দেশটির বেশ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সেখানকার স্থানীয় সংগঠন মায়ানমার রিফিউজি রিলিফ কমিটি গঠন করেছে। এর মাধ্যমে এই কমিটি অনুদান, ত্রাণসামগ্রী, খাবার, পোশাক ও ওষুধ সংগ্রহ করে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের সহায়তা করছে।
মিজোরামের সঙ্গে মায়ানমারের ৫১০ কি.মি. দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে এরই মধ্যে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা চিন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নাগরিক ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা মূলত ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিক থেকে সামরিক জান্তার হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।
সূত্র: এনডিটিভি