অনিয়মিত উপায়ে দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রবেশের জন্য গতবছরও সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট ছিল লিবিয়া। ইউরোপীয়ান বর্ডার অ্যান্ড কোস্ট গার্ড এজেন্সি এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, গতবছর প্রায় ২ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশীর ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় উপকূলীয় ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই মধ্য-ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিল। মূলত এই রুটটি উত্তর আফ্রিকা থেকে প্রাথমিকভাবে লিবিয়া হয়ে ইতালি পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইউরোপীয়ান বর্ডার অ্যান্ড কোস্ট গার্ড এজেন্সি ‘ফ্রন্টেক্স’ এর সর্বশেষ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অনিয়মিত উপায়ে অভিবাসনের হার বছরে ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর ভাষ্য, যেহেতু লিবিয়া ইউরোপের খুব কাছেই অবস্থিত সেহেতু এই রুট দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের জনপ্রিয়তা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এছাড়া দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও অভিবাসন প্রত্যাশীদের এই রুট দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। কারণ নানাবিধ সংকটের মধ্যে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী চাইলেও কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
আরো পড়ুন ▪ ইতালি ও লিবিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কমিটিতে দুই নারীর মামলা
সাধারণত, যারা এই রুটটি ব্যবহার করে তাদের বেশিরভাগই বিপজ্জনকভাবে উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়ার জন্য হালকা যান বা রিকেট বোট ব্যবহার করে। এসময় তারা প্রায়ই পাচারকারীদের দ্বারা শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়।
২০২১ সালে ফ্রন্টেক্স কর্তৃক যতজন নিবন্ধিত হয়েছেন তা ২০১৭ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। অনেক দেশে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ শিথিলের কারণে অনিয়মিত উপায়ে অভিবাসন প্রত্যাশী অথবা শরণার্থীরা প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ লিবিয়া অথবা তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। অবশ্য গত বছর সীমান্ত কর্তৃপক্ষ ১০২টি গন্তব্য দেশে ১৮ হাজারেরও বেশি অ-ইউরোপীয় দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে দিয়েছে।
গতবছর শনাক্ত হওয়া যেসব অভিবাসন প্রত্যাশী অনিয়মিত উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছে, সেগুলোর প্রতি ১০টি ঘটনার একটি ঘটেছে পূর্ব ভুমধ্যসাগর রুটে। পূর্ব ভুমধ্যসাগর রুট বলতে মূলত তুরস্ক, গ্রিস, সাইপ্রাস ও বুলগেরিয়া থেকে আগমনকে বোঝায়।
তবে ফ্রন্টেক্স এর পরিসংখ্যান শুধু তাদেরকে নিয়ে করা হয়েছে, যারা কিনা অনিয়মিতভাবে ইউরোপে প্রবেশে চেষ্টা করতে গিয়ে আটক হয়েছেন। এই ব্লককে কতসংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশী অনুপ্রবেশ করেছে তার সঠিক কোনো তথ্য কারো কাছে নেই।
অবশ্য জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এর ধারণা, ৪৪ টিরও বেশি দেশের প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার অভিবাসী বর্তমানে লিবিয়া অবস্থান করছেন। এদের অনেকে যুদ্ধ ও দরিদ্রতা থেকে বাঁচতে এবং ইউরোপে নতুন জীবনের আশায় ভুমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
এদিকে দাসত্ব, নির্যাতন এবং ধষর্ণসহ হাজার হাজার অভিবাসীকে ভয়ঙ্কর আচরণের জন্য লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের নিন্দা করেছে জাতিসংঘ। গত সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, লিবিয়ার ২৭টি কারাগার ও আটককেন্দ্রে ১২ হাজার এরও বেশি মানুষকে বন্দি রাখা হয়েছে এবং আরো হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের মাধ্যমে অভিবাসন রোধ করতে ইউরোপীয় দেশগুলি, বিশেষ করে ইতালি স্থানীয় উপকূলরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও সজ্জিত করার জন্য লিবিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আইওএম এর তথ্য মতে, গত বছর সমুদ্র বা স্থলপথে ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসনের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ছিল, অন্তত ৪ হাজার ৪০০ জন মারা গেছে এসময়।
এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পাওে, কারণ অভিবাসন প্রত্যাশীসহ এমন অনেক নৌকা সাগরে ডুবে গেছে, যেগুলোর কোনো হদিসই পাওয়া যায়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি গত বছর এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল যে, মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুটটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসন রুটগুলির মধ্যে অন্যতম।
সূত্র: ইউরো নিউজ