অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শ্রম অভিবাসন: একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

0
1294

বিগত এক দশকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অন্য সময়ের তুলনায় বেশ কিছু অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে। এই এক দশকে একদিকে যেমন বাংলাদেশী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও রিজার্ভ। করোনা মহামারির সময়েও বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমেনি, বরং ২% সরকারি প্রণোদনার কারণে বৈধ চ্যানেলে তার প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শ্রম অভিবাসনকে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও দক্ষ করতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বিগত দুইটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে বেশ কিছু অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে, যেমন: জনশক্তি ছাড়পত্র সেবা বিকেন্দ্রীকরণ, জেলা পর্যায়ে প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ প্রদান, কল্যাণ সেবা প্রাপ্তি সহজিকরণ, অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ও নিস্পত্তি ডিজিটালাইজ করণ ইত্যাদি।


এছাড়া, সরকার অভিবাসীদের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য এক বিশেষ ব্যাংক ‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করেছে। জাতিসংঘের ১৯৯০ সালের ‘অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষা সনদ’ এর অনুস্বাক্ষরকারী, ‘অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তি’ এর অন্যতম প্রস্তাবক এবং অভিবাসী শ্রমিক প্রেরণকারী দেশ হিসেবে যদিও বাংলাদেশের আরও অনেক সাফল্য অর্জন করা প্রয়োজন ছিল- যা কোভিড মহামারিও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে সম্ভব হয়নি।

বর্তমান সরকার তাদের পূর্ব প্রস্তাাবিত বহুমাত্রিক ‘উন্নয়ন রূপকল্প ২০৪১’ এবং ‘জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০’ এর সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাসহ সর্বত্র সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে যা ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত। উক্ত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বিচারিক ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন খাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে অগ্রগতি বিশ্লেষণ ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পরবর্তী পাঁচ বছর সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কাজ করে থাকে । মন্ত্রণালয় ভিত্তিকও নানান ধরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা করে থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) বাস্তবায়ন করছে, যা প্রণয়ন করা হয়েছে করোনা মহামারির প্রথম ধাপ চলাকালীন ডিসেম্বর ২০২০ সালে। তাই এই পরিকল্পনায় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে করোনা মহামারির প্রকোপ সামাল দিয়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়টি। উক্ত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ রয়েছে-যা আজকের আলোচনার মূল আলোচ্য বিষয়।

শ্রম অভিবাসন থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন ছাড়াও দক্ষতা অর্জন, উচ্চ মজুরির চাকুরি, অধিক রেমিট্যান্স প্রেরণ, প্রত্যাবর্তিত কর্মীর অভিজ্ঞতা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো ও বিদেশী কর্মীর উপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং রেমিট্যান্সের সর্বোত্তম বিনিয়োগ নিশ্চিত করে দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি ‘টেকসই অবস্থানগত পরিবর্তন’।

যদিও আমরা বিগত বছরগুলোতে অভিবাসীদের ডিজিটাল নিবন্ধনে, ফিঙ্গার ইম্প্রেশন ও স্মার্ট কার্ড বিতরণের সেবা বিকেন্দ্রীকরণে, বিদেশগামী কর্মীদের বীমা আবশ্যিককরণে, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজ করণে অগ্রগতি অর্জন করেছি। কিন্তু প্রত্যাবর্তিত অভিবাসী কর্মীদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অভিজ্ঞ বিদেশ ফেরত কর্মীদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর বা দেশে কর্মসংস্থান নিশ্চিতে আমার এখনো অনেক পিছিয়ে আছি।


আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ড অনুসারে ও অভিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য এখনো আমরা নৈতিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারিনি, যার ফলে অনেক শ্রমিকরাই শোষণ-বঞ্চনার শিকার হন। অন্যদিকে, আমাদের দেশ থেকে শ্রম অভিবাসন এখনো পার্শ্ববর্তী শ্রমিক প্রেরণকারী দেশগুলোর চেয়ে ব্যয়বহুল। দক্ষ শ্রমিক তৈরি ও প্রেরণেও আমরা পিছিয়ে আছি তাদের তুলনায় অনেকাংশে। উক্ত প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে বাংলাদেশকে জনশক্তি গ্রহণকারী দেশসমূহের কাছে আকর্ষণীয় করতে, এবং বৈশ্বিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুসারে দক্ষ শ্রমিক তৈরী করার জন্য সদ্য প্রণীত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ: ১০টি এজেন্ডা


নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বর্তমান দশককে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংক্রান্ত পররাষ্ট্র নীতি দশক’ ঘোষণা করার অভিলাষ প্রকাশ করেছে এই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্থিতিশীল রাখতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১০টি এজেন্ডা চিহ্নিত করেছে। নিচে সংক্ষেপে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাাবিত ১০টি এজেন্ডা বা মুখ্য বিষয়গুলো তুলে ধরা হল:

১. প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনী কাঠামোগত সংস্কার ও সক্ষমতা বৃদ্ধি:
অভিবাসনের প্রতিটি ধাপে অর্থাৎ প্রাক-অভিবাসন, অভিবাসনকালীন, অভিবাসন পরবর্তী ও প্রত্যাবর্তনকালীন সর্বোত্তম সেবা প্রদানে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রথমে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনী কাঠামোগত সংস্কার। যদিও অন্যান্য ধাপে সেবা কম বেশি রয়েছে-কিন্তু বিদেশ ফেরত অর্থাৎ প্রত্যাবর্তন পরবর্তী শ্রমিকদের জন্য সেবার পরিধি খুবই কম বা নাই বললেই চলে।
তাই আগামী বছরগুলোতে ‘বিদেশ ফেরত কর্মীদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণ নীতি’ প্রণয়নের পরিকল্পনা নেয়ার কথা বলা হয়েছে উক্ত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে। এছাড়া ‘বিএমইটি’ কে একটি পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তরে রূপান্তর করা, শ্রম অভিবাসন গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, বিএমইটির অভ্যন্তরে শ্রম বাজার গবেষণা ইউনিট স্থাপন, অর্থ, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন দেশের টেকসই বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল প্রণয়ন করা। এছাড়াও অভিবাসন ব্যয় হ্রাস করা, প্রতি উপজেলা হতে ১০০০ কর্মী বিদেশে প্রেরণ, প্রতি উপজেলাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, এবং প্রতিটি জেলাতে জেলা কর্মসংস্থান অফিস স্থাপন ইত্যাদির পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।

২. শ্রম বাজার সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন:
বর্তমানে ২০টি দেশে আমাদের শ্রমিক বেশি যাচ্ছেন। অন্যদিকে, প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি শ্রমিক আমাদের শ্রম বাজারে যুক্ত হচ্ছে, যেখানে সকলের কর্মসংস্থান দেশে করা সম্ভব হয় না। তাই শ্রম বাজারে প্রবেশ করা নতুন কর্মী ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য আরও নতুন ২০টি দেশে শ্রম অভিবাসনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রেরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতি বছর ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় একটি ‘শ্রম অভিবাসন ও শ্রম বাজার সম্প্রসারণ রোডম্যাপ’ তৈরির পরিকল্পনাও করেছে।

৩. দক্ষতা উন্নয়ন:
বর্তমান পরিকল্পনাতে প্রতিটি উপজেলাতে একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য দক্ষ কর্মী তৈরী, প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদান নিশ্চিত করবে সরকার। এছাড়া ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ২০১১’ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মন্ত্রণালয় ‘দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা’ ইতোমধ্যে তৈরি করা শুরু করেছে। এটির সঠিক ও কার্যকর বাস্তবায়ন স্বল্প ও অদক্ষ কর্মীদের দক্ষ কর্মীতে রূপান্তর করতে সাহায্য করবে।

৪. সেবা প্রাপ্তি:
অভিবাসনে ইচ্ছুক কর্মীদের অভিবাসন সম্পর্কিত সঠিক তথ্য সরবরাহ করার জন্য সরকার ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে – যার দ্বারা সরাসরি ও ডিজিটাল মাধ্যমে পরিষেবা পাওয়া যাবে। এছাড়া অভিবাসন সম্পর্কিত অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ও নিস্পত্তি কার্যক্রমের উন্নতি করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে এই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রশিক্ষণ ও সনদ গ্রহণের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ভিত্তিক কার্যক্রম অধিক পরিচালনার কথা ও উল্লেখ রয়েছে এই পরিকল্পনাতে।

৫. আর্থিক সেবা প্রাপ্তির অভিগম্যতা:
প্রবাসী কর্মী ও প্রবাসী পরিবারের রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়মিত করতে মন্ত্রণালয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সেবার মান উন্নয়ন, বৃদ্ধি ও উপজেলা পর্যায়ে সেবা নিশ্চিতে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া অভিবাসী ও তাদের পরিবারের জন্য বীমার স্থায়িত্ব ও মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রেরিত রেমিট্যান্স বাধ্যতামূলকভাবে অভিবাসীদের নিজস্ব একাউন্টে জমাকরণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে।

৬. সুরক্ষা, অধিকার ও কল্যাণ:
অভিবাসী কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে নৈতিক ও শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিতকল্পে মন্ত্রণালয় রিক্রুটিং এজেন্টদের অধিক জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কাজ করবে আগামী পাঁচ বছর। এর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সঠিক মজুরি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার কাজ করবে গন্তব্য দেশের সরকার ও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ যেমন: উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আয়োজন, দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ও দক্ষতা ভিত্তিক সনদ প্রদান নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ রয়েছে এই পরিকল্পনাতে।

৭. ডিজিটাইজেশন:
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, কর্মসংস্থান ব্যুরো, কল্যাণ বোর্ড, কারিগরি প্রক্ষিক্ষন কেন্দ্র, জেলা জনশক্তি অফিস ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ইত্যাদির সেবার মান ও কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। মূলত: ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা নিশ্চিতকরণ ও কারিগরি শিক্ষা অনলাইন ভিত্তিক করার জন্য ই-লার্নিং প্লাটফর্ম তৈরির চিন্তাও করা হয়েছে। অন্যদিকে, একটি ‘কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম’ তৈরির পরিকল্পনা ইতোমধ্যে করা হয়েছে যার মাধ্যমে সকল কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও বিএমইটির ডাটাবেজ হতে প্রশিক্ষণার্থীদের তথ্য একত্রে পাওয়া যাবে ও তার মাধ্যমে নির্বাচন করে দক্ষ কর্মী বিদেশ প্রেরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

৮. বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টতা:
অভিবাসনের ব্যয় সহনীয় করার জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস ও তাদের জবাবদিহিতার ভেতরে আনার জন্য বায়রার সাথে যৌথভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপরে এই কর্ম পরিকল্পনাতে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে যৌথভাবে সেবা, সুরক্ষা, নিরাপদ অভিবাসন ও আর্থিক শিক্ষা ইত্যাদি কার্যক্রম ও বাস্তবায়ন করা হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।

৯. অভিবাসন ব্যয়:
স্বল্প খরচে শ্রম অভিবাসন নিশ্চিতকল্পে বোয়েসেল এর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও গ্রহণকারী দেশের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে অভিবাসন ব্যয় হ্রাসের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া এই পরিকল্পনার অন্যতম প্রস্তাবিত কার্যক্রম।

১০. পুনরেকত্রীকরণ:
পরিকল্পনাতে বলা আছে, মন্ত্রণালয় বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীদের সফল পুনরেকত্রীকরনের জন্য ‘টেকসই পুনরেকত্রীকরণ নীতি’ গ্রহণ করবে ও তদানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পরিকল্পনাতে আরো বলা আছে, বিদেশ ফেরত কর্মীদের কল্যাণ সুবিধা নিশ্চিত করণের জন্য মন্ত্রণালয় ‘কল্যাণ বোর্ড আইনের বিধিমালা’ প্রণয়ন করবে। নিজ দেশে কর্মসংস্থানের ও বিনিয়োগের সুযোগ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিত্তিক ‘রেফারাল মেকানিজম’ তৈরি করা এবং ডেমো ও টিটিসি গুলোকে রি-ইন্টিগ্রেশন বা পুনরেকত্রীকরণ সেবা প্রদানের জন্য সক্ষমতা অর্জনে কাজ করা এই পরিকল্পনার অন্যতম বিবেচ্য কার্যক্রম।

যদিও শ্রম অভিবাসন নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও নিয়মিতকরণের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে বেশ কিছু যুগোপযোগী কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত সদিচ্ছা, সঠিক কর্মকৌশল নির্ধারণ, বাস্তবায়নের দক্ষতা ও অর্থ বরাদ্দ না থাকলে তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। শ্রম অভিবাসনকে লাভজনক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগকে বেগবান করলে আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হব। নতুবা তা সব কাগজে কলমেই রয়ে যাবে।

লেখক: অভিবাসন বিশ্লেষক ও উন্নয়ন কর্মী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here