শনিবার, 27 জুলাই, 2024

কারিতাসের আয়োজনে বিদেশফেরত অভিবাসীদের পুনরেকত্রীকরণ নিয়ে প্রকল্প সূচনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত

খুলনা জেলার চারটি উপজেলায় এক হাজার ৩৩৬ জন বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিকের ইতিবাচক ও টেকসই পুনরেকত্রীকরণের লক্ষ্যে ‘রিইন্টিগ্রেশন অব রিটার্নি মাইগ্রেন্ট ওয়াকার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কারিতাস, খুলনা। প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় ও পারস্পরিক সমাঝোতার ভিত্তিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস যৌথভাবে কাজ করছে।

এ সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করতে, প্রকল্পের বিস্তারিত অবগত করতে এবং উদিষ্ট উপকারভোগীরা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে নানাবিধ সেবা গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, সেসব বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো প্রকল্প সূচনা কর্মশালা। গতকাল বেলা ১১ টায় খুলনার কারিতাস ট্রেইনিং সেন্টারে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কাজী বরকতউল ইসলাম, অধ্যক্ষ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা। কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস, খুলনার সহকারী পরিচালক প্রবীর দত্ত, শ্রম কল্যাণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক অসীম কুমার বিশ্বাস, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: মোস্তাক উদ্দীন, সমাজসেবা কার্যালয়, খুলনার ইন্সট্র্যাক্টর এই এইচ জিয়াউর রহমান প্রমূখ।

আরো পড়ুন: বিদেশফেরত নারীদের স্বপ্ন বুনবে এসডিসি’র নতুন প্রকল্প

এছাড়া দুইজন বিদেশফেরত অভিবাসী নারী শ্রমিক এ কর্মশালায় অংশ নেন। কর্মশালায় চলমান প্রকল্পের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন শ্যামলী রায়, পিও, কারিতাস।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘এসডিসি’র অর্থায়নে কারিতাস যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, সেখানে বিদেশফেরত নারী-পুরুষদের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যে মানুষ যত বেশি হাতের কাজে দক্ষ হয়ে উঠবে, তার তত বেশি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে এই প্রকল্প উদ্যোক্তা তৈরীতে ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এক্ষেত্রে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে আমরা তা প্রদানে বদ্ধপরিকর।’

এসময় তিনি টিটিসি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সবাইকে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিদেশফেরত অভিবাসীদের উন্নয়নে ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে নিঃস্বার্থভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

কর্মশালায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনার অধ্যক্ষ কাজী বরকতউল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা জেলার ১৩৩৬ জন বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এক অর্থে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সরকারই লাভবান হবে। এজন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কারিতাস, খুলনাকে ধন্যবাদ। একইসঙ্গে আমরা যদি সরকার প্রদত্ত অন্যান্য সেবাসমূহ এই অভিবাসীদের প্রদান করতে সক্ষম হই, তাহলে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নে তারা ভালো অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে, টিটিসি, খুলনা থেকে তাদের আবাসিক প্রশিক্ষণের যাবতীয় উদ্যোগ আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে বিনামূল্যে এ সেবা প্রদান করবো আমরা।’

এসময় বক্তাদের প্রায় প্রত্যেকেই উপকারভোগীদের মধ্যে যারা বেকার, রোজগার নেই, তাদেরকে প্রশিক্ষণকালীন দৈনিক ভাতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য, বিদেশফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের অনেকেই কষ্টে জীবনযাপন করছে। দিন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা তাদের। এরকম পরিস্থিতিতে যদি তাদের বিনা পারিশ্রমিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তাহলে তারা নিয়মিত তা চালিয়ে যেতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। ফলে তাদের জন্য দৈনিক কিছু ভাতার ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক।

আরো পড়ুন: ‘একজন অভিবাসী নারীও নিপীড়িত হবে না, এটি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে’

কর্মশালায় ‘রিইন্টিগ্রেশন অব রিটার্নি মাইগ্রেন্ট ওয়াকার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কার্যক্রম নিয়ে আরো বলা হয়:
 প্রকল্পটি ফুলতলা উপজেলা, রূপসা উপজেলা,দিঘলিয়া উপজেলা ও খুলনা শহরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
 উপকারভোগীর সংখ্যা ১৩৩৬ জন, যেখানে ৮০% নারী ।

উল্লেখ্য, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি) এর অর্থায়নে ব্র্যাক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর যৌথ অংশীদারিত্বে কারিতাস, খুলনাসহ দেশের মোট ছয়টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দেশের আটটি জেলায় ‘রিইন্টিগ্রেশন অব রিটার্নি মাইগ্রেন্ট ওয়াকার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটির প্রত্যাশিত প্রভাব হলো ১৩৩৬ প্রত্যাবর্তনকারী নারী অভিবাসীকে টেকসইভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজে পুনঃসংহত করা। একইসঙ্গে প্রকল্পের প্রচেষ্টার ফলে প্রত্যাবর্তনকারী অভিবাসী কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণের সহায়ক নীতি কাঠামো তৈরি করা।

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা