শনিবার, 27 জুলাই, 2024

‘পরিবেশের ক্ষতি করবো না’-প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এ দৃপ্ত শপথই হোক প্রেরণা

তীব্র গরমে বিধ্বস্ত চারদিক। ধুঁকছে প্রাণিকূল। রুক্ষ-বিষাদে জর্জরিত প্রকৃতি। ঠিক এমন দগ্ধ আবহের মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসে, সমবেত কণ্ঠে আওড়ানো শত শত স্কুল শিক্ষার্থীর এক দৃপ্ত শপথবাক্য। কৌতুহলী হয়ে সামনে এগোতে দেখা গেল, বুকের সামনে মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত তুলে এ শিক্ষার্থীরা সমস্বরে বলছে, ‘আজ আমরা যা শিখলাম, তা মান্য করবো। আমরা পরিবেশের ক্ষতি হতে দেবো না। নিজেরাও পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবো না। আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনবো এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করবো।’

ভবিষ্যত পৃথিবীর দায়িত্ব যারা কাঁধে তুলে নিবে, পৃথিবীটাকে যারা সুন্দর করে তুলবে-সেইসব নতুন কিশোর-কিশোরীদের হৃদয়-নিঃসৃত এ শব্দমালার ঝলকে পুরো পরিবেশটা মুহূর্তেই যেন বদলে গেলো; উপস্থিত বাকি সবার প্রাণে সঞ্চারিত করলো এক আশা জাগানিয়া সুর-কলতান। এমন মুহূর্ত প্রত্যক্ষ করতে পারার সুযোগ যাদের ঘটেছে, তাদের প্রত্যেকের ভেতরই তখন যেন কবি মহাদেব সাহার ‘পৃথিবী, তোমাকে আমি ভালোবাসি’ কবিতাটির পংক্তিরা ভর করে চলেছিলো; বলে উঠেছিলো: ‘পৃথিবী তোমাকে আমি ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি/একদিন তোমার মুখে ঠিকই আমি হাসি-আনন্দ ফোটাবো’।

বলা হচ্ছে, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল খুলনার দাকোপ উপজেলাসংলগ্ন সুন্দরবনঘেষা গ্রাম কৈলাশগঞ্জের বুড়িরডাবুর এসইএসডিপি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের কথা। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে ইউএসএআইডি ইকো ট্যুরিজম অ্যাক্টিভিটি। সকাল ১০টায় স্কুলের সুন্দরবন অধ্যয়ন কেন্দ্রে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সুন্দরবনকেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বন বিভাগ থেকে আগত অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এরপর সবার অংশগ্রহণে  র‌্যালি, বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং সঠিক উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে চারজনকে পুরস্কার দেয়া হয়।

‘প্লাস্টিক দূষণে সমাধান-সামিল হই সকলে’ প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ইউএসএআইডি ইকো ট্যুরিজম অ্যাক্টিভিটি’র ডেপুটি চিফ অফ পার্টি ড. মো: ওয়াসিউল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুড়িরডাবুর এসইএসডিপি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকল্যাণ রায়, শর্মিলা ইকো কটেজের স্বত্বাধিকারী শর্মিলা সরকার, অভিবাসী ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক রুবেল পারভেজ, চাঁদপাই রেঞ্জের কো-ম্যানেজমেন্ট এক্সিকিউটিভ ফোরাম প্রতিনিধি, ওয়াইল্ড টিম, ভিটিআরটি, বন বিভাগ (চাঁদপাই রেঞ্জ), স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও বুড়িরডাবুর এসইএসডিপি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিবর্তন-খুলনার নির্বাহী পরিচালক, রূপান্তর ইকো-ট্যুরিজম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড।

পবিত্র কোরআন তিলওয়াত ও পবিত্র গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভার শুরু হয়। কোরআন তিলওয়াত করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল খাতুন এবং পবিত্র গীতা পাঠ করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাখি সরকার।

অনুষ্ঠানে বুড়িরডাবুর এসইএসডিপি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকল্যাণ রায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজ এ আয়োজনে আমাদের শরিক হওয়ার মূল কারণ হলো, পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসার মাধ্যমে কীভাবে এ গ্রামের উন্নয়ন সাধন করা যায়, তা বোঝার চেষ্টা করা। আমরা সবাই জ্ঞাত যে, সুন্দরবনকে ঘিরে একটি পর্যটনকেন্দ্রিক অঞ্চল তৈরি হবে। পর্যটকরা এখানে আসবে, এ কথা সত্য। আমরা যারা এখানে বসবাস করি, তারা পর্যটকদের এখানে আসা বন্ধ করতে পারবো না। বরং তাদের আসাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবো। কিন্তু সবার আগে প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো এ পর্যটন শিল্পকে পরিবেশ, গ্রাম ও সমাজ বান্ধব করতে হবে। আমরা চাই আগামী দিনগুলোতে এই পর্যটন শিল্প সঠিক নিয়মে চলুক।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই, এই সুন্দরবনকে ঘিরে যেসব গ্রাম রয়েছে, যাদের জমি রয়েছে, তারা পর্যটন ব্যবসার প্রধান অংশীদার হোক। বড় বড় ব্যবসায়ী, কোটিপতিরা এখানে এসে ব্যবসা করে সুন্দরবনকে ধ্বংস করুক, এটি আমাদের কাম্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা এই গ্রামের সাধারণ মানুষ এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।’

আলোচনা সভায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেমন পরিবেশ তারা দেখতে চায়? এ বিষয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন পল্লব নামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কোল ঘেসে আছে সুন্দরবন। এ বন থেকে আমরা কোনো না কোনোভাবে জীবিকা নির্বাহ করি। এর ফলে আমাদের আয় উন্নতি হয়। আমরা বন্যপ্রাণিদের ভালোবাসি, আমরা তাদেরকে শিকার করি না। আমরা বেশি করে গাছ লাগাবো এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখবো।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো: ওয়াসিউল ইসলাম শুরুতে এই অনুষ্ঠান আয়োজনকে সফল করে তোলার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পিংকি বাওয়ালি নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, এই পরিবেশ আমাদেরকে কীভাবে সুরক্ষা দেয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে। তাই আমাদের উচিৎ বেশি করে গাছ লাগিয়ে এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে সুন্দরবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। এসময় টাইগার স্কাউট নামের সংগঠন থেকে বক্তব্য রাখেন রাখি সরকার।

জনাব ওয়াসিউল ইসলাম তার বক্তব্যের শুরুটা করেন এভাবে, ‘আজকের অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ তোমরাই (শিক্ষার্থীরা)। একারণেই তোমাদেরকে দিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের পরিবেশকে মন দিয়ে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতাম, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতাম, তাহলে আমাদের পরিবেশের অবস্থা আজ এরকম হতো না। আমরা যারা শিক্ষিত তাদের মধ্যেও এখনো এই পরিবেশ নিয়ে উদাসীনতা রয়েছে। প্রাইমারি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান, সেখানে পরিবেশ শিক্ষা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রচণ্ড অভাব ও অপর্যাপ্ততা রয়েছে। এই অভাবটাকে কিছুটা হলেও গোছানোর উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছে আসা এবং আজকের এই দিবস কি, এর গুরত্ব কী এসব নিয়েই কিছু কথাবার্তা বলা।’

তিনি তার বক্তব্যে জানান ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। আজ (গতকাল) আমরা এর ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। একারণেও এবছরের দিবসটি ঐতিহাসিক। তিনি সবার কাছে আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য, আমরা এমন কিছু করবো না, যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যত বিষয় আছে, সেটা প্লাস্টিক দূষণ থেকে শুরু করে আলো দূষণ পর্যন্ত, যা যা আছে সবকিছু ধীরে ধীরে পরিত্যাগের মাধ্যমে পরিবেশকে সংরক্ষণ করবো।

ওয়াসিউল ইসলাম গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, আমরা যত ধরনের খাবার খাই, তার বেশিরভাগই প্লাস্টিকের মোড়কে আবদ্ধ থাকে। আশংকার কথা, এখন যে মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে, তা চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রের তলদেশে জলপ্রাণির চেয়ে বেশি থাকবে এই প্লাস্টিক!

প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে তিনি জানান, প্লাস্টিক একটি অপচনশীল বস্তু। কিছু প্লাস্টিক রয়েছে যেগুলো কখনোই মাটির সঙ্গে মিশে যাবে না। এগুলো ভেঙে অতি ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয় এবং এই প্ল্যাস্টিক মাছের শরীরে ও বাতাসে মিশে যায়। একপর্যায়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে অনেক ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে এটি ফসল উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার তাই বিকল্প নেই।

সুন্দরবন সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ভিটিআরটি। আলোচনা সভায় ভিটিআরটির প্রতিনিধি হিসেবে অনন্ত বিশ্বাস বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘সর্বস্তরের মানুষ যদি সচেতন না হয়, তাহলে সরকারের একক পদক্ষেপে পরিবেশের সুরক্ষা সম্ভব নয়। স্ব-স্ব অবস্থান থেকে তাই সবাইকে পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। এটি নিশ্চিত করলে আমাদের আগামীর প্রজন্ম একটি সুন্দর পৃথিবীর দেখা পাবে।’ এসময় তিনি দিবস উদযাপন ছাড়াও মাঝেমধ্যে এরকম আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় শর্মিলা ইকো কটেজের স্বত্তাধিকারী শর্মিলা সরকার বলেন, ‘আমরা যদি প্লাস্টিক বর্জন না করি, তাহলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবো না। আমাদের দিবসটি পালনের প্রাণবিন্দু তোমরা শিক্ষার্থীরা। আজকের দিবস পালনের মাধ্যমে যদি দুইজন শিক্ষার্থীরও মানসিক পরিবর্তন ঘটে, সেটাই আমাদের অর্জন বলে ধরে নিবো।’

সভায় অভিবাসী ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক রুবেল পারভেজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা যারা তোমাদের চেয়ে বয়সে বড়, তারা তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এই কারণে যে, আমরা তোমাদেরকে একটি দূষণমুক্ত পরিবেশ দিতে পারিনি। আমরা তোমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী এই কারণে যে, তোমাদের জন্য প্লাস্টিকমুক্ত একটি পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরী করতে পারিনি। আমরা তোমাদের কাছে আরো একটি কারণে ক্ষমা প্রার্থী যে, আমরা তোমাদেরকে শেখাতে পারিনি, কেনো প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করা যাবে না। পরিস্থিতিগত কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার করে ফেললেও তা কোথায় ফেলতে হবে, তাও শেখাতে পারিনি। এই দায়মোচনের জায়গা থেকেই আজ মূলত তোমাদের কাছে আমাদের আসা। কারণ আমাদের মতো তোমরা যেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী না হও।’

এখন থেকেই তোমরা যদি সচেতন হও, তোমরা যদি আমাদের এই ক্ষমাপ্রার্থনার জায়গা থেকে শিক্ষা নাও, তাহলে তোমাদেরকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে না। তাই তোমাদের কাছে আহ্বান, আজ থেকে প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করবে না এবং তোমাদের পরিবার, পরিজন ও স্কুল শিক্ষকদেরকে প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কী কী পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে বলা’-যুক্ত করেন এ গণমাধ্যমকর্মী

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পরিবর্তন-খুলনার নির্বাহী পরিচালক, রূপান্তর ইকো-ট্যুরিজম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড তার বক্তব্যে বলেন, ‘কথা দিয়ে নয়, আমাদের সবাইকে কাজ দিয়ে বড় হতে হবে। পরিবেশ দিবস নিয়ে আমরা নানান কথা বলি, অনুভূতি ব্যক্ত করি, কিন্তু দিনশেষে আমরাই যদি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কাজটি করি, তাহলে আমাদের কথার কোনো মূল্য থাকলো না। এই উদাহরণ এখন সমাজে খুব বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। কথা ও কর্মের মধ্যে মিল না থাকার কারণেই পৃথিবীর আজ এই দুর্বিসহ অবস্থা।’

উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জনাব নাজমুল আজম ডেভিড আরো বলেন, ‘কৈলাশগঞ্জ গ্রামের মানুষেরা সুন্দরবনের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা। এই বন তাদের জীবিকারও প্রধান উৎস। অথচ এই গ্রামেরই অনেক মানুষ আছে, যারা কিনা বনটির ক্ষতি করছে।’ এসময় তিনি বলেন, ‘বাইরের কেউ এসে এ গ্রামকে দূষণ মুক্ত করবে না, যদি না এই এলাকার মানুষজন দূষণমুক্তকরণের কাজে নিয়োজিত না হয়।’

আলোচনার প্রসঙ্গক্রমে তিনি এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রিয় সরকার ও স্থানীয় সরকারকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রিয় সরকার ও স্থানীয় সরকার-এই দুই সরকার বাংলাদেশকে পরিচালনা করে। কেন্দ্রিয় সরকারে থাকে সংসদ সদস্যরা। যাদের কাজ আইন প্রণয়ন করা, তাদের কাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা জাতীয় সংসদ ভবন। আমরা তাদেরকে ভোট দিয়ে একারণেই সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করি। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার স্ব স্ব এলাকায় কাজ করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হবে, সেসব সমস্যা দূর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা উল্টো। কেন্দ্রিয় সরকার স্থানীয় সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করছে। সবকিছুই ঢাকা তথা কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় সরকার ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। মূলত স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব হলো সামাজিক পরিবেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এজন্য এ সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে।’

এসময় জনাব নাজমুল আজম ডেভিড স্থানীয় গ্রামবাসীকে সতর্ক করে বলেন,‘ স্থানীয় পরিবেশের মানোন্নয়ন ও দূষণরোধে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সুন্দরবনকেন্দ্রিক কমিউনিটিবেইজড ইকো ট্যুরিজম ব্যবসার প্রসারে আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের অধিকার নিজেদেরই আদায় করতে হবে। তা না হলে আপনারা মালিক থেকে চাকর-কামলায় পরিণত হবেন আর অন্যরা ব্যবসা করে চলে যাবে। সুতরাং নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ভাগ্যবদলে আপনাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের বিকল্প নেই।’

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা