বৃহস্পতিবার, 21 নভেম্বর, 2024

বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়দাতা একটি চক্র আটক

বাংলাদেশ থেকে অনিয়মিত উপায়ে যাওয়া অভিবাসীদের আধার কার্ড এবং অন্যান্য নাগরিকত্ব-সম্পর্কিত নথি পেতে সহায়তা প্রদানকারী একটি চক্রকে আটক করেছে ভারত। বেঙ্গালুরুর স্থানীয় পুলিশের উদ্ধুতি দিয়ে গতকাল সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, আটককৃত নয় সদস্যের এ চক্রের মধ্যে রয়েছেন একজন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ফার্মাসিস্ট।

বলা হচ্ছে, চক্রটি মাত্র এক বছরে চার কোটি রুপি টাকায় রূপান্তর করে তা বাংলাদেশে স্থানান্তর করেছে। পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল মদনায়কানাহাল্লি থানার সীমানার অধীনে চিক্কাগোল্লারহাট্টি গ্রামের একটি এটিএম বুথ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা লুট করা করেছে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে আসা শেখ ইসমাইল কিতাব আলী নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে কিতাব আলী জানিয়েছেন, ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে অনিয়মিত উপায়ে ভারতে এসেছেন তিনি। তাকে সাহায্য করেছে সৈয়দ আকুন ওরফে শহিদ আহমেদ নামের একজন; যিনি শহরে স্ক্র্যাপ ও প্লাস্টিক বর্জ্য কোম্পানির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

আকুন এজেন্টদের মাধ্যমে ভারতীয় রুপিকে তার অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশি মুদ্রায় রূপান্তর করতেন এবং এই টাকা নিজ দেশে স্থানান্তর করতেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, পুলিশ তার ছেলে সুমন ইসলামকে মদনায়কানাহাল্লি থানার সীমানার অন্তর্গত হোট্টাপানাপল্যা থেকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন, তারা বিবিএমপি লেটার-হেড, সিল এবং বিবিএমপি স্বাস্থ্য অধিকারিকদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আধার কার্ডের নথিপত্র বানাতেন। এরপর তারা বেঙ্গালুরু ওয়ান সেন্টারে নথি জমা দিতেন এবং আধার কার্ড পেতেন।

আরো পড়ুন:

তিন বছরে বিএসএফ এর হাতে আটক ১৪ হাজার বাংলাদেশী

তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে ঢাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবদুল আলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এভাবেই বিবিএমপি লেটার-হেড এবং সিল ব্যবহার করে অবৈধভাবে আসা অভিবাসীদের আধার কার্ড পেতে সাহায্য করতেন।

এ কাজের জন্য আলিম প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার ভারতীয় রুপি নিতেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে, পুলিশ সুহেল আহমেদ, মোহাম্মদ হিদায়াত, আয়েশা, মোহাম্মদ আমিন সাইত, রাকেশ, সৈয়দ মনসুর এবং ইশতিয়াক পাশা ওরফে মেডিকেল পাশাকে গ্রেপ্তার করেছে; যারা দেবরা জীবনহাল্লি থানা সীমানার বাসিন্দা।

পুলিশ জানিয়েছে, রাকেশ একজন সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার- যিনি কিনা করোনার পর বেকার হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি গেজেটেড পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ভুয়া চিঠি পাঠাতেন। ইশতিয়াক একটি বিবিএমপি হাসপাতালে অস্থায়ী কর্মচারী হিসাবে কাজ করছিলেন। পুলিশের বক্তব্য মতে, তিনি আধার কার্ড পাওয়ার জন্য অনেক করোনার জাল নেগেটিভ রিপোর্ট, জাল টিকা রিপোর্ট এবং গেজেটেড পদমর্যাদার অফিসারদের জাল সিল তৈরি করার কথা স্বীকার করেছেন।

পুলিশ আরো জানায়, অভিযানের সময় অভিযুক্তদের কাছ থেকে তারা বিবিএমপি হাসপাতালে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পাঁচটি সিল, জাল সিল তৈরির জন্য ২৬টি জাল লেটার-হেড, ১৬টি মোবাইল ফোন, তিনটি সিপিইউ, দুটি ল্যাপটপ, দুটি প্রিন্টার, ৩১টি আধার কার্ড, ১৩টি প্যান কার্ড, ২৮টি ভোটার আইডি উদ্ধার করে তা বাজেয়াপ্ত করেছে।

আরো পড়ুন:

ভারত কী আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে লুকোচুরি খেলছে?

অভিযানে এছাড়াও চারটি ই-শ্রম কার্ড, পাঁচটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, তিনটি আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য কার্ড, দুটি এটিএম কার্ড, তিনটি ভোটার আইডি আবেদন ফর্ম-৬, অভিযুক্তদের কাছ থেকে বিবিএমপি মেডিকেল অফিসারদের সিলসহ আধার তালিকাভুক্তি/আপডেট ফর্মের জন্য ৯২টি প্রশংসাপত্র পেয়েছে তারা। বর্তমানে পলাতকদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, চক্রটির প্রধানের তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে টাকা কলকাতা, চেন্নাই এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যারা ব্যবসা করেন, তাদের সহায়তায় ভারতীয় মুদ্রা বাংলাদেশি মুদ্রায় রূপান্তরিত করে তা বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ভারতেও কেন বাংলাদেশী অভিবাসীদের গন্তব্য?

‘এটা প্রকাশ্যে এসেছে যে, এক বছরে তিনি বাংলাদেশী মুদ্রায় চার কোটি টাকা রূপান্তর করে নিজের দেশে স্থানান্তর করেছেন। ভারত জুড়ে কমপক্ষে ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা এবং সেগুলি তদন্ত করার প্রয়োজন রয়েছে’-বলে এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়।

কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগা জ্ঞানেন্দ্র অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার নেটওয়ার্কটি ভাঙার জন্য বেঙ্গালুরু গ্রামীণ পুলিশের প্রশংসা করেছেন। তাদের এ ধরনের ক্রিয়াকলাপের উপর কঠোর নজরদারির উপর জোর দিয়ে জ্ঞানেন্দ্র বলেন, ‘আমাদের সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাজ্যের প্রতিটি থানায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা