বৃহস্পতিবার, 21 নভেম্বর, 2024

গ্রিসে অভিবাসীদের সুরক্ষায় কাজ করলেও ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে!

গ্রিসে মানবাধিকার কর্মীদের ‘অপরাধী’ হিসেবে গণ্য করার প্রবণতা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে। বিশেষ করে যারা অভিবাসী এবং শরণার্থীদের রক্ষা করছে, তাদেরকে সরাসরি ‘অপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসীদেরও অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘(দেশটিতে) অভিবাসীদেরও ফৌজদারি অভিযোগের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক মেরি ললর; গ্রিসে সফরে আসা মানবাধিকার কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা শ্লীলতাহানিমূলক প্রচারণার মুখোমুখি হয় এবং তাদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করা হয়।’ ললর স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সংহতিকে কখনই শাস্তি দেওয়া উচিত নয় এবং সহানুভূতির বিচার করা উচিত নয়।’

‘বর্শার ডগায় রয়েছে প্রসিকিউশন। যেখানে সংহতির কাজগুলিকে অপরাধমূলক কার্যকলাপ হিসাবে পুনঃব্যাখ্যা করা হয়। বিশেষ করে মানব পাচার বিষয়ক অপরাধ।’

জাতিসংঘের এ বিশেষ প্রতিবেদকের মন্তব্য হলো- যখন শরণার্থী অধিকার গোষ্ঠীগুলি জানিয়েছে যে, তারা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিচারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় উদ্বিগ্ন।

‘অপরাধমূলক’ অভিবাসন

সম্প্রতি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি মামলাগুলির মধ্যে এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন; যাকে তীরে নৌকা চালানোর জন্য ১৪৬ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিলো। অন্য একজন তার ছেলের জীবন বিপদে ফেলার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তার সেই ছেলে ২০২০ সালে গ্রিসে সমুদ্র পারাপারের সময় মারা গিয়েছিলো।

গ্রিসে আশ্রয়প্রার্থীর সর্বশেষ বিচারকে সিটিপি (কমিউনিটি পিসমেকার টিমস) মানবাধিকার সংগঠককের একটি জোট, ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অবিশ্বাস্যভাবে অপমানজনক অপরাধমূলক মামলা’ হিসাবে অ্যাখ্যা দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

অভিবাসীদের ঠেকাতে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি প্রয়োগের অভিযোগ গ্রিসের বিরুদ্ধে

মামলাটি একজন নারীর সঙ্গে সম্পর্কিত; যিনি গ্রিক দ্বীপ লেসবোসের মাভ্রোউনি অভিবাসী শিবিরে নিজের জীবন নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ২৭ বছর বয়সী এই নারী এমএম নামে পরিচিত। ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারিতে তার তাঁবুতে তিনি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে তীব্র অগ্নিসংযোগ এবং সরকারী সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছিলো। গত ২২ জুন লেসবস-ভিত্তিক অভিবাসন বিষয়ক সংবাদকর্মী ফ্রানজিস্কা গ্রিলমেয়ারের বলেন, ‘মাইটিলিনের আদালতে অন্য একজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন বলে তার শুনানি স্থগিত করা হয়েছিল।’

এমএম এর গল্প

স্বামী এবং ছোট ছোট তিন সন্তানের সঙ্গে এমএম পাঁচ মাস ধরে মাভ্রোউনির ক্যাম্পে বসবাস করছিলেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মোরিয়ায় মূল শিবিরটি পুড়ে যাওয়ার পরে দ্বীপে অভিবাসীদের থাকার জন্য এই ক্যাম্পটি তৈরি করা হয়েছিলো।

ওই সময়টিতে তীব্র শীত পড়ছিলো। মাভ্রোউনি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অবস্থা চরম শোচনীয় ছিলো। বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় তাদের তাবু অনেকবার প্লাবিত হয়েছে। পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহে সমস্যা ছিলো এবং স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা ছিলো একেবারেই নাজুক ও দুর্বল। সেখানকার মাটিতে বিপজ্জনক উচ্চ মাত্রার সীসার পাওয়া গেছে। যা আগে সামরিক ফায়ারিং রেঞ্জ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো।

এমএম নিজের শরীরে আগুন দিয়ে নিজের জীবন নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ক্যাম্পের অন্য বাসিন্দারা তাকে তার জ্বলন্ত তাঁবু থেকে উদ্ধার করে এবং জলের বোতল এবং তোয়ালে দিয়ে আগুন নিভিয়ে দেয়। তার সারা শরীরে ক্ষত তৈরি হয়। পরক্ষণেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এই ঘটনার পর তাকে সাহায্য ও মানসিক যত্ন নেওয়ার পরিবর্তে তাকে নাশকতাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো।

বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় এমএম চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেন এবং পরিবারটি জার্মানিতে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হয়। তবে শরণার্থী আইনি সহায়তা সংস্থা এইচআইএএস এর জানিয়েছে, এই মামলায় অভিযোগের দরুন তিনি এবং পরিবার গুরুতরভাবে আঘাত পেয়েছেন। শেষমেষ তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস (ইংরেজি) থেকে ভাষান্তরিত

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা