ইউরোপা


বর্তমান ইউরোপে বিরাট এক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে অনিয়মিত অভিবাসন। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ‘অভিবাসন’ শব্দটি অভিবাসীদের ললাটে শুধু নৃশংস ও মর্মান্তিক বেদনাই যুক্ত করছে। চলচ্চিত্র নির্মাতা হায়দার রশিদ তার নির্মিত ৭২ মিনিটের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইউরোপা’য় এমনই বিষয়বস্তু তুলে ধরেছেন।


ছবিটি চলতি বছর অনুষ্ঠিত কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছে। ইরাকি শরণার্থী কামাল এর শরণার্থী জীবনের গল্পকে অসাধারণ ভঙ্গিমায় তুলে ধরা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। ছবিতে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে যেকোনো উপায়ে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য লড়াই করেন কামাল। যদিও চিরাচরিত ধারায় কামালের ওপর নেমে আসে ভয়াবহতম নৃশংসতা। মূলত কামালের জীবনের গল্প দিয়েই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।


‘ইউরোপা’র পুরো ঘটনা আবর্তিত হয় বলকান রুটকে ঘিরে। চলচ্চিত্রের শুরুতে অপরাধ চক্র ও সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। জীর্ণ পথ ধরে কামাল ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত ও ক্লান্ত শরীর নিয়ে ছুটছেন তো ছুটছেন। এক পর্যায়ে তিনি এমন একটি জায়গার সন্ধান পান, যা কিনা একইসঙ্গে ভয়ঙ্কর ও মনোরম।


যা দেখে সত্যিই মনে হয় এত ঝঞ্জার পরও কামালের জীবনে ইতিবাচক কিছুই আসতে যাচ্ছে। নুড়ি পাথরের অসাধারণ মেলবন্ধন, ঝর্ণাধারার অপরূপ দৃশ্য, বেরি ফল ও পাখির সৌন্দর্য্য কামালকে মুগ্ধ করে। কামালের হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়। তিনি আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান। কামালের কষ্টকর দীর্ঘশ্বাস, তীব্র অবসাদ এবং ভয়-এইরকম সব শব্দ দিয়েই সাজানো হয়েছে চলচ্চিত্রটির সাউন্ডট্র্যাক।


নির্মাতা রশিদ কামালের পুরো পথযাত্রাকে সুনিপুনভাবে তুলে এনেছেন। একইভাবে কামালের টালমাটাল মানসিক অবস্থাও ফুটিয়ে তুলেছেন ক্যামেরায়। ক্লোজআপ শটে তার মুখায়বকে শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন করে তার সুতীব্র বেদনাকে দালিলিক প্রামাণ্যতা দিয়েছেন। ৭২ মিনিট দৈর্ঘ্যরে পুরো ছবিতে সংলাপের আধিক্য একেবারেই কম। ছবিটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো এটি কামালের দৃষ্টিকোণ থেকে পুরো গল্পকে বর্ণনা করেছে। অনেকের মতে, এই উপস্থাপনশৈলী একইসঙ্গে গল্পের দৃঢ়তাকে স্পষ্ট করে।


তবে, খারাপ লাগার বিষয় হলো, সাধারণ দর্শক চাইলেই ছবিটি দেখতে পারছেন না। আর্ট হাউজ ও উৎসবগুলোতে যারা অংশগ্রহণ করতে পারছে, তারাই ছবিটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here