বৃহস্পতিবার, 21 নভেম্বর, 2024

ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অভিবাসীদের জন্য তৈরি হচ্ছে স্মৃতির সাউন্ডট্র্যাক

সঙ্গীতের মানসিক এবং জ্ঞানীয় প্রভাব প্রায়ই মানুষের মধ্যে ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। যেটা কিনা অনেক বার্ধক্যজনিত স্নায়ুবিক রোগের যত্ন এবং পুনর্বাসনের একটি কার্যকর হাতিয়ার হয়ে ওঠে

বার্ধক্য ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অভিবাসীদের স্মৃতিকে উদ্দীপ্ত করতে এবার অনবদ্য একটি বিষয় হাজির করতে যাচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক নৃবিজ্ঞানী এবং সঙ্গীতজ্ঞ ডা. সিমোন মারিনো। মূলত সঙ্গীতের মাধ্যমে বার্ধক্য ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অভিবাসীদের সামনে এমনভাবে গল্প বলা হবে, যাতে করে অভিবাসীরা তাদের অতীত কিংবা নিজ দেশের কথা মনে করতে পারবেন। ডা. সিমোনের পরিচালনায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএজিই এজিং ল্যাবের অধ্যাপক লরেটা বালদাসা সমন্বিতভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন।

‘আমি তাদের জীবনের ইতিহাস, তাদের গল্পগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। তাদের নিয়ে যখন কোনো গান রচনা করতে চাই, তখন যতটা সম্ভব তাদের গানের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করি।’ ‘আমার লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণকারীর প্রাসঙ্গিক স্মৃতিগুলির একটি সাউন্ডস্কেপ তৈরি করা, যেটা যোগাযোগকে আরো উন্নত করবে’, অস্ট্রেলিয়ার এজিং এজেন্ডাকে বলেছেন ডা. সিমোন মারিনো।

আরো পড়ুন:

‘পশ্চিমারা অভিবাসীদের দ্বারা নয়, অভিবাসীদের ভয়ে ধ্বংস হচ্ছে’

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক ডাঃ মারিনো আশা করেন যে, অভিবাসীদের অতীত বা নিজের দেশের কথা মনে করিয়ে দেবে এমন গল্প সঙ্গীতের মাধ্যমে তুলে ধরতে চান তিনি। যেটা তাদের অতীতকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে তাদের মানসিক কার্যকলাপকে উস্কে দেবে।

‘আমার সঙ্গীতের সঙ্গে যারা জড়িত বা অংশগ্রহণ করছে, তাদের থেকে আমি কেবল একটি আখ্যান রচনার চেষ্টা করছি’- বলেন মারিনো। ‘তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। ফলে তাদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সবকিছু যেমন-তাদের আদি অঞ্চলের প্রিয় বন্ধু, পিতা-মাতা, তাদের অনুভূতি, গন্ধ, স্মৃতি, জাহাজে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ, সংগ্রাম, অর্জন, শিশু এবং পরিবার সবকিছুই জানার চেষ্টা করি।’

মারিনোর মতে, গান রচনা কর্মশালা অভিবাসীদের গল্প বলার সুযোগ করে দেয়। তাদের আত্মজীবনীমূলক গল্পগুলি ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করছে। একটি ব্যক্তিগত আখ্যান তৈরি হয়ে গেলে মারিনো তাদের স্মৃতির একটি সাউন্ডট্র্যাক রচনা করেন। স্বল্পদৈর্ঘ্যের গানগুলি একটি লুগো ডেলা মেমোয়ার তৈরি করার জন্য অংশগ্রহণকারীর নিজের ভাষায় প্রথম লেখা ও ডিজাইন করা হয়। যেটা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে সবার সামনে আরো বেশি করে তুলে ধরে।

আরো পড়ুন:

আমেরিকার বিয়ার শিল্পে কীভাবে জার্মান অভিবাসীরা বিপ্লব ঘটিয়েছে

১১ বছর আগে রোম থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন মারিনো। তখন থেকেই ওয়ার্কশপগুলি পরিচালনা করতে থাকেন। তিনি মূলত ইতালীয় এবং ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসীদের থেকে বেশ কিছু উপভাষায় জ্ঞান অর্জন করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ সঙ্গীতজ্ঞ এবং গিটারবাদক। যখন পরিচর্যারত কোনো বয়স্ক অভিবাসীর বাড়িতে যান, তখন একটি গিটার, একটি পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ন, ইতালিয়ান ব্যাগপাইপসহ বিভিন্ন যন্ত্র সেখানে তিনি নিয়ে যান।

মারিনো বলেছেন, তার দাদা ১০ বছর ধরে ডিমেনশিয়া নিয়ে বেঁচে ছিলেন। ‘দাদার জন্য আমি একটি গান করেছি, যেটি তার সঙ্গেই গাইতাম। আমি তার যে সমস্ত মাইলফলকগুলি অন্তর্ভূক্ত করেছি, সেগুলো তিনি অনুসরণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এটি অস্ট্রেলিয়ায় ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অভিবাসীদের উপকার করতে পারে এমন কিছু প্রস্তাব করার যুক্তিতে ভূমিকা পালন করেছে।

আরো পড়ুন:

বেলারুশ-পোল্যান্ড অভিবাসী সংকট: ইউরোপীয় স্বপ্ন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ডলারে!

এটি প্রমাণিত যে, সঙ্গীত মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট স্থানকে যুক্ত করে। সঙ্গীতের মানসিক এবং জ্ঞানীয় প্রভাব প্রায়ই মানুষের মধ্যে ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। যেটা কিনা অনেক বার্ধক্যজনিত স্নায়ুবিক রোগের যত্ন এবং পুনর্বাসনের একটি কার্যকর হাতিয়ার হয়ে ওঠে।

বয়স্ক অভিবাসীদের যত্ন করার জন্য গান রচনা কর্মশালার ইতিবাচক প্রভাব মারিনো স্পষ্টভাবেই দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণকারী অনেক অভিবাসীর সঙ্গে আমি যে সেশনগুলি করেছি, সেটা করার পর তাদেরকে যোগাযোগের একটি উন্নত উপায় দেখাতে সক্ষম হয়েছি। যার ফলে তারা তাদের অতীতকে নিজের মতো করে আবার দেখতে শুরু করেছেন।’

সূত্র: অস্ট্রেলিয়ান এইজিং এজেন্ডা

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা