সোমবার, 14 জুলাই, 2025

বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের ২৫ মিলিয়ন ডলার মজুরি চুরি

ঘটা করে প্রকাশিত না হলেও মোটামুটি সবাই জ্ঞাত যে, কোভিড-১৯ মহামারি সাধারণ মানুষের জীবিকা নির্বিচারে কেড়ে নিয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবি মানুষের অধিক বসবাস, সেখানে করোনা এই হানা বেশি দিয়েছে। এর মধ্যে যারা অভিবাসী শ্রমিক রয়েছেন, তাদের অনেকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্য মজুরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবার এ বিষয়ে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনাকালে দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রমিকদের মজুরি না পাওয়ার এই ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২৫ মিলিয়ন ডলার।

গবেষণা প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, জুন, ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশ-বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও ফিলিপাইনের ৩ হাজার ১০৬ জনেরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক ২৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ মজুরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দক্ষিণ এশিয় শ্রমিকদের কাছ থেকে মজুরি চুরি সংক্রান্ত প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গবেষণাটি থেকে আরো জানা গেছে, শ্রমিকদের মজুরি চুরির বিষয়টি নিয়োগকর্তা এবং নিয়োগকারী সংস্থাগুলির দ্বারা সংঘটিত বেতন এবং সুবিধা সম্পর্কিত লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

গবেষণাটির ভিত্তি ও প্রমাণ হিসেবে শ্রমিকদের বেতনের স্লিপ, কোম্পানির চিঠিপত্রসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদির সমন্বয় করা হয়েছে। আর এসব কিছুই সংগ্রহ করা হয়েছে জাস্টিস ফর ওয়েজ থেফ্ট (জেডব্লিউটি) ক্যাম্পেইনের একটি বিশেষায়িত ওয়েবসাইট থেকে। এছাড়া মাইগ্রেন্ট ফোরাম ইন এশিয়া (এমএফএ) এর মাধ্যমে করা পৃথক গবেষণার ফলাফল থেকে অনুমিত হয়েছে যে, একজন শ্রমিক ১৪ মাসের জন্য গড়ে সর্বনিম্ন ৭ হাজার ২১৭ ডলার সমপরিমাণ মজুরি হারাতে পারে।

এদিকে ‘জাস্টিস ফর ওয়েজ থেফ্ট’ এর তথ্যমতে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের প্রায় ২ হাজার শ্রমিকের কাছ থেকে মোট মজুরি ও বকেয়া চুরি হয়েছে ১৯ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতের সর্বাধিক ৭৪৫ জন শ্রমিক তাদের প্রাপ্য মজুরি ১৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।

এরপরের অবস্থানে যথাক্রমে রয়েছে-ইন্দোনেশিয়ার ৪০৮ শ্রমিক ১ দশমিক ১৩ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশের ৩৭৯ জন শ্রমিক শুন্য দশমিক ৬৫৭ মিলিয়ন, নেপালের ৪৪১ জন শ্রমিক শুন্য দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ও ফিলিপাইনের ৯৯ জন শ্রমিক শুন্য দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার মজুরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই অঞ্চল জুড়ে শ্রমিকদের পাওনা না দেয়ার জন্য নির্মাণ খাত ছিল সবচেয়ে কুখ্যাত।

মাইগ্রেন্ট ফোরাম ইন এশিয়া (এমএফএ) বলছে, ভারতে এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্যগুলিকে মজুরি চুরি, স্বেচ্ছাচারী বরখাস্ত এবং জবরদস্তিমূলক বা প্রতিশোধমূলক কৌশল প্রয়োগের জন্য বেসরকারি খাতের নিয়োগকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
মজুরি চুরি সংক্রান্ত একটি পৃথক প্রতিবেদনে দেখা গেছে শুধু ২০১৯ এবং ২০২০ সালে অমীমাংসিত শ্রম বিরোধ মামলার সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৯৮৮টি (এই পরিসংখ্যানটি শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্যতীত উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলির মামলা নিয়ে হিসাবকৃত)।

জেডব্লিউটি আন্দোলনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘লকডাউনের সময় আদালত এবং অন্যান্য শ্রম বিরোধ প্রক্রিয়াগুলিও বন্ধ করে দেয়ার কারণে যথাযথ কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা ছাড়াই উৎপত্তি ও গন্তব্য উভয় দেশই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করেছিল।’

কেরালার উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, রাজ্যটিতে মহামারী চলাকালীন চাকরি হারানোর পরে বিদেশ থেকে ৫ লাখ এরও বেশি কর্মী ফিরে এসেছেন। সরকার একটি টোল-ফ্রি নম্বর সেট আপ করে এবং মজুরি চুরির ঘটনাগুলি রিপোর্ট করার জন্য অভিযোগ ফর্ম সরবরাহ করে। কিন্তু দেখা গেল, এতে মাত্র ৬০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

সূত্র: কোয়ার্টজ ইন্ডিয়া

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা