ক্যালিফোর্নিয়ার ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তে আবর্জনায় ঠাঁসা একটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে ভয়াবহ মানসিক সংকটে দিন পার করছেন শত শত অভিবাসন প্রত্যাশী। নিজ দেশ থেকে পালিয়ে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের আশায় বুক বেধে সবকিছু ছেড়ে এসেছেন তারা। নাওয়া-খাওয়া তো দূরের কথা, জীবন বাঁচানোটাই তাদের কষ্টকর হয়ে উঠছে।
ঠিক এরকম এক পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্ত এ মানুষগুলোর সামনে আশির্বাদ হয়ে হাজির হয়েছে ১১ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু। অন্য কোনো কিছু দিয়ে নয়, মেয়েটি শুধু তার সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠের যাদু দিয়ে যেন, এই অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষদের ভয় ও অনিশ্চয়তা দূর করার ব্রত নিয়েছে। ওরা গান যারা শুনেছেন, তাদের সবার ভাষ্য, ওর গানে আছে কষ্ট ভুলে সামনে এগোনোর মন্ত্রণা। ওর সুরেলা কণ্ঠে ঝরে পরে হাজারো বেদনা।
অথচ, অবাক করা বিষয় হলো: এই আশ্রয় শিবিরে শিশুটি নিজেই একজন অভিবাসী, যেখানে সে নিজেই অনিশ্চয়তার দোলাচলে আছে, সেই মুহূর্তে অন্য সবার মনোবল বাড়িয়ে তুলতে গান রচনা করে, সবার সামনে সুর করে গেয়ে মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যা দেখে শিবিরের সবাই যেন আশ্চর্যবোধ করেছে। সবার একটাই কথা, মেয়েটির গান তাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে, তারা বেঁচে থাকার মন্ত্রণা পাচ্ছে, পাচ্ছে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা।
আরো পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে লরির মধ্যে অভিবাসীদের মৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিক নয়!
স্প্যানিশ ভাষায় ছোট্ট মোলায়েম কণ্ঠে সে গায় ‘আমাকে তোমাদের হাসি উপহার দাও/ আমাকে স্বপ্ন দেখাতে শেখাও/আমাকে তোমাদের তারা উপহার দাও/ যেটি এই রাতকে আলোকিত করে/ যা শান্তি ও সম্প্রীতিতে পূর্ণ/এবং আমি তোমাদেরকে আমার জীবন দিবো।’
ড্যাফনে তেজেদা, ১১ বছর বয়সী এই মেয়েটি তার বাবা-মা ও তিন ভাইবোনের সঙ্গে গত শুক্রবার পেরু থেকে রওয়ানা হয়ে ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তে আটকা পড়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া লাগোয়া ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তের এই অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫০০ অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিশু রয়েছে। ড্যাফনের গাওয়া গান এখানকার প্রতিটি জায়গায় যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো।
অনেকেরই জানা ছিল না যে, শিরোনাম ৪২, ট্রাম্প-যুগের এই ব্যাপক বিতর্কিত নীতির মাধ্যম বর্ডার পেট্রোলকে মেক্সিকোতে অভিবাসীদের ফেরত দেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। গেল বৃহস্পতিবার এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন: আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এত অমানবিক ও কঠোর কেনো
ড্যাফনের বাবা, গ্যারি তেজেদা। ৪০ বছর বয়সী এ তেজেদা গর্ব করে বলছিলেন, তার মেয়ের গাওয়া গান অভিবাসীদের মনোবল বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
পেরুতে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে কাজ করা তেজেদা ‘দ্য পোস্ট’কে বলেছিলেন যে, তিনি তার দেশে চলমান রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসেছেন। পেরুর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি পেদ্রো কাস্টিলোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় তাকে মারধর করা হয়েছিলো। পেদ্রো ডিসেম্বরে অভিশংসিত হয়েছিলেন।
সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট