একটি আসনে নিয়োগের বিপরীতে শত শত আবেদন জমা পড়ার ঘটনা হরহামেশা ঘটে বাংলাদেশ ও ভারতসহ পৃথিবীর অনেক স্বল্পোন্নত দেশে। তাই বলে সৌদি আরবের মতো দেশেও এরকম ঘটনা ঘটবে, তা হয়তো অনেকেরই ভাবনার অতীত।
কিন্তু এবার এমনটাই ঘটেছে দেশটির ট্রেনের নারী চালক নিয়োগের একটি চাকরির বিজ্ঞাপনে। সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরায় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে ৩০ জন নারী ট্রেন চালক নিয়োগের একটি চাকরির বিজ্ঞাপনে ২৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। দেশটির নারীদের জন্য বিধিনিষেধ ক্রমশ শিথিল করার ফলে এরকম আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। একইসঙ্গে এমন উদাহরণের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার বার্তা দেয় যে, সৌদি আরবে নারীদের জন্য আরো বেশি সুযোগ সুবিধার পথ উন্মোচিত হচ্ছে।
এদিকে বিপুল সংখ্যক এই প্রার্থীদের মধ্য থেকে মাত্র ২৮ জনকে বেছে নেয়ার প্রসঙ্গে স্প্যানিশ রেলওয়ে অপারেটর ‘রেনফে’ বুধবার জানিয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতার একটি অনলাইন মূল্যায়ন এ বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। বাছাইকৃত পরীক্ষার্থীদের নিয়ে আগামী মার্চের মাঝামাঝি পরবর্তী ধাপের পরীক্ষা নেয়া হবে। এরপর নির্বাচিত এ ৩০ জন নারী এক বছরের স্ববেতনে প্রশিক্ষণের পর মক্কা ও মদিনা শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালাবেন।
রেনফের ভাষ্যমতে, এ ধরনের ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হতে নারীদের বেশি করে আগ্রহী করে তুলবে। বর্তমানে সৌদি আরবে ট্রেন চালানোর জন্য ৮০ জন পুরুষকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং ৫০ জনেরও বেশি পুরুষকে নিয়োগের নির্দেশনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এতদিন ধরে সৌদি আরবে নারীদের জন্য চাকরির সুযোগ শিক্ষক এবং চিকিৎসা পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ তাদের কঠোর লিঙ্গ পৃথকীকরণের নিয়ম পালন করতে হয়েছিল। এমনকি ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি ছিল না।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের রাজত্ব শুরুর পর থেকে এবং অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে তার নেয়া উদ্যোগের পর থেকে গত পাঁচ বছরে কর্মশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে নারীরা এখন পুরুষ এবং অভিবাসীদের মধ্যে এতদিন সীমাবদ্ধ থাকা চাকরিও গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।
যদিও গত বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দেশটিতে কর্মরত নারীদের অনুপাত পুরুষদের তুলনায় প্রায় অর্ধেক ছিল। এছাড়া নারীদের বেকারত্ব পুরুষদের তুলনায় তিন গুণ বেশি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী অধিকার কর্মীকে হেনস্তার ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকে সৌদি আরব পশ্চিমা বিশ্বের সামনে নিজেদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও লিঙ্গ সমতার অগ্রগতি তুলে ধরতে চাইছে। ধারণা করা হয়, এরই অংশ হিসেবে সৌদি আরব সরকার দেশটির উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ বাড়াচ্ছে।
সূত্র: আলজাজিরা