পোল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা ইউক্রেনের শরণার্থীদের সম্ভাব্য ঢল মোকাবেলায় পোল্যান্ড পুরোপুরি প্রস্তুত। এরই মধ্যে দেশটি শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর জন্য অভ্যর্থনা কেন্দ্র এবং হাসপাতাল স্থাপন করেছে। আজ রাশিয়ান সামরিক বাহিনী পোলিশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৮৫ কিলোমিটার দূরে লভিভ শহরসহ ইউক্রেনজুড়ে আক্রমণ শুরু করে। এরই মধ্যে পোলিশ কর্তৃপক্ষ ৫০০ কিলোমিটার পোলিশ-ইউক্রেনীয় সীমান্তে ক্রসিং পয়েন্টের কাছে আটটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পোল্যান্ডের ডেপুটি ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার পাওয়েল সেফের্নাকার বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, পরবর্তী ২৪ ঘন্টা গুরুত্বপূর্ণ হবে।’ এসময় তিনি জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে শরণার্থীরা খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা এবং তথ্য সেবা পাবে বলে পোল্যান্ড নিশ্চিত করছে।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাডাম নিডজিয়েলস্কি বলেছেন, ১২০টি পোলিশ হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য পোল্যান্ড একটি বিশেষ মেডিকেল ট্রেন স্থাপন করবে। ‘আমরা মনে করি যে, এই মুহূর্তে যুদ্ধে আহত কয়েক হাজার রোগীকে গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’
তবে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেছে, পোল্যান্ডে এখন পর্যন্ত কোনো শরণার্থী ঢোকার চেষ্টা করেনি। আর সেফের্নাকার বলেছেন যে, ইউক্রেনের সঙ্গে পোল্যান্ডের সীমান্ত ক্রসিংগুলি স্বাভাবিক মাত্রায় ব্যস্ত ছিল।
‘এই মুহূর্তে আমরা এখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে উদ্বাস্তুদের ঢল দেখতে পাচ্ছি না। সীমান্ত ক্রসিংগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে’Ñ ওয়ারশতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রি দেশচিৎসা পোল্যান্ডের ডিজিয়েনিক গেজেটা প্রওয়ানা সংবাদপত্রকে বলেছেন।
প্রায় এক দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় ইতিমধ্যেই পোল্যান্ডে বাস করছে। দেশটির সরকার চলতি মাসের শুরুতে বলেছিল যে, প্রয়োজনে তারা ১ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় শরণার্থী গ্রহণ করবে। এলক্ষ্যে শরণার্থীদের জন্য কী পরিমাণ বাসস্থান লাগবে এবং কী পরিমাণ খরচ হবে এর সম্ভাব্য হিসাব নিকাশ বের করতে দেশটির সরকার মেয়রদের নির্দেশ দিয়েছে।
ইউক্রেনের নাগরিকদের ইইউতে ভিসা-মুক্ত প্রবেশের অধিকার রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতামত, পোল্যান্ডের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ঘণিষ্ঠতার কারণে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লোকজন পোল্যান্ডকে অধিকতর অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখবে।
আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তা প্রদানের বিষয়ে অবশ্য পোল্যান্ডের অভিজ্ঞতা কম। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসের এক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশটিতে এসময় আন্তর্জাতিক সুরক্ষার জন্য মাত্র ৫ হাজার ২০০ জন আবেদন করেছিল।
এদিকে জার্মান সরকার শরণার্থীদের যেকোনো আগমনে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছে। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার টুইট করেছেন, ‘আমি সম্ভাব্য শরণার্থী ঢেউয়ের বিষয়ে পোলিশ সরকার এবং ইইউ কমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করছি।’ ‘ ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলিকে যেন খুব দ্রæত সহায়তা প্রদান করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ইইউ-এর মানবিক সহায়তা সমন্বয় এবং সহায়তা ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
সূত্র: পলিটিকো