শুক্রবার, 29 মার্চ, 2024

গাড়িতে ও পায়ে হেঁটে ইউক্রেন শরণার্থীরা হাঙ্গেরির দিকে ছুটছে

ইউক্রেন থেকে হাঙ্গেরিতে ঢোকার জন্য গাড়ির সারি দীর্ঘ ছিল। পায়ে হেঁটে আসেন আরও কয়েকশ ইউক্রেন শরণার্থী। খালি হতে শুরু করেছে এটিএম মেশিন, সুপারমার্কেটের তাক এবং পেট্রোল স্টেশনগুলোতে অপেক্ষমান গাড়ির সারি দীর্ঘ হচ্ছে। রাশিয়ার হটাৎআক্রমণের পর প্রাণভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে মানুষ।

ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সকারপাথিয়া থেকে বৃহস্পতিবার হাঙ্গেরিতে আসা প্রথম উদ্বাস্তুদের একজন ক্রিস্টিয়ান সাজাভলা বলেন, ‘অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছে’, এই এলাকায় একটি বড় হাঙ্গেরিয়ান সংখ্যালঘু বাস করে।

হাঙ্গেরিয়ান সীমান্তের পাশে জাহোনির একটি পেট্রোল স্টেশনে ২৮ বছর বয়সী এক তরুণ এএফপিকে বলেন, ‘পূর্বের পাহাড়ে থাকা অধিবাসীরা সাইরেন ও বোমার শব্দে কেঁপে উঠছে, আমরা তার মধ্য দিয়ে যেতে চাই না।’

ইউক্রেনের ট্রান্সকারপাথিয়া অঞ্চলটি কার্পাথিয়ান পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত থাকায় ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন, এবং এখানে হাঙ্গেরিয়ান সম্প্রদায়ের একটি বৃহত্তম গোষ্ঠীর আবাসস্থল।

‘অন্যদিকে পেট্রোলের জন্য ঘন্টাব্যাপী গাড়ির সারি অপেক্ষা করছে, ব্যাঙ্কের এটিএমগুলি খালি হয়ে গেছে, এবং মানুষের ভিড়ের কারণে দোকানের তাকগুলি সাফ হয়ে যাচ্ছে’,বলেছেন সজাভলা, পেশায় তিনি একজন মার্কেটিং কর্মকর্তা যিনি পূর্ব হাঙ্গেরিতে বন্ধুদের সঙ্গে সাময়িকভাবে থাকার পরিকল্পনা করছেন৷

‘আমার স্ত্রী এবং ছোট সন্তান আছে এবং আমি চাই না যে সে বাবা ছাড়া বড় হোক,‘ তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পেতে চান না৷’

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাঙ্গেরির পুলিশ জানিয়েছে যে, ইউক্রেনের সঙ্গে ১৪০ কিলোমিটার  দীর্ঘ (85-মাইল) সীমান্ত বরাবর হাঙ্গেরিতে প্রবেশের জন্য গাড়ির দীর্ঘ সারি অপেক্ষা করছে।

হাঙ্গেরির এমটিআই নিউজ এজেন্সি অনুসারে ‘অন্তত ৪০০ বা ৫০০ জন’ বৃহস্পতিবার হাঙ্গেরিতে পায়ে হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম করেছে।

‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি ভয়াবহ, আমার বন্ধুরা এবং পরিবার কিয়েভ এবং অন্যান্য শহর ছেড়ে সীমান্তের দিকে চলে যাচ্ছে,’ বলছিলেন ৩৩ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় এক ডাক্তার বোগদান খমেনিটস্কি।

‘আজ আমরা ইউক্রেনে সাহায্য করার জন্য বুদাপেস্টে একটি মেডিকেল কনফারেন্সে ট্রিপ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’ তার দুই সহকর্মীসহ তিনি এএফপিকে বলেছেন, তারা কিয়েভে ফিরে যাওয়ার আশা করছেন৷

`সমান্তরাল প্রতিক্রিয়া’

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তার দেশ ইউক্রেনীয়দের গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।

তিনি বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, ‘আমাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ইউক্রেনীয় নাগরিকের হাঙ্গেরিতে আগমন এবং সম্ভবত শরণার্থী অবস্থার জন্য আবেদন করার উপর নির্ভর করতে হবে।’

ভিক্টর অরবান আরো বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য জন্য প্রস্তুত, আমরা দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে এই চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যেতে সক্ষম হব।’

গতকাল ওরবানের ফেসবুক পেজে দেখানো একটি মানচিত্র নির্দেশ করে যে বুদাপেস্ট বিশ্বাস করে ইউক্রেন থেকে প্রায় ছয় লাখ শরণার্থী হাঙ্গেরিতে আসতে পারে।

প্রতিবেশী রোমানিয়ার পুলিশ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ মানুষ ইউক্রেন থেকে দেশটির ৬১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ শেয়ার্ড সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে, যার সংখ্যা আগের দিন ২৪০০ ছিল।

টেলিভিশনে সমাপ্রচারিত ভিডিওচিত্র অনুসারে, কয়েক শতাধিক নারী ও শিশু সিগেতুল মারমাটিইতে সীমান্ত অতিক্রম করেছে।

শহরের মেয়র ভ্যাসিল মোলডোভান বলেছেন, ‘তাদের বেশিরভাগই পোল্যান্ড বা চেক প্রজাতন্ত্রে কীভাবে যাবেন তা নিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভাসিলে ড্যাঙ্কুর এর মতে, রোমানিয়া সীমান্তবর্তী ছয় বা সাতটি অঞ্চলে সম্ভাব্য উদ্বাস্তুদের থাকার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন আক্রমণের এই সমান্তরাল প্রভাব মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।’

সূত্র: এএফপি

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
97SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা