পর্ব -১
ভিসা হাতে পেয়ে গেছেন, স্থানীয় ভাষা শিখেও ফেলেছেন কদ্দূর, মোট কথা বিদেশে পড়তে যাবার জন্যে রীতিমত প্রস্তুত আপনি। এবার শুধু বাকি ব্যাগটা গোছানো। তবে দুদিনের ছুটিতে কক্সবাজার ঘুরতে যাবার জন্য প্যাকিং করা যতটা সহজ, এক্ষেত্রে ব্যাপারটা ততটা সহজ নয়।
ছয় মাস বা এক বছর বা তার থেকেও বেশি সময়ের জন্য অন্য দেশে থাকতে যাবার বেলায় ব্যাগের জিনিসপত্র নিতে হবে খুব বুঝেশুনে- কারণ প্রয়োজনীয় কিছু না নিলে সেটা হয়তো অন্য দেশে কিনতে হতে পারে দশগুন বেশি দামে।
তবে ভয় পাবার কিছু নেই। একটু মাথা খাটিয়ে প্যাকিং করলেই খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হবে না আপনাকে। এই নির্দেশিকাটি আপনাকে সাহায্যে করবে কোন কোন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে তার একটি রূপরেখা তৈরিতে।
প্রথমেই আসা যাক এমন জিনিসগুলোর কথায় যেগুলো কোন অবস্থাতেই ভুলে রেখে যাওয়া চলবে না। ভালো হয় যদি এই তালিকায় থাকা জিনিসপত্র আপনার মেইন লাগেজের পরিবর্তে একটি ক্যারি-অন ব্যাগে প্যাক করেন। দুর্ভাগ্যক্রমে যদি লাগেজ চুরিও হয়ে যায়, তাহলে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আপনার সঙ্গে নিরাপদ থাকবে।
১. পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় ভিসা (সঙ্গে ফটোকপি)
ফটোকপিগুলিকে মূল কাগজপত্র থেকে আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করতে ভুলবেন না: তাহলে আসলগুলি খোয়া গেলেও উভয়ের প্রতিস্থাপন তুলনামূলক সহজ হবে।
২. প্রেসক্রিপশন ও ওষুধ
আপনি যদি প্রেসক্রিপশন মেনে কোনো ওষুধ সেবন করেন, তাহলে আপনি বাইরে থাকার পুরো সময়টা চলে যাবে (অবশ্যই মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ দেখে নেবেন) তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ নিয়ে নেয়া ভাল। বিদেশী ফার্মাসিস্টরা সম্ভবত দেশি প্রেসক্রিপশন মেনে ওষুধ দেবে না। তবুও এটির একটি অনুলিপি থাকা ভাল, যাতে আপনার আরও ওষুধ কেনার প্রয়োজন হলে আপনি স্থানীয় ডাক্তারকে সেটা দেখাতে পারেন।
৩. স্থানীয় মুদ্রা
দীর্ঘমেয়াদে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে পড়তে গেলে আপনাকে বেশিরভাগ দেশেই সে দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হবে। তারপর আপনি সব লেনদেন কার্ডের মাধ্যমেই করতে পারবেন। তবে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যায়। তাই ভালো হবে, যদি আপনি প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রা সঙ্গে করে নিয়ে যান।
৪. পাওয়ার অ্যাডাপ্টার এবং কনভার্টার
ভ্রমণের সময় ফোন, ল্যাপটপ, ই-রিডার ইত্যাদি জিনিস নিশ্চয়ই থাকবে আপনার সঙ্গে। এসব ডিভাইসের জন্য আপনার একটি কনভার্টার এবং সম্ভবত একটি অ্যাডাপ্টারের প্রয়োজন হবে৷ সমস্ত দেশ একই ধরনের প্লাগ পয়েন্ট এবং বিদ্যুৎ ভোল্টেজ ব্যবহার করে না, যার অর্থ হল শুধুমাত্র প্লাগের আকৃতি পরিবর্তন করা আপনার চার্জারের কাজ করার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে – এমনকি এটি বিপজ্জনক হতে পারে এবং ডিভাইসটির ক্ষতির কারণও হতে পারে। আপনি যে দেশে ভ্রমণ করছেন সেখানে কোন প্লাগ এবং ভোল্টেজ ব্যবহার করা হয়েছে তা যাচাই করতে ভুলবেন না, যাতে আপনার সমস্ত ডিভাইসের জন্য সঠিক অ্যাডাপ্টার থাকে।
৫. ফেস মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার
নিরাপত্তা সবার আগে! কোভিড-১৯ এর দ্রুত বিস্তারের সঙ্গে, জীবাণু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থেকে রক্ষা করতে সর্বদা আপনার সঙ্গে ফেস মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা ভাল।
৬ চশমা, কন্ট্যাক্ট লেন্স ও সল্যুশন
আপনি যদি নিয়মিত পাওয়ার সমৃদ্ধ চশমা বা কন্ট্যক্ট লেন্স ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই এগুলো কয়েকটি করে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। সঙ্গে নিবেন আপনার চশমার প্রেস্ক্রিপশন। এক্ষেত্রেও উপরে উল্লিখিত কথাটি প্রযোজ্য যে ভিন্ন দেশে আপনার প্রেস্ক্রিপশন হয়তো স্বীকৃত নাও হত পারে, তবে আপনার চোখের ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন পড়লে বা নতুন করে চশমা বা লেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রেস্ক্রিপশন কাজে লাগতে পারে। লেন্স ব্যবহারকারীরা বেশি করে সল্যুশন সঙ্গে নিতেও ভুলবেন না।
সবশেষে আরেকবার ভেবে দেখুন, এমন আর কোন জিনিসটা রয়েছে, যেগুলো ছাড়া বিদেশে জীবন যাপন অসম্ভব হবে আপনার জন্য। সেটা হতে পারে আপনার সাধের প্রসাধনী ( যা হয়তো সব জায়গায় সহজলভ্য নয়) কিংবা আপনার প্রিয় ক্যামেরাটি। একটু চিন্তা ভাবনা করে এমন সব অপরিহার্য জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করে নিন এবং খুব যত্নের সঙ্গে মনে করে তালিকার প্রতিটি জিনিস সঙ্গে নেবেন।
আপনার বিদেশ পড়তে যাবার অভিজ্ঞতা আনন্দদায়ক হোক। (চলবে)