বিদেশে পড়তে কী সঙ্গে নেবেন? ব্যাগ প্যাক করার আগে এই বড় প্রশ্নটিই সবার আগে হাজির হয়। তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস আপনার এই ভাবনাকে অনেকটাই সহজ করে দিবে। বিদেশে যাওয়ার প্যাকিং এর একটি বড় অংশ হচ্ছে কোন ধরনের কাপড় বাছাই করতে হবে এবং আর কোনগুলো রেখে যেতে হবে সেটা ঠিক করা।
বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য জামাকাপড় প্যাক করার সময়, আপনি এই চারটি প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলবেন, সেই সঙ্গে আপনি যে আবহাওয়া এবং অঞ্চলে ভ্রমণ করছেন সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন।
প্রথমত, একটা বা দুইটা অনেক ভারী ও ফোলা ধরনের জ্যাকেট আনার বদলে কয়েক স্তরে পরা যায় এমন কাপড় নেয়া ভালো। সেক্ষেত্রে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে আপনি এক বা একাধিক কাপড়
মিলিয়ে মিশিয়ে পরতে পারবেন। লেয়ারের ক্ষেত্রে লম্বা এবং ছোট-হাতা টিশার্ট, সোয়েটার এবং হাল্কা জ্যাকেট নেবেন বেশি করে। মেয়েদের ক্ষেত্রে টিশার্টের পরিবর্তে কামিজ বা কুর্তা নিতে পারেন বেশি করে।
দ্বিতীয়ত, মনে রাখবেন যে একরঙা জামাগুলো প্যাটার্নের করা জামার থেকে কম চোখে পরে, ফলে সহজেই এগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরতে পারবেন আপনি। মনে হবে না যে বারবার একই জামা পড়ছেন।
সুতরাং প্যাকিং এর জন্য পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশি করে মৌলিক রঙয়ের জামাকাপড় বেছে নিন।
তৃতীয়ত, বিদেশে আপনার থাকার জায়গায় লন্ড্রি আছে কিনা এবং সেটার ব্যাবহার কতটা ব্যয়বহুল সে বিষয়টি বিবেচনা করুন, বিশেষ করে অন্তর্বাস এবং মোজা প্যাক করার সময়।
মনে রাখবেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আন্ডারওয়্যার প্যাক করা সবচসময়েই একটি ভাল বুদ্ধি। তবে আপনার ডর্ম বা হোস্টেলে যদি সহজেই এবং কিমি. খরচে ওয়াশার/ড্রায়ারের ব্যাবহারের সুবিধা থাকে তবে আপনার স্যুটকেসে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি বেশি গুরুত্ব দেয়াটাই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে অন্তর্বাস আর মোজা নিয়ে অযথা ব্যাগ ভারি করার কোন মানে হয় না।
চতুর্থত, মনে রাখবেন যে জুতা ব্যাগের অনেকটা জায়গা নিয়ে নেয়। আর আপনাকে অন্তত, তিন ধরনের জুতা সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে:
১.সবসময় পরে হাঁটার জন্য এক জোড়া আরামদায়ক জুতা।
২.বিশেষ কোথাও যাওয়ার সময়ের জন্য সুন্দর এক জোড়া জুতা।
৩.ঠান্ডা বেশি পড়লে পা গরম রাখবে এমন বুট জুতা বা উইন্টার বুট।
আরো পড়ুন ▪ বিদেশে পড়তে গেলে অপরিহার্য যে জিনিসগুলো সঙ্গে নেবেন ▪ ইউরোপের যেসব দেশে ফ্রিল্যান্স ভিসা দেওয়া হয়
প্রয়োজনীয় প্রসাধন সামগ্রী
বিদেশে পড়তে কী সঙ্গে নেবেন, এই তালিকার পরবর্তী অধ্যায়ে রয়েছে প্রয়োজনীয় প্রসাধন সামগ্রী। আপনার জন্য ‘প্রয়োজনীয়’ প্রসাধনী কোনগুলো সেটা অবশ্যই আপনিই ঠিক করবেন। তবে
প্রয়োজনীয় জিনিস বলতে আমরা তালিকায় রাখছি ডিওডোরেন্ট, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং বডি ওয়াশকে। আপনি নিশ্চয় নতুন দেশে পৌঁছেই টুথপেস্ট আর বডিওয়াশ কিনতে দৌড়াতে চান না। এগুলো মোটামোটি ৪/৫ সপ্তাহ চলার মতো পরিমাণে সাথে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় এবং এসব জিনিসগুলো রাখবেন আপনার ক্যারি-অন ব্যাগে।
এছাড়াও পোকামাকড় প্রতিরোধক, সানস্ক্রিন ও অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রী দেশভেদে প্রচন্ড ব্যায়বহুল হতে পারে। তাই একটু আগেভাগেই খোজখবর নিয়ে প্রয়োজনমতো সাথে করে নিয়ে যাওয়াই ভালো। এসব বিষয়ে দরকার পরলে আপনার কোর্স কো-অরডিনেটরের পরামর্শ নিন।
অন্যান্য জিনিস
জামাকাপড় এবং প্রসাধন সামগ্রী ছাড়াও, এখানে আরও কয়েকটি জিনিস রয়েছে যা আপনি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন:
- হোস্টেল লকারের জন্য একটি ছোট তালা।
- একটি ছোট ব্যাকপ্যাক বা ডে প্যাক, সাথে নিয়ে ঘোরার জন্য।
- মেয়েলি পণ্য যেমন স্যানিটারি ন্যাপকিন ইত্যাদি।
- ক্যামেরা, চার্জার এবং এসডি কার্ড।
- ই-রিডার, কিন্ডল বা নুকের মতো।
- অবসর কাটানোর জন্য বই, তাস, বা কয়েকটি ক্রসওয়ার্ড/সুডোকু পাজল ইত্যাদি।
- নোটবই, কলম, পেন্সিল, হাইলাইটার।
সর্বোপরি চেষ্টা করবেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছুই সাথে না নিতে। এতে অহেতুক বোঝা তো বাড়বেই, পাশাপাশি সব এয়ালনাইসেই লাগেজের নির্দিষ্ট ওজন বেধে দেয়া থাকে।
আশা করছি, বিদেশে পড়তে কী সঙ্গে নেবেন, এই তালিকার প্রয়োজনীয় কিছু টিপস আপনি ইতোমধ্যেই জেনে নিয়েছেন। আপনার বিদেশে উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতা আনন্দময় হোক। (চলবে)