প্রাদেশিক কারাগারে আটক আফগানিস্তানের একজন শরণার্থী দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘কানাডায় আমি প্রথম যে জিনিসটি দেখেছিলাম তা হলো কারাগার।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, কানাডার প্রাদেশিক কারাগারগুলোতে অভিবাসন প্রত্যাশী বন্দীদের আটক করার ক্ষেত্রে, দেশটি যে নিয়ম অনুসরণ করে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক মানদণ্ডের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
একইসঙ্গে কারাগারের বর্তমান অবস্থা ফেডারেল-প্রাদেশিক অভিবাসন আটক চুক্তিকেও লঙ্ঘন করে। সম্প্রতি কানাডার রিফিউজি রাইটস ডে উপলক্ষে সংগঠন দুটি কারাগারে অভিবাসন সম্পর্কিত কারণে বন্দিদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ সম্পর্কিত একটি আইনি স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ফেডারেল-প্রাদেশিক চুক্তির শর্তগুলি গোপনীয়। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের ভিত্তিতে প্রদেশগুলোর কাছ থেকে কারাগারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে। সংগঠন দুটি জানতে পেরেছে, প্রাদেশিক কারাগারগুলোতে অভিবাসন বন্দীদের ন্যায্য ও মানবিক আচরণ প্রদানে গড়িমষি করে। এছাড়া ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অধীনে বন্দী ব্যক্তিদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলতেও বাধ্য করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ নিয়ে বলেছে, প্রাদেশিক কারাগারের শর্তগুলি অবমাননাকর এবং কথিত এই ‘সুবিধাগুলি’ শাস্তিমূলক হিসেবে বিবেচিত এবং অভিবাসন সম্পর্কিত কারণে আটককৃতদের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা উচিত নয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিজেবিলিটি রাইট ডিরেক্টর সামের মাস্কাটি বলেছেন, ‘কানাডার অভিবাসন আটকাদেশ বাতিল করা উচিত। একইসঙ্গে অবিলম্বে প্রাদেশিক কারাগারে অভিবাসন বন্দীদের বন্দিত্বের অবসান ঘটানো উচিত।’ তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, প্রদেশগুলির উচিত অবিলম্বে এই বন্দি বিষয়ক চুক্তিগুলি বাতিল করা এবং কারাগারে সংঘটিত নিপীড়নের সঙ্গে তাদের (কর্তৃপক্ষ) জড়িত থাকা বন্ধ করা।’
পদক্ষেপ গ্রহণ করুন
প্রতি বছর কানাডার কয়েক ডজন প্রাদেশিক কারাগারে অভিবাসন-সম্পর্কিত কারণে শত শত মানুষকে জেলে বন্দী করা হয়। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ‘নিরাপত্তা’ সুবিধা রয়েছে। অভিবাসন সম্পর্কিত কারণে আটক ব্যক্তিদের নিয়মিত হাতকড়া ও শিকল পরানো হয় দেশটির কারাগারগুলোতে। এছাড়া কঠোর রুটিন মানতে বাধ্য করা হয়। ছোট জায়গায় আটকে নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। ফৌজদারি অভিযোগে বা দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের মতো তাদেরও নিয়মিতভাবে একই সেলে রাখা হয়।
অভিবাসন সম্পর্কিত কারণে আটকে থাকা অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু, যাদের মানসিক স্বাস্থ্যজনিত ‘সমস্যা’ রয়েছে বলে মনে করা হয়, স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে তাদেরকে বিশেষ করে প্রাদেশিক কারাগারগুলোর নির্জন সেলে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংগঠন দুটি আরো বলছে, কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি (সিবিএসএ) এই বৈষম্যমূলক এবং অপমানজনক অভ্যাসটিকে ন্যায্যতা দিয়েছে এই দাবি করে যে, এই ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে থাকা লোকদের প্রাদেশিক কারাগারে ‘বিশেষ যতœ পাওয়ার’ সুবিধা রয়েছে এবং এই সুবিধার আলোকে কর্তৃপক্ষ ‘কার্যকরভাবে তাদের দেখভাল করতে পারে’।
২০২১ সালের অক্টোবরে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে #ওয়েলকামটুকানাডা প্রচারাভিযান শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার এবং সীমান্ত কর্তৃৃপক্ষকে অভিবাসন বন্দীদের প্রাদেশিক কারাগারে স্থানান্তর করার অনুমতি দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানায়।
এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সরকার জানুয়ারিতে বলেছিল যে, তারা চুক্তিটি পর্যালোচনা শুরু করে জুনে শেষ করবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্থানীয় ও জাতীয় তৃণমূল সংস্থা, আইনজীবী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত আইনে আটকে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌথতার ভিত্তিতে একটি মূল্যায়ন জমা দিয়েছে।
৪ এপ্রিল #ওয়েলকামটুকানাডা প্রচারাভিযান কুইবেক প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পিটিশন পাঠিয়েছে, যাতে জনসাধারণের কাছ থেকে নেয়া সাত হাজারটিরও বেশি স্বাক্ষর রয়েছে। এই পিটিশনের মাধ্যমে প্রদেশটিকে সীমান্ত সংস্থার সঙ্গে চুক্তি শেষ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রচারাভিযানটি এখন নোভা স্কোটিয়া প্রদেশে বিস্তৃত হচ্ছে, যেখানে অভিবাসন বন্দীদের প্রাদেশিক কারাগারে বন্দি রাখা হয়।
২০১৭ সালে আসার পর নোভা স্কটিয়ার একটি প্রাদেশিক কারাগারে আটক আফগানিস্তানের একজন শরণার্থী দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘কানাডায় আমি প্রথম যে জিনিসটি দেখেছিলাম তা হলো কারাগার।’ তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এর (আফগানিস্তান) চেয়ে কানাডা ভালো…। আমরাও আপনাদের মতো মানুষ। কিন্তু আমাদের কোনো দেশ নেই।’
সূত্র: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল