২০২২ সালে লিবিয়া থেকে ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ইতালিতে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এটি ইতালিকে অনিয়মিত অভিবাসন রোধে পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে
অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপের সীমানা ছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণে লিবিয়া বরাবরই অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে অন্যতম পছন্দের রুট হিসেবে বিবেচিত। দিনকে দিন এর জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, ক্রমবর্ধমান এ সংখ্যা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
প্রায় চার হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার বিস্তৃত স্থল সীমানা এবং এক হাজার ৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত সমুদ্র সীমানার দেশ লিবিয়া ইউরোপে পৌঁছাতে চাওয়া অভিবাসীদের জন্য একটি পছন্দের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতেও লিবিয়া হয়ে ইউরোপে অভিবাসন কার্যক্রম বেড়েছে।
সম্প্রতি প্রায় ৮০ জন অনিয়মিত অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা ত্রিপোলির পূর্বে কাস্টেলভার্দে উপকূলে ডুবে যায়, যেখানে মাত্র পাঁচজন বেঁচে ছিলেন। বাকিরা হয় মারা গেছে বা সমুদ্রে নিখোঁজ হয়েছে। ঘটনাটি অনিয়মিত অভিবাসনের বিপদ এবং আরো প্রাণহানি রোধে জরুরী পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
আরো পড়ুন: যেকারণে লিবিয়া এখনো অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপে প্রবেশের জনপ্রিয় রুট
গত শনিবার নৌকাডুবির পর সাবরাথার তীরে ৩৬ জনের লাশ ভেসে গেছে। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট তিন দিন ধরে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, অন্যদের ভাগ্য এখনও অজানা। এটি আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা, যা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করার সময়, অভিবাসীরা যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, তা প্রমাণ করে।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে লিবিয়া থেকে ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ইতালিতে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এটি ইতালিকে অনিয়মিত অভিবাসন রোধে পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করেছে।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আন্তেনিও তাজানি বলেছেন যে, ইতালি লিবিয়া এবং তিউনিসিয়ার ভিতর থেকে অভিবাসীদের আগমন সংখ্যা কমাতে কাজ করছে।
লিবিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখায় যে, ২০২৩ সালের শুরু থেকে লিবিয়ায় বর্তমানে চার হাজার ২৬১ জনেরও বেশি অনিয়মিত অভিবাসী আটক রয়েছে। লিবিয়ার আটক কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে ত্রিপোলির আবু সেলিম আটক কেন্দ্র ও দেশের পশ্চিমাঞ্চল জিনতান আটক কেন্দ্র। এখানে আটককৃতরা তাদের সঙ্গে করা অবর্ণনীয় আচরণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে ওঠে যে, এসব জায়গায় বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ ও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।
আরো পড়ুন:ইতালি ও লিবিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কমিটিতে দুই নারীর মামলা
এই কেন্দ্রগুলির পরিস্থিতি মানবাধিকার সংস্থাগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত ভিড়, দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এরকম পরিস্থিতিতে অভিবাসনের অন্তর্নিহিত কারণগুলি মোকাবেলা করার জন্য একটি সু-সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়ার সময় এসেছে।
সূত্র: লিবিয়া আপডেট