আইনটি অভিবাসীদের চাকরির প্রস্তাব নিয়ে আসা কিংবা চাকরি ছাড়াই জার্মানিতে আসার পথ সহজতর করে তুলবে। এমনকি শুধু স্ত্রী-সন্তান নয়, পিতা-মাতাকেও নিয়ে আসার বিষয়টি আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিবাসী গ্রহণের ক্ষেত্রে একের পর এক দেশ যখন নানাবিধ আইন-কানুন আর বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করছে এবং রক্ষণশীল নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে, ঠিক সেসময় এর বিপরীত অবস্থান নিলো জার্মানি। দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের আকৃষ্ট করতে এবার দেশটির পার্লামেন্টে চমকে দেয়া একটি নতুন আইন পাস হলো।
নতুন এ আইনের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর বাইরে থেকে আসা অভিবাসীরা তুলনামূলক কম বাধা ও আইটি জটিলতা ছাড়াই জার্মানিতে কাজ করতে আসতে পারবেন বলে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আইনটিতে অভিবাসী কর্মীদের বেতন, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জার্মান ভাষায় দক্ষতা বিষয়ক মানদণ্ড শিথিল করার কথা বলা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, আইনটি অভিবাসীদের চাকরির প্রস্তাব নিয়ে আসা কিংবা চাকরি ছাড়াই জার্মানিতে আসার পথ সহজতর করে তুলবে। এমনকি শুধু স্ত্রী-সন্তান নয়, পিতা-মাতাকেও নিয়ে আসার বিষয়টি আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিবাসীবান্ধব এমন তাক লাগানো আইন মূলত দেশটির অভিবাসন নীতিতে একধরনের বড় পরিবর্তন। কারণ কয়েক দশক ধরে এমন ধারণাকে জার্মান সরকার প্রতিহত করে আসছিলো যে, জার্মানি অভিবাসনের দেশ।
আরো পড়ুন : অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে এখনও পছন্দের শীর্ষে জার্মানি
১৯৬০ এর দশকে তুরস্ক থেকে তথাকথিত ‘অতিথি শ্রমিক’দের প্রথম প্রজন্মকে ঠিক এভাবেই দেখা হয়েছিলো যে : এই ‘অতিথিরা’ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা চলে যায়।
নতুন এ আইন প্রণয়নের যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, জার্মানির ব্যবসায়ী নেতারা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ কর্মীদের অভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন। তাদের ভাষ্য, দেশটিতে বয়স্ক নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৬০ এর দশকে জন্মগ্রহনকারী শিশুরা এখন অবসরের দিকে যেতে শুরু করবে।
দেশটির মন্ত্রীরা এও সতর্ক করেছেন যে, চাকরির লক্ষ লক্ষ শুণ্যপদ পূরণে এখনই জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। তারা শ্রমের ঘাটতিকে জার্মান অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আরো পড়ুন : কেউ অযথা স্বদেশ ছেড়ে যায় না: অ্যাঞ্জেলা মার্কেল
রক্ষণশীল নেতৃত্বাধীন সরকারগুলি, বিশেষ করে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের প্রশাসন অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য উন্মুক্ত একটি সমাজের ধারণা প্রতিষ্ঠার লড়াই করেছিলো। যদিও জার্মান সমাজ ক্রমবর্ধমান ধারায় বৈচিত্র্যময়। জার্মানির জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি হয়-বিদেশি বংশোদ্ভ‚ত, না-হয়, অন্তত একজন বিদেশি-বংশোদ্ভ‚ত পিতামাতা রয়েছে।
এদিকে ওলাফ সলৎজের নেতৃত্বাধীন এসপিডি পার্টি ২০২১ সালে মার্কেল সরকারকে যখন পরাজিত করেছিলো তখন নতুন এসপিডি গ্রিন-লিবারেল কোয়ালিশন অভিবাসনের বিধিগুলিকে আরো সহজতর করে দিয়েছিলো।
দক্ষ কর্মীদের প্রবেশের কঠিন নিয়ম সহজ করবে জার্মানি
অভিবাসীবান্ধব নতুন এ আইন অবশ্য মোটেও সহজভাবে পাস হয়নি। শুক্রবার সংসদে আইনটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ওঠে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। রক্ষণশীলরা বিলটির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে এবং তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেছে, নতুন এ আইন জার্মানিতে অবস্থানরত প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীকে কাজ খুঁজে পেতে অনুমতি দেবে। অতি ডানপন্থী এএফডিও বিলটির বিরুদ্ধে না ভোট দিয়েছে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে জার্মানি ‘অভিবাসন’ এর দেশ নয়।
সূত্র: বিবিসি