‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ প্রণয়নের পর ১২-১৩ বছর ধরে এর কার্যক্রম চলছে। মূলত ক্যাবের আন্দোলনের ফসল ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯।’ জেলা প্রশাসন-খুলনার সহযোগিতায় আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জেলা প্রশাসন-খুলনার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিকত এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
‘ক্যাব প্রতিনিধি, খুলনা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি এর সদস্য, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, খুলনা প্রেস ক্লাবের প্রতিনিধি ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ বিষয়ক সেমিনার’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসন-খুলনার উপ পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইউসুপ আলী।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান আরো বলেন, ‘ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে সংগঠনটি (ক্যাব) যে দাবি তুলেছিলো, সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করলেন যে, এই আইনটি পাস হওয়ার মাধ্যমে ভোক্তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। মূলত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে দৃঢ় অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে।’
অবশ্য নানা কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে এখনো বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইনি সীমাবদ্ধতা, লোকবলের অভাব, অসৎ ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুর কারণেও ভোক্তাদের অধিকার শতভাগ কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্যাব-খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগের উপপরিচালক মো: ইব্রাহীম হোসেন, চেম্বার অব কর্মাসের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
সেমিনারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গৃহীত নানাবিধ কার্যক্রম ও সফলতার চিত্র তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জনাব শাহ আলম।
সেমিনারে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, ‘বাজারে দেদারছে মানহীন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা হিসেবে আমরা জেনে-বুঝেও এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। কার্যকর সমাধান পেতে হলে আমাদের সমন্বিতভাবে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে আলোচনা আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সত্যিকার অর্থে ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হলে বাজার ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে দায়বদ্ধতার ভেতর আনতে হবে। চেম্বার অব কমার্সকে খুঁজে খুঁজে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।’
নাজমুল আজম ডেভিড আরো বলেন, ‘ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জায়গায় আমাদের যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এর কার্যক্রম ও সফলতা আছে। কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের কাঙ্খিত চাহিদা মোতাবেক এর সুফল খুব অপ্রতুল। ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় তাই প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি পরিকল্পনা ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের দিক নির্দেশনা দেন, তাহলে এসব সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী শামীম আশরাফ শেলি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকার সুবাদে দেখেছি, সেসব জায়গার কোথাও ভেজাল খাবার নেই, ভোক্তাদের কোনো রকম ভয়েস রেইজ করার প্রয়োজন হয় না। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই তা মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে। কাজেই যত কথাই বলি না কেনো, কোনো কিছুতে কাজ হবে না, যদি আইনের উপযুক্ত প্রয়োগ করা না হয়। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই আমাদের সবকিছু ঠিক করতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
সেমিনারের সভাপতি জেলা প্রশাসন-খুলনার উপ পরিচালক (স্থানীয় সরকার) জনাব ইউসুপ আলী তার সমাপনী বক্তব্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে অধিদপ্তর যে উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়ন করছে তার প্রশংসা করেন। এসময় তিনি আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে জেলা প্রশাসন- খুলনা ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ক্যাবসহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সবাইকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং তারাও ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে আরো উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে মত প্রকাশ করেন। এসময় তিনি সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।