গ্রিস উপকূলীয় ভূমধ্যসাগরে জাহাজ ডুবির এক ঘটনায় পাঁচ শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশী এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। অন্যদিকে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম বলছে, জাহাজটিতে আনুমানিক ৭৫০ জন অভিবাসী ছিলো।
১৩ জুন গভীর রাতে দক্ষিণ গ্রিসের উপকূলীয় শহর পাইলোস থেকে প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় ১০৪ জনকে উদ্ধার করে গ্রিস কোস্টগার্ড। এর মধ্যে ৭৮টি মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে তারা। কোস্ট গার্ড বলেছে যে, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান ৭২ ঘণ্টার পরও অব্যাহত থাকবে।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ও শিশু রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত জীবিতদের সবাই মিশর, পাকিস্তান, সিরিয়া এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলের।
জাহাজ ডুবির এ ঘটনার পর ইউরোপীয় অভিবাসন বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকদের ভাষ্য, বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের ট্র্যাজেডি প্রতিরোধে ব্যর্থ ইউরোপ।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম বলেছে, জাহাজডুবির এ ঘটনায় এতসংখ্যক মানুষের নিখোঁজ হওয়ার এটি দ্বিতীয় রেকর্ড। এর আগে ২০১৫ সালের এপ্রিলে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ার উপকূলে একটি জাহাজ ডুবে গেলে আনুমানিক এক হাজার ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গ্রিক কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র নিকোস আলেক্সিউ দাবি করেছেন, কোস্ট গার্ড এবং প্রাইভেট জাহাজের মাধ্যমে বুধবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকা অবস্থায় জাহাজটিকে সাহায্য করার জন্য রেডিও এবং লাউডস্পিকারের মাধ্যমে বারবার প্রস্তাব করা হয়েছিলো। কিন্তু জাহাজটি সব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলো। এ সময় জাহাজটি লিবিয়া থেকে ইতালির দিকে যাচ্ছিলো।
প্রত্যাখ্যানের কারণ হিসেবে অ্যালেক্সিউর ভাষ্য,”কারণ তারা ভেবেছিল পুরো প্রক্রিয়াটি তাদের গ্রিসে নিয়ে যাওয়ার একটি উপায়।”
গ্রিক কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের খাবার ও পানি দিতে প্রথম জাহাজ, ট্যাঙ্কার লাকি সেলর পাঠায়। ট্যাঙ্কারটি পরিচালনাকারী সংস্থা শুক্রবার বলেছে যে, বোর্ডে থাকা লোকেরা “কোনও সহায়তা পেতে খুব দ্বিধায় ছিল এবং যেকোনও দিকে যাওয়ার চেষ্টায় জাহাজটি কৌশলে দূরে যেতে শুরু করেছিল।”
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর ভূমধ্যসাগরীয় অফিসের ফ্লাভিও ডি গিয়াকোমো টুইট করেছেন যে সমস্ত অভিবাসী নৌকাগুলিকে বিপজ্জনক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত এবং অবিলম্বে উদ্ধার করা উচিত কারণ “এমনকি যখন তাদের কোনও সমস্যা নেই বলে মনে হচ্ছে, কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা ডুবে যেতে পারে।”
জাতিসংঘের অভিবাসন এবং শরণার্থী সংস্থাগুলি একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে-যার মাধ্যমে সময়মত সামুদ্রিক অনুসন্ধান এবং উদ্ধারকে “একটি আইনী ও মানবিক বাধ্যতামূলক” বলে এবং “সমুদ্রে আরও মৃত্যু প্রতিরোধে জরুরি এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ” করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ঘটনার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত “শুধুমাত্র চোরাচালান নেটওয়ার্কগুলি ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে সমাধান দেখা বন্ধ করা” এবং ভূমধ্যসাগরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও নেতৃত্বে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আদ্রিয়ানা টিডোনা বলেন, “জাহাজে থাকা প্রতিটি যাত্রীর প্রতি গ্রিক সরকারের নির্দিষ্ট দায়িত্ব ছিল, যা স্পষ্টতই দুর্দশার মধ্যে ছিল।”
এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘‘এটি একটি ইউরোপীয় সমস্যা। আমি মনে করি ইউরোপের জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে তার জন্য একটি কার্যকর অভিবাসন নীতি সংজ্ঞায়িত করা এবং সংহতি সহকারে তা কার্যকর করার সময় এসেছে।”
এরই মধ্যে জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কারণ নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
জীবিতদের বেশিরভাগকে শুক্রবার কালামাতার দক্ষিণ বন্দরের একটি স্টোরেজ হ্যাঙ্গার থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, যেখানে আত্মীয়রাও এথেন্সের কাছে অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্রে প্রিয়জনদের সন্ধান করতে জড়ো হয়েছিল।
সূত্র: এবিসি, আরব নিউজ