মু-এর বাবা-মা দক্ষিণ সুদান থেকে এসেছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন। এখানেই তারা সাত সন্তানসহ বসবাস করেন। বাবা-মা মুরকে এগিয়ে চলার পথে সহযোগিতা করেছেন
অভিবাসী মা-বাবার সন্তান অ্যাথিং মু এর বয়স মাত্র ১৯ বছর। অথচ এই বয়সেই দুই দুটি অলিম্পিক স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অ্যাথিং মু খুব সহজেই অলিম্পিকে স্বর্ণপদক অর্জন করতে পেরেছেন। কিন্তু তা মোটেও নয়। এই সাফল্যের পরশ পেতে তাকে ভয়ঙ্কর পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়েছে। অলিম্পিক ৮০০ মিটার চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলেটিক্সে নিজের সফলতার জন্য তাকে অনেক বেশি দূরদর্শী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়েছিলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ম্যাডলিন ম্যানিং; যিনি অলিম্পিক ৮০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণপদক জিতেছেন এবং পরবর্তী সময়ে মেক্সিকো সিটি ১৯৬৮ থেকে টোকিও ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৫৩ বছর ধরে তিনি একইভাবে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন। প্রথম বিজয়ী হিসেবে তিনি মেক্সিকো সিটির উত্তাপে ২:০০.৯ এর অলিম্পিকে সর্বোচ্চ রেকর্ড করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
আর ম্যাডলিন ম্যানিংয়ের পর দ্বিতীয় স্বর্ণজয়ী হলেন অ্যাথিং মু, যার স্বর্ণ জয়ের সময় টোকিও ২০২০-এ, যখন ১:৫১.২১ ছিল একটি জাতীয় রেকর্ড । এটি গেমসের ইতিহাসে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর প্রথম অলিম্পিক ৮০০ মিটার জয় এবং তার এ সাফল্য দীর্ঘ দূরত্ব জয়ের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বজুড়ে মানুষের জন্য রঙিন দরজা খুলে দিয়েছে।
স্বপ্ন দেখার আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাস মু এর পরিপূরক হয়ে উঠেছিলো। অলিম্পিক ডটকম-এর সঙ্গে টোকিও ২০২০-এর পরে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি যা কিছু মনে করি, আমি তা অর্জন করতে পারি। আমি ছাড়া কেউ আমাকে কিছু করতে বাধা দিতে পারে না।’ তার মতে, তার এই উচ্চাকাঙ্খাই টোকিও ২০২০-এ অলিম্পিক ৮০০ মিটার এবং ৪০০ মিটার স্বর্ণ জিততে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
৪০০/৮০০ মিটার অলিম্পিক ডাবল-গেমের ইতিহাসে শুধু একজন কিউবান ক্রীড়াবিদ কিংবদন্তি আলবার্তো জুয়ানতোরেনার গড়া একটি কীর্তি। অন্যটি বিশ্ব রেকর্ডের চেয়ে কম কিছু নয়। টিমইউএস.এআরজি-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে মু বলেন, ‘আমি আমার নামটি এমন দুই ব্যক্তির তালিকায় রাখতে যাচ্ছি, যারা এটাতে সফল হয়েছে। এবং আমিও এটি করতে চাই। আমি শেষ পর্যন্ত ৮০০টি বিশ্ব রেকর্ডও ভাঙতে যাচ্ছি।’
আরো পড়ুন:
অলিম্পিকে শরণার্থী অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ কেনো জরুরি?
তিনি যোগ করেন, ‘তরুণ অ্যাথলেট চরিত্রের এমন একজনের সঙ্গে কথা বলে পরের বছরগুলিতে বিজয়ী হওয়ার মনোবল পাই। কেননা এইরকম বড় স্বপ্নের জন্য বড় আত্মবিশ্বাস কোনো অংশেই কম কিছু নয়। টোকিও ২০২০ অলিম্পিকের ফাইনালে মু ‘আত্মবিশ্বাসী’ শব্দের সঙ্গে একটি লাল ব্যারেট ব্যবহার করেন। সেই সময়ে তার মনের অবস্থা কেমন ছিল, এটা সেই সংকেতই দিয়েছিলো গোটা বিশ্বের জন্য।
‘আমি একজন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি, কারণ আমার আত্মবিশ্বাস ছিল।’ তিনি অলিম্পিক ডটকমকে বলেছেন ‘যদি আমার মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস না থাকত, তাহলে আমি হয়তো এভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতাম না। আর আমার গলায় এই মেডেলও থাকতো না…। এই শব্দটিই মূলত আমাকে সঙ্গায়িত করে।’
সাফল্যের শিকড়
অ্যাথিং মু-এর ক্ষেত্রে তুলনা করা কঠিন। সেটা অ্যাথলেটিক্সের সেরাদের বা অন্য কারো জন্যই হোক না কেন। আবার ম্যানিংয়ের মতো ইতিহাস নির্মাতাদের জন্যই হোক বা অ্যাথলেটদের জন্য যারা তাদের খেলার উজ্জ্বল মুখ হয়ে উঠেছেন- যেমন ইউএসএ কিংবদন্তি অ্যালিসন ফেলিক্স। আরেকটি তুলনা হল তাদের সঙ্গে যাদের পথ একেবারে ভিন্ন হলেও, তাদের পটভূমিতে এমউই এর সঙ্গে মিল রয়েছে।
মু-এর বাবা-মা দক্ষিণ সুদান থেকে এসেছেন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। এখানেই তারা সাত সন্তানসহ বসবাস করেন। বাবা-মা মুরকে এগিয়ে চলার পথে সহযোগিতা করেছেন এবং তার সাফল্যে তাদের যে অবদান, তা তিনি কখনোই ভুলবেন না। তিনি যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন, ‘আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যা যা করার দরকার ছিল, তার সবকিছুই করেছি। কারণ আমি জানি যে, আমি শুধু নিজের চেয়েও বেশি কিছু করছি।’
‘আমার বাবা-মা আমাকে এখানে আনার জন্য সবকিছু করেছে। তাই আমি আমাদের পুরো পরিবারকে সাহায্য করার জন্য সবকিছু করতে পারি।’ টোকিও ২০২০-এ, আইওসি শরণার্থী অলিম্পিক দলে দক্ষিণ সুদানের অসংখ্য ক্রীড়াবিদ অন্তর্ভুক্ত ছিল। যার মধ্যে রোজ লোকোনিয়েন নাথিকে নামের একজন ছিল, যিনি ৮০০ মিটারে অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন।
আরো পড়ুন:
মর্যাদাপূর্ণ স্প্যানিশ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করলো রিফিউজি অলিম্পিক টিম
ভবিষ্যৎ এখন শুরু
মু সবেমাত্র তার যাত্রা শুরু করছেন; স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। এই বছর তার অলিম্পিক শিরোনামে বিশ্ব স্বর্ণ যোগ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ ১৫ থেকে ২৪ জুলাই ২০২২ এর মধ্যে ওরেগনে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হবে।
মু এমন গতি এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অভিজাত দৃশ্যে নিজেকে দ্রুত-ট্র্যাক করেছেন যে, তার সমস্ত স্বপ্ন চোখে পড়ে। তিনি বলেন, ‘যদি আমি কোনো কিছু করি, তবে সেটা ট্র্যাকের উপর হোক বা ট্র্যাকের বাইরে; এটাতে আমি সফল হবো, সেই মানসিকতা নিয়েই কাজটি সম্পন্ন করি।’
সূত্র: অলিম্পিক ডটকম