মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী; উপ পরিচালক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, খুলনা। ১৯৯৫ সালের ২৪ অগাস্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগে কর্ম জীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালের ২ জুন মেহেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জনাব মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী নিরলস কাজ করে চলেছেন। আজ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে কর্মজীবন শুরুর ২৭ বছর পূর্ণ করছেন তিনি। এ উপলক্ষ্যে অভিবাসী ডটকম এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। অভিবাসী ডটকম এর পাঠকদের সামনে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুবেল পারভেজ।
অভিবাসী ডটকম: আপনি ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এরপর চাকরি জীবন শুরু করলেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগে। একেবারে ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে কর্মজীবন শুরুর অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: সরকারি চাকরির জন্য অন্যদের মতো একই প্রক্রিয়ায় আমিও আবেদন করেছিলাম। এরপর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগে কাজের সুযোগ পাই এবং সে মোতাবেক এখানেই যোগদান করি। আমার জন্য এ অভিজ্ঞতা একেবারে নতুন ছিলো। তবে ধীরে ধীরে বুঝতে পারি, এখানে একেবারে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া কিন্তু স্বপ্নবাজ মানুষদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে হয়। বিশেষ করে এও অনুভব করলাম যে, বিদেশে গমনেচ্ছুদের নিয়ে কাজ করলে অন্যরকম তৃপ্তি পাই।
প্রশ্ন: দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ও বিদেশফেরত মানুষদের নিয়ে কাজের আগ্রহ কীভাবে ধরে রাখলেন? এখনো কী সমানভাবে সেই আগ্রহ উপলব্ধী করেন?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: আগ্রহের জায়গাটা তো অবশ্যই আছে। আর ক্লান্তিও মানুষের থাকবেই। সেই ক্লান্তি হলো যখন কখনো কখনো মানুষের জন্য কিছু করতে গিয়ে মনের মতো পাশে না দাঁড়ানো যায়, তখন একটু কষ্টবোধ থাকেই। তাছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, নতুন নতুন মানুষের সুখ, দুঃখ সম্পর্কে জানা যায়, সহমর্মিতা প্রকাশ করা যায়। এতে ভালো লাগে। এছাড়া বৈদেশিক কর্মসংস্থানটা যেহেতু অন্য দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেমন আমাদের দেশের সরকার ইচ্ছে করলেও সব সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে না। সেই দেশের সিদ্ধান্তের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে যখন পুরোপুরি আমরা আমাদের মতো কিছু পারি না, তখন মাঝেমধ্যে খারাপ লাগে। মনে হয়, আমাদের দেশের মানুষগুলোর প্রত্যাশা মতো কিছু করতে পারলে আরো ভালো হতো!
প্রশ্ন: দীর্ঘ এ পথচলায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ বেশি মোকাবিলা করেছেন?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: একজন কর্মী যখন বিদেশে যান তখন যে ধরনের সুযোগসুবিধাগুলো দেয়া তাদের প্রয়োজন, সেগুলোর তো সবটা আমরা দিতে পারি না। আমাদের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকায় এই প্রয়োজনগুলোর পুরোটা সামাল দেয়া একধরনের চ্যালেঞ্জ। কারণ মাঠপর্যায়ে আমরা তাদের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকি।
আমার অভিজ্ঞতা বলছে, বিদেশ গমনেচ্ছুদের বেশিরভাগই আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করেন। দেখা যায়, আমাদের কাছে তারা আসার আগেই আর্থিক লেনদেনগুলো তারা করে ফেলে। এরপর তারা যখন ফিঙ্গারিং বা রেজিস্ট্রেশনের জন্য আমাদের কাছে আসে তখন জানতে পারি, প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে তারা বিদেশ যাচ্ছেন। এই সিস্টেমগুলো যদি আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারতাম তাহলে ভালো হতো।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা হলো, আমাদের কাছে যে মানুষগুলো আসে, তারা সবসময় সবাই সঠিক তথ্য দিতে পারে না বা দেয়ার মতো সুযোগ ও পরিস্থিতি থাকে না। ফলে আমরাও সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যগুলো জানতে পারি না। ফলে তাদের জন্য আমরা যে নিজ থেকে কিছু কাজ করবো, তা করাটা মুশকিল হয়ে পড়ে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা কাকে টাকা দিয়েছে, কত টাকা দিয়েছে, কী কাজের ভিসা পেয়েছে, কোথায় যাবে, সে বিষয়গুলোও তারা আমাদের বলতে পারে না বা বলার মতো সুযোগ হয়তো থাকে না। কারণ যাদেরকে তারা টাকা দেয়, তারা হয়তো তাদের এসব তথ্য দিতে নিষেধ করে দেয়, ভয় দেখায়।
একারণে হয়তো তারা মনে করে, আমাদের কাছে তথ্য বললে, তাদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ কিংবা চাকরি করার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যাবে। ফলে আমরাও পড়ি উভয় সংকটে। কারণ আমরা যাদের জন্য কাজ করবো, তারাই যদি সঠিক তথ্য না ও সহযোগিতা না কওে, তাহলে উপযুক্ত পদক্ষেপ কীভাবে নেবো? বিষয়টি তাই খুবই জটিল ও চ্যালেঞ্জের।
প্রশ্ন: জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের অধীনে যে কাজগুলো করছেন?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: প্রথমত, আমরা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ধারণা ও তথ্য প্রদানের পাশাপাশি এ বিষয়ক প্রচার-প্রচারণার কাজ করি। ভিসা পাওয়ার পর বিদেশগামী কর্মীর বায়োমেট্রিক ও অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এর উদ্দেশ্যে হলো বিদেশগামীদের পূর্ণাঙ্গ একটি ডাটা ব্যাংক তৈরী করা। এর ফলে সামগ্রিক অভিবাসন চিত্র ও বিদেশগামী জনগোষ্ঠীর তথ্য পরিস্কারভাবে জানা যাবে।
এছাড়া ভিসা পাওয়ার পর সেই ভিসা সঠিক কিনা, তা কোন ধরনের ভিসা এসব যাচাই বাছাই করি। এখান থেকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়। অন্য কারো বা গলা কাটা পাসপোর্টের মাধ্যমে যেন কেউ বিদেশ যেতে না পারে, তা নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। বিদেশফেরত কিংবা বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির প্রতিবন্ধী সন্তানদের সহযোগিতা এবং তাদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এককথায় প্রবাসী ও দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের অধিকার সংরক্ষণে মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় অফিস হিসেবে আমরা কাজ করি।
প্রশ্ন: কর্মসংস্থানের পরিসর বাড়ার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের লোকবল পর্যাপ্ত কিনা?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালে যে জনবল কাঠামো দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা করেছিলো তুলনামূলকভাবে এখন সে পরিসর অনেক বেড়ে গেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সেই ’৭৬ সালে যে জনবল কাঠামো ছিলো এখনো সেই জনবল দিয়েই আমাদের অফিসগুলো চলছে। অথচ তখন বিদেশে যেত কয়েক হাজার বা বড়জোর লাখ খানেক মানুষ আর এখন সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট থেকে দশ লাখে। এইসব মানুষ এবং তাদের পরিবারের কল্যাণ, প্রচার-প্রচারণাসহ বহুবিধ কাজ সামাল দেয়ার জন্য আরো আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনসংখ্যক জনবল নিয়োগ দেয়া উচিৎ। আশার কথা হলো, সরকার নানাভাবে এসব বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন: পুরো পৃথিবী এখন প্রযুক্তিনির্ভর। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষেত্রে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসগুলো কতটা এগিয়েছে বলে মনে করেন?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: এখন তো প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া কোনো কিছুই কল্পনা করা যায় না। আমাদেরকেও প্রতিনিয়ত যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করতে হয়। এখন আইটিনির্ভর কাজ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। কিন্তু এইসব কাজের জন্য যে ধরনের অভিজ্ঞ ও দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন সে সংখ্যা একেবারেই নগন্য। বয়স্ক মানুষেরা এ বিষয়গুলোতে অতোটা দক্ষ নয়। ফলে এই মানুষগুলোর পক্ষে আধুনিক কাজের সঙ্গে সংগতি রেখে কাজ করানোটা একটু কঠিন হয়ে যায়।
প্রশ্ন: খুলনা অঞ্চলে দুই মেয়াদে প্রায় আট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের মানুষদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা বা গতি প্রকৃতি কেমন বলে আপনার মনে হয়?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: অঞ্চলভেদে অবশ্যই পার্থক্য আছে। কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের মানুষদের মধ্যে দেশের বাইরে তো বটেই, দেশের ভেতরেও এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অভিবাসনের যে মানসিক প্রবণতা আছে, সেটা এই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে কম। তবে এই প্রবণতা ধীরে ধীরে এখন বাড়ছে। কারণ খুলনাঞ্চলে একটা সময়ে শিল্প কারখানা ছিলো, এতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিলো। এখন অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, কাজের সুযোগ কমে গেছে। ফলে মানুষজন কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী হচ্ছে।
প্রশ্ন: এর মধ্যে নারী পুরুষের তুলনামূলক আগ্রহ কেমন?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: আনুপাতিক হারে পুরুষের চেয়ে নারীদের আগ্রহ বেশি।
প্রশ্ন: সৌদি আরব কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের মতো দেশগুলোতে নারী অভিবাসী কর্মীদের নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব কিছু জেনেও নারী কর্মীরা নিয়ম মেনে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কতোটা সচেতন বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: সমস্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে এখনো নারীরা যে পুরোপুরি আগ্রহী তা নয়। তবে তাদেরকে বোঝাতে পারলে বিষয়টা তারা বোঝে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা আমাদের কাছে আসার আগেই তাদেরকে এমনভাবে মগজধোলাই দেয়া হয় যে, উল্টো আমাদের কথাকেই তারা অবিশ্বাস করে। তারপরও আমরা বোঝাই যে, তারা যদি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং এক মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাহলে অনেকগুলো বিষয় সহজ হয়ে যাবে।
এক মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ শুধু বিদেশে পাঠানোর জন্যই নয়, বিশেষ করে নারীরা বিদেশে বাসা বাড়িতে কাজ করেন, তারা যদি আবাসিক প্রশিক্ষণের জন্য এক মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে, তাহলে বিদেশে গিয়ে মানিয়ে নেয়াটা সহজ হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, নতুন পরিবেশে যেন তারা মানিয়ে নিতে পারে। তারপর যেখানে তারা যাচ্ছে, সেখানে যেসব গৃহস্থালি জিনিস ব্যবহার করবে, সেগুলো সম্পর্কে ধারণা পায়। এর ফলে ভিনদেশে নিজেরা নিরাপদ বোধও করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের এখানে আসার আগেই তাদের বেশিরভাগই অন্যদের কথায় নির্ভরতা খুঁজে পায়, তাদের কথাকেই বেশি বিশ্বাস খুঁজে পায়। যেকারণে বিদেশে গেলে বাজে পরিস্থিতি সামাল দেয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন: দালাল দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে প্রধান কৌশল কী হতে পারে? দালাল দৌরাত্ম্য কমানো আদৌ সম্ভব কিনা?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: পুরোপুরি সম্ভব না হলেও অনেকটা সম্ভব। পুরোপুরি সম্ভব নয় কারণ, এজেন্সিগুলো ঢাকাকেন্দ্রিক। তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করাটা কঠিনই বটে। এদের কোনো শাখা অফিসও আঞ্চলিকভাবে নেই। শাখা অফিস স্থাপনের জন্য ২০১৩ সালের অভিবাসন আইনে বলা আছে। কিন্তু সরকার তো তাদের জোর করতে পারে না। লাভজনক মনে করলে তারা এমনিতেই করবে।
সেক্ষেত্রে আমরা বলি, স্বীকৃত এজেন্ট থাকতে পারে, দালাল না বলে তাদেরকে স্বীকৃত এজেন্টের মর্যাদা দিলে স্বচ্ছভাবে কাজের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এর ফলে তাদের দায়বদ্ধতা থাকবে। আমাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি আলাপ আলোচনা থাকলে কোনো কিছু ধামাচাপা বা গোপন করার সুযোগ থাকবে না। এখন যেটা হচ্ছে এই লোকগুলোই আছে কিন্তু তারা ইনভিজিবল। অথচ এখন কোনো সমস্যা হলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে জানালে তারা বলে, আমরা তাদের চিনি না, তারা আমাদের কোনো টাকা দেয়নি। দালালদের স্বীকৃত এজেন্টের মর্যাদা দিলে এই অজুহাতগুলো দেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: কোভিড-১৯ এর মতো ভয়াবহ একটা কাল অতিক্রম করেছি আমরা। কোভিডের পর মোটা দাগে অনেক কিছুরই পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। অভিবাসন খাতে এমন কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে যা কোভিডের আগে ছিলো না?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: করোনার সময় যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো, তার মধ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান অবশ্যই অন্যতম। কোভিড পরবর্তী সময়ে পৃথিবী নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নতুন করে লোকজন বিদেশ যাচ্ছে। পুরো পরিস্থিতি দেখে মানুষ অনুধাবন করছে, আরো বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সঞ্চয় করতে হবে, বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে হবে। তারা এও বুঝতে সক্ষম হয়েছে, টাকা পয়সা সঞ্চয় না করলে বৈশ্বিক কোনো সংকটে দেশে এসে শুন্য হাতে পড়ে থাকলে নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয়।
প্রশ্ন: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে। বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটই বদলে গেছে। বাংলাদেশ সরকারও রেমিটেন্স বেশি আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করছে। রেমিটেন্সের প্রবাহ ঠিক রাখতে গেলে এখানকার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ আপনারা বাস্তবায়ন করছেন কি?
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা সেটা করছি। বিদেশে যাওয়ার আগে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যে প্রি-ডিপারচার প্রশিক্ষণ হয়, সেখানে আমরা প্রত্যেকটা লোককে বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা দিই। তাদেরকে বলি যে, আপনারা হুন্ডির মাধ্যমে বা অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাবেন না। অবশ্যই বৈধভাবে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাবেন। এটা করলে সরকার সুবিধা পাবে আপনারাও বাড়তি প্রণোদনা পাবেন, যেকোনো বিষয়ে সরকার আপনার পাশে থাকবে এবং আপনার প্রেরিত অর্থ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়।
এছাড়া আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সরকার এখন কারিগরি প্রশিক্ষণের ওপর অনেক বেশি জোর দিচ্ছে। কারণ আমরা জানি কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন মানুষ দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে তা নিজের এবং দেশের জন্য অনেক বেশি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। একইসঙ্গে অভিবাসন নিরাপদ হয়, অধিকারও সংরক্ষিত হয়। আর দক্ষ মানুষ বিদেশে গেলে রেমিটেন্সের প্রবাহ এমনিতেই বেড়ে যায়।
অভিবাসী ডটকম: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী: আপনাকেও ধন্যবাদ।