তেরে দেস হোমস; শিশু অধিকার সুরক্ষাবিষয়ক সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুরু করে বিগত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত যুদ্ধ, সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত শিশুদের জীবন ও অধিকার রক্ষায় কাজ করছে তেরে দেস হোমস। মিয়ানমারে সংগঠিত নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে শুরু থেকে কাজ করছে সংগঠনটি।
তেরে দেস হোমস-এ চাইল্ড প্রোটেকশন প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন অর্জুন কুমার ধর। তার কর্মস্থল কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সংলগ্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প। রোহিঙ্গা শিশুদের মনোসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অর্জুন কুমারের।
সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিবাসী ডটকম এর। ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শিশুদের মানসিক বিকাশে কীভাবে তেরে দেস হোমস কাজ করছে, বর্তমানে শিশুরা কী অবস্থার মধ্যে আছে, কাজ করতে গিয়ে সংস্থাটি কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে-এরকম নানা প্রসঙ্গে তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অভিবাসী ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক রুবেল পারভেজ।
অভিবাসী ডটকম : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ শুরুর অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
অর্জুন কুমার ধর : শুরুতে যখন ক্যাম্পে কাজ শুরু করি, তখন ওখানে তেমন কোনো কিছুই ছিলো না। মাত্রই কাজ শুরু হয়েছে, নেই কোনো আশ্রয় শিবির, নেই অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা এগিয়ে আসি এবং কাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিলো: ক্যাম্পের ভেতর শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা।
অভিবাসী ডটকম : এর মধ্যে কী কী বিষয় অন্তর্ভূক্ত ছিলো?
অর্জুন কুমার ধর : আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাসমূহের অন্যতম ছিলো ক্যাম্পে শিশুদের খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে শিশুরা তাদের নিকট অতীতের ভয়াবহ স্মৃতি কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। বর্তমানে এই জায়গাটিকে মাল্টি পারপাস কমিউনিটি সেন্টার নামে অভিহিত করা হচ্ছে। যেটাকে রোহিঙ্গারা শান্তিখানা নামেই চিনে।
আমাদের এই বিষয়টিকে তারা খুব সহজেই গ্রহণ করেছিলো। যেহেতু তাদের সন্তানদের খেলাধুলার জায়গা ছিলো না, হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছিল অহরহ, দুর্ঘটনা ঘটছিলো-সেরকম পরিস্থিতিতে একটা নিরাপদ স্থান হিসেবে তারা আমাদের তৈরিকৃত জায়গাটি নিশ্চিন্ত ও ইতিবাচকভাবেই বেছে নিয়েছিলো।
অভিবাসী ডটকম : রোহিঙ্গা শিশুদের মনোসামাজিক উন্নয়নে আপনারা কাজ করেন। এক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হয়েছে আপনাদের?
অর্জুন কুমার ধর : রোহিঙ্গাদের জন্য বিষয়টি নতুন হওয়ায় শুরুতে শিশুদের মা-বাবাকে বোঝানো অনেক কষ্টসাধ্য ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে থাকে। পরিস্থিতি এতটাই বদলে যায় যে, তারা নিজ থেকেই তাদের শিশুদেরকে আমাদের কাছে দিয়ে যায়। এমনও হয়েছে, আমরা হয়তো ৩০ জন শিশু সঙ্গে একটি কক্ষে স্ট্র্যাকচারড সেশন করছি, তখন পরবর্তী সেশনের আরো ৫০ জন আগে থেকেই বাইরে এসে অপেক্ষা করছে। মোটকথা, তাদের মধ্যে অংশগ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে। শিশুরা নিজ থেকেই অনুভব করে এ সেশনে তাদের আসতে হবে।
অভিবাসী ডটকম : ক্যাম্পে এ ধরনের সেবা কি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ দেয়? দিলে সমন্বয় কীভাবে করা হয়?
অর্জুন কুমার ধর : আমরা শুরু করার পর অনেক প্রতিষ্ঠান এসেছে এবং তারাও শিশুবান্ধব কেন্দ্র পরিচালনা করছে। আর হ্যাঁ, এটা করতে গিয়ে যেটা হয়েছিলো, তাহলো রিসোর্সের প্রোপার ইউটিলাইজেশনে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়। মাঝখানে এমনটা ঘটেছে। তবে এখন আবার সবকিছু সমন্বিত প্রয়াসে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোন এজেন্সি কোন ব্লকে কাজ করবে, কে কোন ফ্যাসিলিটিটা সরবরাহ করবে, এগুলো একটি জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান এর মাধ্যমে ঠিক করে নেয়া হয়।
অভিবাসী ডটকম : শিশুদের কোন কোন জায়গাগুলো আপনারা বেশি ফোকাস দিচ্ছেন?
অর্জুন কুমার ধর : আমাদের মূল ফোকাসটা হলো রোহিঙ্গা শিশুদের মনোসামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করা, শোষণ-নির্যাতন-সহিংসতা ও অবহেলার শিকার শিশুদের জন্য সামগ্রিম কেইস ম্যানেজমেন্ট এবং কমিউনিটিভিত্তিক শিশু সুরক্ষার ভিত তৈরী করা।
ভেঙে পড়া একটি জনগোষ্ঠীর এগিয়ে চলার পথে সবচেয়ে জরুরী মানসিক সামর্থ্য। একটি শিশু যখন তার চোখের সামনে ঘরবাড়ি পুড়ে যেতে দেখেছে, বাবা মাকে হত্যার শিকার হতে দেখেছে, তাকে আমরা যত কিছুই দিই না কেনো, সে কিন্তু তার অতীতের ওই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারে না। আমরা তো চাইলেই তাকে তার সেই পুরাতন ঘরটা তৈরী করে দিতে পারবো না।
কিন্তু আমাদের কথা হলো, আমরা তাকে তার আগের ঘরটা তৈরি করে দিতে না পারলেও, , আমরা এমন এক মানসিক প্রশান্তির পথ-পরিবেশ তৈরীর চেষ্টা করি, যেখানে শিশুটি খুব সহজেই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
যে শিশুটির সামনে তার বাবা মাকে হত্যা করা হয়েছে, যে শিশুটি বাংলাদেশে আসার সময় পথে অজস্র লাশ দেখতে দেখতে এসেছে, হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছে, তার জন্য অন্যান্য সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রয়োজন, তার মানসিক স্বস্তি, ভয়হীন পরিবেশ। যেন সে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যেতে পারে, খাপ খাইয়ে নিতে পারে নিজেকে।
অভিবাসী ডটকম : খাপ খাইয়ের নেয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে তাদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করেন?
অর্জুন কুমার ধর : মোটাদাগে দুই ধরনের কোপিং মেকানিজম হতে পারে-ইতিবাচক ও নেতিবাচক। খারাপ পরিস্থিতি ভুলে থাকার জন্য কেউ কেউ মাদকাসক্ত হতে পারে, এটা নেতিবাচক কোপিং। বিপরীতে কেউ কেউ ইতিবাচকভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে।
আমরা মূলত ইতিবাচকভাবে শিশুদের কোপ করার চেষ্টা করি। খেলাধুলা আর আনন্দ করে যেন তারা পেছনের নেতিবাচক স্মৃতি ভুলে সামনে এগোতে পারে, সে চেষ্টা করা হয়। আমরা মূলত মনোসামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে থাকি। কিন্তু অ্যাডভান্স লেভেলের কাউন্সেলিং করাই না। এক্ষেত্রে যদি কোনো শিশু ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাকে রেফারেলের ব্যবস্থা করা হয়।
অভিবাসী ডটকম : বড়দের তুলনায় শিশুদেরকে কাউন্সেলিং করার ব্যাপারটিতো জটিলও বটে…
অর্জুন কুমার ধর : আসলে কাউন্সেলিং বলতে যেটা বোঝায়, আমরা সেটা করি না।আমরা শিশুদেরকে মনোসামাজিক সেবা বা এরকম কঠিন কোন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি না। মূলত আমরা শুধু ওদেরকে নির্ধারিত জায়গা পর্যন্ত আনার ব্যবস্থা করি।
এরপর এখানে এমন একটি পরিবেশ আগে থেকেই তৈরী করা থাকে, যেখানে ওরা আসার পর ওদের পছন্দের পেয়ার (সঙ্গী) বেছে নিতে পারে। ঘরের মধ্যে থাকলে তো সে একা থাকতো। এখানে এসে সে পেয়ারের সঙ্গে মিশবে, গল্প করবে। এর মধ্য দিয়ে ওর মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক তৈরী হবে, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে উঠবে. সে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশান্বিত বোধ করবে।
এভাবেই সে যে দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এসেছে, সেগুলো আস্তে আস্তে ভুলে যেতে থাকবে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এতে কোনো প্রকার জোরারোপের জায়গা নেই।
অভিবাসী ডটকম : এমন কোনো শিশুর মুখোমুখি হয়েছেন, যার গল্প কিংবা পরিস্থিতি আপনাকে এখনো ভাবায়?
অর্জুন কুমার ধর : হ্যাঁ, শুরুর দিকের একটি ছেলে শিশুর কথা এখনো মনে পড়ে। যখন আমরা কাজ শুরু করি তখন একটি ছেলেকে পেয়েছিলাম, যে কিনা স্বাভাবিকের চেয়েও খুব ধীরে ধীরে ফিসফিসিয়ে কথা বলতো। তার শরীরে দুটি কাটা দাগ ছিলো।
মূলত মিয়ানমারে তাদের ওপর এমন নিপীড়ন চালানো হয়েছিলো যে, শিশুটি রীতিমত ট্রমাটিক হয়ে পড়েছিলো। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছিলো যে, সে জোরে শব্দ করে কথা বলাটাই ভুলে গিয়েছিলো। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা তাকে আমাদের শিশুবান্ধব কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত করলাম। এরপর থেকে অন্যদের সঙ্গে মিশতে মিশতে সে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
আরেকটা ছেলেকে নিয়ে এরকম সাকসেস স্টোরি আছে যে, সে একা থাকতো, কাউকে দেখামাত্রই ভয় পেতো, কারো সঙ্গে মিশতো না। এরপর আমাদের এখানে আসার পর সেও পেছনের বিভৎসতার কথা ভুলে যেতে থাকে।
আসলে ফ্যাসিলিটেটর যে সময়টুকু তার সঙ্গে কাটাচ্ছে, এই সময়টাই তার জন্য একধরনের কাউন্সেলিং। যাকে একাডেমিকভাবে নন-ফরমাল কাউন্সেলিং বলা হয়। আমরা কোনোভাবেই শিশুদের বলি না যে, আমরা তাদের মনোসামাজিক সেবা দিচ্ছি।
শিশুবান্ধব কেন্দ্রে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক যে সেশনগুলো করানো হয়, ওগুলোর মাধ্যমেই তাদের প্রয়োজনীয় সেবাটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। অবশ্য ১৬ বছরের ওপর যারা আছে, তাদেরকে নিয়ে অনেকটা অ্যাডভান্সড কাউন্সেলিংয়ের মতই একটা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে, যেটা ব্যক্তির জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ইস্যু, যা তাদের মানসিক শান্তিকে বাধাগ্রস্থ করে, সেটার উপর ফোকাস করে। প্রবলেম ম্যানেজমেন্ট প্লাস নামে এই সেবার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মডিউল ও নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয়। বিশেষায়িত কাউন্সেলিং দরকার হলে আমরা সংশ্লিষ্ট জায়গায় রেফার করি।
অভিবাসী ডটকম : রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয়টি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে?
অর্জুন কুমার ধর : আসলে অনেক কিছু করার চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যেমন বাল্য বিবাহ রোধ। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সচেতনতা তৈরি ছাড়া আসলে এটা রোধ করা সম্ভব না। আমরা সেটাই গুরুত্ব দিয়ে করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এতকিছুর পরও বাল্যবিবাহ থামানোটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।
আমাদের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশেষ করে শুক্র-শনিবার যখন এনজি সংস্থার কর্মীদের উপস্থিতি কম থাকে, তখন তারা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে গোপনে বিয়েগুলো করিয়ে নেয়। এটা থামানো বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতগুলো বাল্যবিবাহ হলো, তারও কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
যখন তাদের সন্তান হয় তখন সন্তানের নাম নিবন্ধনের জন্য আসার পরই টের পাওয়া যায়। তখন তো আর করার কিছু থাকে না। কারণ বাল্যবিবাহের শিকার শিশুটি সদ্যজাত সন্তান, মাতৃত্বকাল-এসব নিয়ে নিজেই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে থাকে। এসময় তাই আমাদেরকে অপরিণত মাতৃত্বকালীন ঝুঁকিসহ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করতে হয়।
অভিবাসী ডটকম : বাল্যবিবাহের এই প্রবণতা কেনো এতো বেশি মনে হয়?
অর্জুন কুমার ধর : প্রথমত. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাল্যবিবাহের আনুপাতিক হারটা অনেক বেশি। স্বাভাবিকভাবেই একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে তারা তাড়াতাড়ি কন্যাদায় সারার জন্য এটি করে থাকে। তারা পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ওতো বেশি আগ্রহী নয়। ফলে তাদেরকে পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি বোঝানো খুবই কঠিন।
ক্যাম্পে রেশন দেয়ার দেয়ার নিয়ম হলো, যতো মুখ ততো গুনন খাবার। অর্থাৎ একটি পরিবারের একজন সদস্যের জন্য যদি ১৫ কেজি চাল বরাদ্দ থাকে, তাহলে শিশু ও বৃদ্ধ-সবাই একই হারে সেই বরাদ্দ পাবে। এর ফলে কারো যদি পাঁচটি সন্তান থাকে, তাহলে তারাও একইহারে খাবার বা অন্যান্য সুবিধা বেশি পাবে।
ফলে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে তারা কথা বলতে চায় না। আবার জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়েও তাদের মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণ গুজব ও কুসংস্কার রয়েছে। এটাও একটা বড় কারণ। তবে আশার কথা হচ্ছে তরুণদের মধ্যে এই ধারার পরিবর্তন হচ্ছে এবং অনেকে দীর্ঘমেয়াদী জন্মবিরতিকরণ সেবাও নিচ্ছে।
অভিবাসী ডটকম : এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা চোখে পড়ে, যা রোহিঙ্গা শিশুদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে?
অর্জুন কুমার ধর : ক্যাম্পে কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা কিছু খারাপ চর্চা করছে। তাহলো: শিশুদেরকে নিয়ে কিছু করতে গিয়ে তারা তাদেরকে আকৃষ্ট করতে খাবার ও টাকা সরবরাহ করে। এমনকি একটি সেশনে অংশগ্রহণের জন্যও নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়া হয়। আমরা শিশুদেরকে এরকম কিছুই দিই না বা লেনদেন করি না।
এক্ষেত্রে তখন শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়। তখন টাকা-খাবার ছাড়াও যে মানসিক শান্তি ও সুস্থতার জন্যও তাদের একটা স্পেস দরকার, সেটা তাদের বুঝিয়ে বলতে হয়। আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং এর মাধ্যমে ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা তৈরী করতে পেরেছি।
অভিবাসী ডটকম : এককথায়, শিশুদের নিয়ে তেরে দেস হোমস এর সফলতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অর্জুন কুমার ধর : মজার ব্যাপার হলো, আমাদের কাজের সফলতা চাক্ষুষ দৃশ্যমান কিংবা পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণযোগ্য নয়। তবে, এককথায় যদি উত্তর দিতে হয়, তাহলে বলবো, শুরুতে আমরা যখন ক্যাম্পে কাজ করতে যেতাম, তখন আমাদের দেখে শিশুরা ভয়ে দৌড়ে পালাতো কিংবা ঘরে ঢুকে যেতো। আর এখন আমাদেরকে দেখে ওরা দৌড়ে কাছে চলে আসে। এটাই আমাদের অর্জন বা সফলতা।
অভিবাসী ডটকম : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্জুন কুমার ধর : আপনাকেও।