রবিবার, 16 মার্চ, 2025

মানবাধিকার রক্ষা নয়, অভিবাসী বন্টন নিয়েই বেশি চিন্তিত ইউরোপ

ইতালি, সাইপ্রাস, গ্রিস, মাল্টা ও স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইউরোপীয় দেশগুলিতে অভিবাসী বন্টন নিয়ে অনেক বেশি মনোযোগী। ফলে দেশগুলি ‘সংহতি’র বিষয়ে নানারকম তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাপার হলো, তাদের উদ্বেগ ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট খাদ্য সংকটের জন্য হুমকিপ্রাপ্ত আফ্রিকানদের জন্য অতোটা প্রসারিত হয়নি।

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট খাদ্য সংকটের কারণে আফ্রিকা থেকে বিতাড়িত কিংবা উদ্বাস্তু হয়েছে অনেক মানুষ। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি অভিবাসীদের আগমন নিয়ে ভয়ে আছে। ফলে দেশগুলি ‘সংহতিমূলক’ কিছু করার জন্য একে অপরকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। যা ইউরোপীয় দেশগুলিতে অভিবাসীদের ভাগাভাগির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

সপ্তাহান্তে ইতালি, সাইপ্রাস, গ্রিস, মাল্টা এবং স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ভেনিসে দুই দিনের একটা আলোচনা শেষ করেছেন। তাদের উদ্বেগের কারণ হলো- রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানি অবরোধের ফলে আফ্রিকা থেকে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর দক্ষিণ ইউরোপে আগমন ঘটতে পারে।

ইউরোপীয়রা অভিবাসীদের যত্ন নেওয়াটাকে বর্তমানে বোঝা মনে করছে। এবং এর জন্য তাদের এই দেশগুলিতে সমানভাবে বন্টন করে নেওয়ার জন্য একটি ‘ভালো উপায়’ এর কথা চিন্তা করছেন। সাইপ্রাসের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী নিকোস নুরিস সাংবাদিকদের বলেছেন যে,‘অভিবাসনের বিষয়ে একটি শক্তিশালী ও সাধারণ ইইউ নীতি প্রয়োজন। সংহতি কেবল একটি স্লোগান নয়, যেটা কিনা কোনো কিছুর জন্য শুধু অকার্যকর হবে না।’

আরো পড়ুন:

বেলারুশ-পোল্যান্ড অভিবাসী সংকট: ইউরোপীয় স্বপ্ন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ডলারে!

অতীতের ইইউ নীতিগুলির আওতায় যে সদস্য দেশগুলি রয়েছে যেমন- ইতালি, গ্রিস এবং অন্যান্য দক্ষিণ উপকূলে অবতরণকারী কয়েক হাজার অভিবাসীকে গ্রহণের যে প্রস্তাব দিয়েছিলো, তা পুরো অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয়েছে। আবার এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ এগিয়ে যায়নি। অন্যরা যদিও চোরাকারবারীদের অপ্রয়োজনীয় নৌকা থেকে উদ্ধার করা কয়েক লাখ অভিবাসীর মধ্য থেকে সামান্য সংখ্যক গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তারাও সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। নুসিন বলেন, ‘আমাদের মনে ‘সংহতি’র বিষয়টি স্বেচ্ছায় আসবে না, যদি না আমরা সেটা ধারণ করি।’

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সাইপ্রাসে বেশ কয়েক বছর ধরে অভিবাসী নেওয়ার পর, এখন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপের দেশটির জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থী নিয়ে গঠিত।

যদিও এই বৈঠকে লক্ষাধিক ইউক্রেনীয় শরণার্থী বিষয়টি সম্বোধন করা হয়নি; যারা কিনা সম্প্রতি পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং রোমানিয়ার মতো উত্তর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে এসেছে। এছাড়া এ বৈঠকে আফ্রিকার দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রোধ করার জন্য নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়নি। বরং এই আলোচনার মধ্যে ইউক্রেনের সংঘাতের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার তীব্রতা রয়েছে। কারণ ইউক্রেনের সংঘাত অব্যাহত থাকলে আফ্রিকান দেশগুলির জন্য জরুরী সহায়তা সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হতে পারে।

আফ্রিকায় খরা এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কার মতো অভিবাসন সমস্যাটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি যুদ্ধের আগে সোমালিয়া, মিশর এবং অন্যান্য দরিদ্র দেশগুলিতে ইউক্রেনীয় শস্য সরবরাহ করা অসম্ভব। যে কারণে ইতোমধ্যেই উদ্বেগজনকভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সাহেল, সাহারা মরুভূমির সংলগ্ন আফ্রিকার অংশে আনুমানিক ১৮ মিলিয়ন মানুষ তীব্র ক্ষুধা যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছে। কেননা কৃষকরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভালো ফসল ফলাতে পারেনি। তাদের ফসলের বেশ খারাপ মৌসুম কাটছে।

আরো পড়ুন:

ইউরোপের জন্য লজ্জার

ইতালির অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী লুসিয়ানা ল্যামোরগেস ইউক্রেনে শস্য অবরোধকে ইইউ এর সদস্যদের মধ্যে ‘অভিবাসীদের বিতরণের পর্যাপ্ত প্রক্রিয়া’ বিকাশের আরেকটি কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। অভিবাসীদের ক্ষুধার দিকে মনোযোগ না দিয়ে বরং তিনি এমন দেশগুলির সঙ্গে ‘আরো প্রত্যাবাসন চুক্তি’ করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন, যেসব দেশের লোকেরা ইউরোপে একটি উন্নত জীবন চাইছে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এই লোকেরা তাদের আশ্রয়ের চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ তারা দারিদ্রতা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো; যুদ্ধ বা নিপীড়ন থেকে নয়।

তিউনিসিয়ার সঙ্গে ইতালির একটি কার্যকর প্রত্যাবাসন চুক্তি রয়েছে। তবে সেটা আফ্রিকা বা এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে নয়। যাদের নাগরিকরা দক্ষিণ ইউরোপীয় উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করার জন্য চোরাকারবারীদের নৌকায় উঠেছিলো। ফলস্বরূপ, তাদের আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলেও অনেক অভিবাসী ইতালিতে থেকে যায়। এবং তারা অবৈধ চাকরি কিংবা ভিক্ষার আশ্রয় নেয়।

আরো পড়ুন:

ভূমধ্যসাগরের অভিবাসীদের জন্য ইউরোপ দায়বদ্ধ

বিশ্লেষকরা বলেছেন, আফ্রিকার খাদ্য সঙ্কট অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন চাওয়া ইউরোপীয় দেশগুলির জন্য একটি কণ্টকাকীর্ণ সমস্যা তৈরি করবে। গ্রিসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিবাসনের জন্য আরো আইনি উপায় বের করার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। মন্ত্রী নটিস মিতারাচি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউরোপে কারা বসবাস করবে, সে সিদ্ধান্ত আমরা চোরাকারবারিদের নিতে দিতে পারি না।’

সূত্র: দ্য আরব উইকলি

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা