মঙ্গলবার, 28 জানুয়ারি, 2025

এতকিছু করার পরও জুটলো না স্থায়ী নাগরিকত্বের মর্যাদা!

প্রায় ৭০ হাজার ডলার খরচ করে ছয় ছয়বার ভিসা, ছয়বার অভিবাসী এজেন্টদের বদল ও চারটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পরও শ্রীলংকান নাগরিক মো. ফারশান মোহামেদ ফাইরুস এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নিজের অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে পারেননি। বারবার আবেদন করা স্বত্বেও তাকে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, এখনো তিনি অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি।

শিক্ষার্থী হিসেবে ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর থেকে ফাইরুস আট বছর পর্যন্ত সেবামূলক কাজ করেছেন, নিউ সাউথ ওয়েলসে বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে।

দীর্ঘ সময় ধরে অস্থায়ী কাজের ভিসায় কাজ করতে গিয়ে ফাইরুস বর্ণবাদ, পারিশ্রমিক চুরি, অন্য অভিবাসী কর্তৃক বৈষম্যমূলক আচরণ, যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার মতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।

একজন এজেন্ট তাকে বলেছিলো, যদি তিনি ২০ হাজার ডলার তাকে দেন তাহলে সে তাকে একটি নিরাপদ কাজে নিয়োগ দিতে পারবে। যা তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ‘প্রত্যেকেই এই রকম দালালদের কাছ থেকে নগদ অর্থের বিনিময়ে কোনো না কোনো টোপ পায়’-বলেন ফাইরুস। ‘মানুষ জানেই না পর্দার অন্তরালে আসলে কী ঘটছে।’

গত অর্থ বছরে অস্ট্রেলিয়ায় নিবন্ধিত দালালদের বিরুদ্ধে ২৫২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি ঘটনাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছিলো।

এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে নিয়োগদাতা ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, চলতি অর্থ বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২০ হাজার ২১৯ জন সক্রিয় স্পন্সরদের মধ্যে ২২৬ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।

মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারস সেন্টার এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাট কুনকেল বলেছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে ফাইরুসের অবস্থা মোটেও অবাক করার কিছু নয়।

‘যাদের পাসপোর্ট ও বেতন চেক দুটোই তাদের নিয়োগকর্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাদের পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ সত্যিই অসুবিধাজনক হতে পারে।’

ভিক্টোরিয়ায় আগে যেখানে ফাইরুস কাজ করতেন, সেখানে তিনি তিন বছরের কাজের চুক্তি পূরণ করেছেন। এরপর ব্যবসাটি যখন অন্যদের মালিকানায় যায়, তখন নতুন মালিক তাকে স্পন্সর দিতে অনীহা প্রকাশ করে। ফাইরুস জানিয়েছেন, তাকে চাকুরিচ্যূত করা হয়েছিলো। এরকম নানা কারণ শেষ পর্যন্ত তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে।

আরো পড়ুন: রেকর্ডসংখ্যক স্থায়ী অভিবাসী নেয়ার পরিকল্পনা অস্ট্রেলিয়ার

উপায় না পেয়ে ফাইরুস তার ইউনিয়ন ও মাইগ্রেশন এজেন্টস রেজিস্ট্রেশন অথরিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এরপর অন্য আরেকজন নিয়োগকর্তার কাছ থেকেও প্রত্যাশিত ভিসা নিতে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর আবার ২০১৮ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, অন্য অভিবাসীরা ভয়ে শঙ্কিত থাকে।

কুনকেল জানিয়েছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় অভিবাসীদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা ও তাদের মামলা চালানোটা খুবই কঠিন। ‘নানা কারণে তারা নিয়োগকর্তার জালে বন্দি। যদি তাদের কাজ চলে যায়, তাহলে নতুন স্পন্সর খোঁজা অথবা দেশ ছাড়ার জন্য তাদের হাতে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়’-বলেন তিনি।

আরো পড়ুন:অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের অনুমতি মিলছে না হাজারো দক্ষ আভিবাসীর

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিবাসন মন্ত্রী এন্ড্রু গিলস সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ক্যানবেরায় বৈঠক করেছেন। এরপর তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সমস্যার সমাধানে তারা অগ্রগতি সাধন করেছেন।

ফাইরুস স্পষ্ট ও দৃঢ়তার সঙ্গে সরকারের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘যদি আমার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা নাই থাকে, তাহলে কেনো আমাকে এসব ওয়ার্ক ভিসা দিয়ে যাচ্ছে?… আর কত ভিসা আর কতো বছরের অপেক্ষা?’

সূত্র: গার্ডিয়ান

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা