প্রতি বছর লাখ লাখ বাংলাদেশি ঝড়, খরা, বন্যা, সাইক্লোনের মতো সব অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়া ও নদী ভাঙ্গনের কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো মানুষ বাস্তুচ্যূত হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা উপকূলীয় ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এবং যাদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই নাজুক, তারা পাশের দেশ ভারত অথবা উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজের সন্ধানে ছুটে যায়। কিন্তু এর চেয়েও বহু সংখ্যক মানুষ আছেন, যারা নিজ দেশের মধ্যে থাকা শহরগুলিতে অর্থ উপার্জন ও বসবাসের উদ্দেশে যাত্রা করে, এদের বলা হচ্ছে অভ্যন্তরীন বা স্থানীয় অভিবাসী।
গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক ২০২০ এর তথ্য মতে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভয়ঙ্কর প্রতিকুল আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে ছিল। তবে মৃত্যুর হিসাবে বাংলাদেশের চেয়ে শুধু মিয়ানমার ও ফিলিপাইনই এগিয়ে রয়েছে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছিল, আবহাওয়াগত কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ ১৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন বাংলাদেশি মানুষ অভিবাসী হতে বাধ্য হবে। নিজ গ্রাম থেকে শহরে আসার ফলে একজন স্থানীয় অভিবাসী যেসব সংকটের মধ্যে পড়তে পারে: সেসবের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, কম রোজগারের কারণে পুষ্টিহীনতা ও দুষণের শিকার।
বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্যদের কথার উপর নির্ভর করে অধিক পারিশ্রমিক ও নতুন চাকরির সন্ধানে বেশিরভাগ শ্রমিক গ্রাম থেকে শহরে আসে। তারা ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গেও যোগ দেয় অনেক কম। এছাড়া আবহাওয়া পরিবার্তন জনিত কারণ এবং একারনেই যে তারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে সে সম্পর্কেও তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অজ্ঞতার মধ্যে থাকে। শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশই শ্রম ইস্যুর সঙ্গে আবহাওয়ার প্রভাবজনিত কারণে ক্ষতির মুখে পড়া শ্রমিকদের মেলাতে চন না। তারা মনে করে জলবায়ুর সঙ্গে শ্রম বিষয়টির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ এর প্রফেসর ইমেরিটাস আইনুন নিশাত বলেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ও বৈশ্বিক দুষণের জন্য বাংলাদেশের ভুমিকা মাত্রা ১ শতাংশেরও কম। সোজা কথায় মাত্র ০.৩ শতাংশ কার্বন নির্গমন করে। বাংলাদেশ যদি এ অবস্থায় তার কার্বণ নিঃসনের মাত্রা কমিয়েও আনে তাহলেও বৈশ্বিক যে আবহাওয়ার সংকট চলছে তাতে কোনো ফায়দা হবে না। বাংলাদেশের উচিৎ আবহওয়া পরির্বতনজনিত সংকটের হাত থেকে এখন ঝুঁকিপূর্ণ জনগনকে বাঁচানোর দিকে মনোনিবেশ করা। কারণ তারাই হবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। শুধু ক্ষতিগ্রস্তই নয় ভুক্তভোগীও হয়ে উঠবে।
বন্যা এবছর দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ একারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে-ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো অর্ডিনেশন সেন্টার এমন তথ্য দিচ্ছে। এ বন্যার ফলে মৎস ও প্রাণিজ শিল্পের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এখন খড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর খাবার রপ্তানি করা হয়েছিল বিপরীতে এ বছর আমদানি করতে হচ্ছে। এ বিষয়গুলো অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব রাখবে।
এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ তিনটি বড় সাইক্লোনের মুখোমুখি হয়েছে। একইবছর করোনার আঘাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দুটি সংকটকালের আগমণের কারণে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি চরম সংকটের মধ্যে পড়ছে। এ কারণে সময়ের অপচয় না করে তহবিল সংগ্রহের কাজে মাঠে মেনে পড়তে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।