‘প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধ করি’ প্রতিপাদ্যে আজ ৫ই জুন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। অন্যান্য বছরের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি সরকারি -বেসরকারি উদ্যোগে নানান আয়োজনে পালন করা হবে। প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন, যথেচ্ছ ব্যবহার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ইত্যাদি বাংলাদেশে পানি, মাটি ও বায়ু দূষণ দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা উদ্বিগ্ন করছে পরিবেশবাদীদের।
জাতিসংঘের এক উপাত্ত অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টনের অধিক প্লাস্টিক উৎপাদন হয়। যার ১৯-২৩ মিলিয়ন টন সাগর, নদী ও বিভিন্ন জলাশয়ে বর্জ্য হিসেবে পতিত হয়ে দূষণ করছে পরিবেশ।
বাংলাদেশেও প্লাস্টিক দূষণের কারণে ব্যাহত হচ্ছে সেচ ব্যবস্থা ও কৃষিকাজ; আর অনুর্বর কৃষি জমি ও পানি দূষণের কারণে জনগোষ্ঠীর একাংশ বেকার হয়ে পার্শবর্তী শহরে বা দেশের বাইরে অভিবাসনে (Migration) বাধ্য হচ্ছে।
অন্যদিকে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবতো (Climate Change Impact) রয়েছেই। ফলে, আমাদের দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের যতই উন্নতি বা প্রসার হোক না কেন, অদূর ভবিষ্যতে তা কতটুকু টেকসই হবে, তাই এখন চিন্তার বিষয়।
প্রতি বছর বাংলাদেশ হতে অনুমানিক ৭-১০ লক্ষ মানুষ (নারী পুরুষ উভয়ই) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের (Overseas Employment) জন্য অভিবাসন করে থাকে-যেটিকে আমরা ‘শ্রম অভিবাসন’ (Labour Migration) বলে থাকি।
বাংলাদেশ থেকে মূলত: দারিদ্রতা, বেকারত্ব, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, এবং উন্নত জীবনযাপনের মোহ ইত্যাদি কারণে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী শ্রম অভিবাসন করে থাকে। যদিও সরকারি তথ্য-উপাত্ত অনুসারে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ হতে শ্রম অভিবাসনের হার তুলনামূলক বেশি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে: বিগত এক দশকে (২০১১-২০২২) দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পন্ন জেলাগুলো থেকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ও শ্রম অভিবাসনের হার উল্লেখ জনক হারে বেড়ে গিয়েছে।
পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব ও অভিবাসন:
নিউ গ্লোবাল স্টাডির ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২.১৫ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশ দূষণের ও বৈশ্বিক উষ্মতা বৃদ্ধির (Global Warming) প্রভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করেন, যার ভিতর: ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জন বায়ু দূষণের এবং ৩০ হাজার ৮৭৪ জন পানি দূষণের কারণে সৃষ্ট নানান অসুখে প্রাণ হারান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালে ৭১ লক্ষের অধিক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) কারণে সাময়িক বা স্থায়ী অভিবাসনে বাধ্য হয়েছেন। এদের ভিতর যারা দরিদ্র বা অতি দরিদ্র, তাদের বৃহত্তর অংশ ঢাকা, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ বা চট্টগ্রামের মতো মেগা সিটিগুলোতে অভিবাসন করে থাকে।
অন্যদিকে, যারা একটু অবস্থা সম্পন্ন বা মধ্যবিত্ত, তারা কাঙিক্ষত কর্মসংস্থান পেতে বা আয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় বেছে নেন বিদেশে শ্রম অভিবাসন।
মূলত নদী দূষণ, নদী ভাঙ্গন, ঝড়-জলোচ্ছাসের প্রকোপ বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে কৃষিজমি অনুর্বর হয়ে পড়ে ও সমাজে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পায়, ফলে অভিবাসনের হার ও বৃদ্ধি পায়।
২০২২ সালের (জানুয়ারি- ডিসেম্বর) বিএমইটির (Bureau of Manpower Employment and Training-BMET) উপাত্ত অনুসারে: দক্ষিণের প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ ও জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি সম্পন্ন জেলা যেমন: বাগেরহাট হতে ছয় হাজার ২০৯ জন, সাতক্ষীরা হতে ছয় হাজার ৫৭৮ জন, বরগুনা হতে সাত হাজার ৪৮০ জন, খুলনা হতে পাঁচ হাজার ৩৮২ জন, পটুয়াখালী হতে পাঁচ হাজার ২৭০ জন, ও ভোলা হতে ১২ হাজার ৯২৩ জন বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে শ্রম অভিবাসন বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলগুলো আজ কিছুটা হলেও অভিবাসী শ্রমিকদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের সুফল ভোগ করছে। সাধারণত, এই অঞ্চলগুলো যেসব দুর্যোগের কারণে প্রাচীনকাল হতে পরিচিত তা হলো: ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও বন্যা।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আরও নতুন নতুন দুর্যোগ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে, যেমন: সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা (Sea Level Rise) বৃদ্ধির জন্য মাটির ও পানির লবণাক্ততা (Salinity Intrusion) বৃদ্ধি, সুনামি, নদীভাঙ্গন, অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি ইত্যাদি।
ধারণা করা হয়, এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এই অঞ্চলে কৃষিকাজ দিন দিন ব্যাহত হচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে চাষাবাদের ধরণ, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বেকার হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠী।
যদিও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এই জেলাগুলোতে বিকল্প বা অভিযোজিত চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার ও ব্যবসা উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে,। কিন্তু টেকসই কৃষি (Sustainable Agriculture) ও ব্যবসা উদ্যোগ (Enterprise) পরিচালনা ও সম্প্রসারণ আজও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি, ব্যবসা ও বাণিজ্য কর্মকাণ্ড উৎসাহিতকরণের জন্য ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ে যেসব সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম বা সেবা প্রদান করা জরুরি-তা সত্যিকার অর্থে গৃহীত হয়নি। ফলে, এই অঞ্চলের অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স (Remittances) গতানুগতিক ব্যবসা বা কৃষি কাজে বিনিয়োগ করা হয় (যেমন: লবন চাষ, চিংড়ির ঘের, গরু-ছাগল পালন, ইত্যাদি)- যার বেশিরভাগ টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব নয়।
পরিবেশবান্ধব ব্যবসা: বাংলাদেশের অবস্থান
শিল্প ক্ষেত্র, বিশেষ করে তৈরী পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ ‘দূষণমুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব শিল্প’ প্রসারে বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। বর্তমানে দেশের ১৫০টির অধিক তৈরী পোশাক কারখানা ‘ গ্রিন গার্মেন্ট বিল্ডিং’ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এছাড়া কৃষি, পশুপালন ও মৎস চাষে ‘জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজিত পদ্ধতি’ প্রয়োগেও সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। পরিবেশ দূষণ হ্রাস ও টেকসই কৃষি, ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন ও কলকারখানা স্থাপনের জন্যও সরকার নিয়েছেন বহুমুখী উদ্যোগ ও নীতি, যেমন: অর্গানিক খাদ্য পণ্যের উৎপাদন, অর্গানিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, কলকারখানা ও যানবাহনের মাধ্যমে কার্বন (গ্রিন হাউস গ্যাস) নিঃসরণ মাত্রা কমানো, সঠিক উপায়ে দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনঃব্যবহার, ইত্যাদি।
পরিবেশ বান্ধব কৃষি ছাড়াও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্প্রসারণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিক (BSCIC) কাজ করছে। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে দুর্যোগপ্রবন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব সম্পন্ন অঞ্চলগুলো (যেমন: সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, ভোলা, ইত্যাদি জেলা) এর সুফল পাচ্ছে না সঠিকভাবে।
এর কারণ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় দুটি বিষয়: এক. ওই জনগোষ্ঠী এখনো এই বিষয়ে সচেতন নয় বা তারা নতুন পদ্ধতিতে বা ধারণাতে বিশ্বাসী নয়। দুই. সরকারি-বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সেবা (তথ্য, কারিগরি, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক) প্রাপ্তি তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে, ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও রেমিটেন্স গ্রহণকারী অভিবাসীর পরিবারও তাদের অর্থ গতানুগতিক কৃষিতে বা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে, অথবা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে-যা টেকসই হয় না বললেই চলে। তাছাড়া পরিবেশবান্ধব ব্যবসা বা কৃষিকাজকে কখনো কখনো তারা ঝুঁকিপূর্ণ বলেও মনে করে।
পরিবেশবান্ধব ব্যবসা: কোথায় বিনিয়োগ করবেন?
পরিবেশ বান্ধব (Environment Friendly) ব্যবসা বলতে আমরা বুঝি ‘সেই ধরণের ব্যবসা, পণ্যের উৎপাদন বা বিপণন (Production, Supply and Marketing), যা পরিবেশ দূষণ করে না বা দূষণের মাত্রা কম, কার্বন গ্যাস নিঃসরণ করে না এবং যার বর্জ্য দ্বারা মানুষের ও প্রাণী জগতে নতুন রোগ জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা নেই বা কম’।
দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে টিকে থাকতে পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা ও কৃষি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ বান্ধব ব্যবসায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা মূলত: কৃষিকেই প্রাধান্য দিই। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র, কুটির, ও মাঝারি শিল্পেও বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
কৃষি: জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব সম্পন্ন এলাকাতে লবণাক্ততা/ অতিবৃষ্টি/ খরা সহিষ্ণু ও অঞ্চলভিত্তিক উপযোগী ধান, ডাল, তেল ও বীজ জাতীয় শস্য, পাট, বা সবজির আবাদ করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক, জৈব ও অর্গানিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করে মাটির দূষণ রোধ করে কৃষি পণ্যের উৎপাদন করা যেতে পারে ও তাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
চাষাবাদের স্থান বা জমির সংকুলান না হলে বিকল্প উপায়ে বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন ফল-শাক-সবজির চাষ করা যেতে পারে। এছাড়া চর অঞ্চলে গম, ভুট্টা, পান, আখ, তরমুজসহ নানান ধরণের ফল ও শস্যের আবাদ করা যেতে পারে। এই ধরণের চাষাবাদ শুধু অভিবাসীর পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্যই নয়, বরং তা বাড়তি অর্থের ও যোগান দিবে, বিদেশে রপ্তানি করা যাবে, এবং দেশকে করবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আরো পড়ুন: অভিবাসীদের সামাজিক সুরক্ষায় নিরাপত্তা মডেল: সুযোগ ও সম্ভাবনা
মৎস, পাখি ও পশু পালন: পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োগের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও আকর্ষণীয় খাত হচ্ছে: মৎস, পাখি ও পশু পালন। প্রাকৃতিক ও অর্গানিক পাখি, মৎস ও গবাদি পশু খাদ্য উৎপাদন এবং তা দিয়ে হ্যাচারি, মৎস চাষ, গরু-বাছুর-মহিষ পালন, ছাগল-ভেড়া পালন, হাঁস-মুরগি পালন, কাঁকড়া চাষ, ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করা যায়। শুধু সতর্ক থাকতে হবে- গবাদি পশু-পাখির বর্জ্য থেকে যেন পরিবেশ দূষণ না হয় ও বর্জ্যের সঠিক ব্যবহারের ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তির (যেমন বায়োগ্যাস উৎপাদন, জৈব সার তৈরী) উৎপাদন করা যায়।
মৎস, পাখি ও পশু পালনের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজেদের প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মিটবে, অন্যদিকে পরিবারের অর্থনৈতিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে। গ্রামাঞ্চলে অনেক বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবার ডেইরি, দ্রুত বর্ধনশীল মাছের খামার, ফ্লোটিং গার্ডেন (ভাসমান বাগান), কোয়েল, কবুতর, হাঁস, রাজ হাঁস, পোল্ট্রি ফার্ম করে রেমিট্যান্সের অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার করে নিজে সাবলম্বী হয়েছেন ও অনেক বেকার যুবককে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প: বর্তমানে অনেক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে, যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই, যেখানে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করে পরিবেশ দূষণ হ্রাসে ও টেকসই উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান রাখতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, প্রবাসীরা তারা রেমিটেন্স বিভিন্ন হস্তশিল্প (ধাতব জুয়েলারি তৈরী, কাঠের আসবাবপত্র, বেত, তাল বা খেজুর পাতা, এবং বাঁশের তৈজসপত্র বা আসবাব, মাটির তৈরী তৈজসপত্র, ইত্যাদি), অটো মোবাইল (Auto Mobile) বা কারখানার (মেশিনারিজ) যন্ত্রাংশ তৈরী ও রিপেয়ারিং, প্লাস্টিকের খেলনা, মুদ্রণ ও প্রকাশনা, খাদ্যজাত (Food Processing) শিল্প, এবং বস্ত্র শিল্প (সেলাই ও টেইলারিং, থান কাপড় তৈরী) ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে পারেন।
তবে এর জন্য প্রয়োজন কারিগরী প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা, যা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (যেমন: বিসিক, টিটিসি, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি) হতেই গ্রহণ করা সম্ভব। প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে বিনিয়োগের জন্য বা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক সেবা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। যেমন: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক (PKB) বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীদের জন্য পূনর্বাসন, বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ ও বিশেষ পূনর্বাসন ঋণ সেবা প্রদান করছে-যা অভিবাসীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ব্যবসা উদ্যোগ গ্রহণ ও সম্প্রসারণে সহায়তা করছে।
পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের শর্ত কি?
পরিবেশবান্ধব যেকোনো ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রধান কিছু শর্তের ভিতর রয়েছে: কারখানার বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা (পরিবহন, সংরক্ষণ, ডাম্পিং/ ধ্বংস, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন), বর্জ্যের পুনঃব্যবহার (রিসাইক্লিং), নবায়নযোগ্য শক্তির বা জ্বালানির ব্যবহার (যেমন: সোলার প্যানেল স্থাপন, বায়োগ্যাসের ব্যবহার), পরিবেশ বান্ধব বা বিয়োডিগ্রেডেবল (Biodegradable) প্যাকেজিং মেটেরিয়াল ব্যবহার, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা ইত্যাদি।
আরো পড়ুন: অভিবাসীদের কল্যাণ কি শুধু অভিবাসীদের অর্থেই সীমাবদ্ধ?
এছাড়া কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কারখানা বা কর্মস্থলের তাপমাত্রা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা, অগ্নিপ্রতিরোধ সিস্টেম রাখা ও পরিবেশ বান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী টুলস ও মেশিনারিজের ব্যবহার ইত্যাদি ও পরিবেশ বান্ধব ব্যাবসার পূর্ব শর্ত।
এছাড়া বর্তমানে উন্নতমানের বেশ কিছু টেকনোলজি (Technology) রয়েছে যার দ্বারা পানি দূষণ, মাটি ও বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করা বা মাত্রা কমানো সম্ভব। কৃষি, মৎস ও পশুপালনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে বীজের, পোনার বা পশুর জাত/ প্রজাতি নির্বাচনের ও কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে। এর কারণ, অঞ্চল ও এলাকাভেদে মাটির গঠন বা গুনাগুন, স্বাদু-লবন পানির উপস্থিতি, জলবায়ুর প্রভাব ইত্যাদির জন্য চাষাবাদ বা বিশেষ প্রজাতির টিকে থাকা বা ফলন অনেকাংশে নির্ভর করে।
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বিগত কয়েক যুগ ধরে। কিন্তু প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের সঠিক ও কার্যকর বিনিয়োগ আজও হচ্ছে না।
বিশেষ করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসম্পন্ন এলাকাগুলোতে রেমিট্যান্সের সঠিক বিনিয়োগ হচ্ছে না। আবার অসচেতনতার জন্য টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা-উদ্যোগে ওই অঞ্চলের মানুষের আগ্রহের প্রবণতা কম। এক্ষেত্রে প্রবাসীরা এগিয়ে আসতে পারেন তাদের বিদেশে উন্নত পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা ও রেমিট্যান্সের অর্থ টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় বিনিয়োগ করে নিজেদের ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নতির জন্য।
শুধু অভিবাসী কর্মী বা প্রবাসী বাংলাদেশিরাই নয়, সরকারকেও পরিবেশ বান্ধব ও জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অভিবাসীদের অংশগ্রহণ উৎসাহিতকরণে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক: শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক ও উন্নয়ন কর্মী