
আমিনুল হক তুষার
অনিশ্চিত জীবিকায়ন ও কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে এই অঞ্চল ‘অনিরাপদ অভিবাসন বা মানব পাচারের’ উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে
কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি উপকূলীয় ও পাহাড়ি জেলা, যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিগ্রস্থ অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়ধ্বস, ভূমিকম্প ও অতিবৃষ্টির কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ও মায়ানমার হতে আশ্রয় নেয়া জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্যাম্পগুলোতে জীবনযাপন বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়া সরকারি তথ্য অনুসারে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সদর, ও টেকনাফ উপজেলাগুলোতে প্রতি বছর বিভিন্ন ধরণ ও মাত্রার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি ও অতি তাপমাত্রাসহ নানাবিধ কারণে জেলার মহেশখালী উপজেলা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
মহেশখালীর জলবায়ু পরিবর্তন সংকট
কক্সবাজার জেলার অবস্থান বঙ্গোপসাগরের তীরে এক বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চলে হওয়ায় প্রায়শই এই জেলায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রতি বছরই এসব ঘূর্ণিঝড় বড় মাপের কৃষিজ ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির জন্য দায়ী। যখন এই অঞ্চলে কোনো ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, তখন বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষভাবে জলোচ্ছ্বাসের শিকার হয় এবং তাদের জীবন ও জীবিকা ব্যাপকভাবে হয় ক্ষতিগ্রস্থ। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকাসমূহ ও উপকূল হতে দূরে অবস্থিত দ্বীপগুলো নিম্নভূমিতে অবস্থিত এবং এগুলোর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৩ মিটারেরও নিচে। এর ফলে বিশেষ করে এই এলাকাগুলো খুব সহজেই জোয়ারসৃষ্ট বন্যার কবলে পড়ে।
সরকারি হিসেব অনুসারে, ১৯৬৫ সাল হতে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৭০টি বড় ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়েছে আর এসব ঘূর্ণিঝড়ের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং কয়েক বিলিয়ন ডলার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু কক্সবাজার জেলার ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস (১৯৬৫-২০২৫) পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কক্সবাজার ও মহেশখালী উপজেলাতে প্রায় ১৭-১৮টি বড় ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছাস আঘাত হেনেছিলো। ধারণা করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু বিশ্বব্যাপী মোট ‘ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের’ সংখ্যাই বৃদ্ধি করছে না, বরং তীব্র ঝড়ের আধিক্য, অধিক সংখ্যায় ঘূর্ণিঘড়ের বা নিম্নচাপের সৃষ্টি এবং বৃষ্টিপাতের পরিমান বাড়াচ্ছে।
আরো পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রশমনে প্রয়োজন রেমিট্যান্সের কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ‘মোখা’ (১৪ মে ২০২৩), ‘রেমাল’ (২৬ মে ২০২৪), ও ‘হামুন’ (২৪ অক্টোবর ২০২৪) এর কারণে মহেশখালী ও কক্সবাজারে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মহেশখালীর মতো উপকূলীয় এলাকাতে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু বসতভিটা বা অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতিই করে না, বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একদিকে যেমন কৃষি-আবাদ, পশুপালন, মৎস চাষ প্রক্রিয়াতে প্রভাব ফেলে, অন্যদিকে লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য এলাকাতে সুপেয় পানির সংকট সৃষ্টি করছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘রিক-RIC’ এর একটি গবেষণা মতে, মহেশখালীর প্রায় ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো সুপেয় পানি বা নলকূপের নিরাপদ পানি ব্যবহার হতে বঞ্চিত।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও মহেশখালীর জীবন-জীবিকায় প্রভাব
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালীতে পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে এই দ্বীপে নির্বাচারে পাহাড় কর্তন, বন উজাড় এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে সীমাহীনভাবে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দ্বীপ মহেশখালীতে উন্নয়নের অজুহাতে ধ্বংস করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রাণী ও পরিবেশ। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্ব বহনকারী ‘কোহেলিয়া’ নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক। এছাড়া বিগত ১২-১৫ বছরে এই নদীর চর দখল করে এবং প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস) হতে উপকূলকে রক্ষা করতে সরকার কর্তৃক উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরাঞ্চলে ১৯৬৫ সাল থেকে বন সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাকে বলা হয় প্যারাবন। ‘বন অধিদপ্তরের’ তথ্য অনুযায়ী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও কক্সবাজার জেলায় এই প্যারাবন গড়ে উঠেছে। প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর ভূমিতে এই বন তৈরি করা হয়েছে, যা দেশের আয়তনের ১.৩৬ শতাংশ। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে এই বনাঞ্চলগুলোও প্রভাবশালীদের ও অপরিণামদর্শী গুটিকয়েক মানুষের কারণে নির্বিচারে ধ্বংস হচ্ছে।
আরো পড়ুন: গ্রামীণ অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে রেমিট্যান্সের যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের সুযোগ
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স-BTS’ এর মতে, মহেশখালী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকা, যেখানে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন্যা, লবণাক্ত পানির জলাবদ্ধতা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এই দ্বীপের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা কর্মসংস্থান ও জীবিকার অভাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বিভিন্ন এনজিওর গবেষণা ও জরিপে (বিটিএস, বাস্তব, ইপসা, ওয়ার্ল্ড ভিশন ও রিক) দেখা গেছে, প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝোড়ো বাতাসে কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালীর হাজার হাজার বাড়ি ঘর বিদ্ধস্ত হয়, ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেড়িবাঁধ, কালভার্ট ও রাস্তা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২৩ এর অক্টোবরে সাইক্লোন ‘হামুন’ এর তাণ্ডবে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফসহ ৭১টি ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ৮৫৪টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বাড়িঘর ও বসতভিটা মেরামতে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর বছরে গড়ে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকার খরচ হয়। এছাড়া বেশ কিছু অর্থ ব্যয় করতে হয় ল্যাট্রিন ও গবাদি পশুর বাসস্থান মেরামত করতে।
১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে এই এলাকার ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর সরকারিভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রের (সরকারি হিসেবে প্রায় ৪ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে মাত্র ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র) নেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, অনেকগুলো পরিত্যক্ত, আবার কিছু দখল হয়ে গেছে প্রভাবশালীদের হাতে। মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া, হোয়ানক, শাপলাপুর ও ধলঘাটাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থা শোচনীয়। ফলে বড় ধরণের সাইক্লোনের সময় মানুষ ও গবাদি পশুর নিরাপদ আশ্রয় বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পরে।
সরকারি হিসেবে, এই উপজেলাতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বা খতিয়ান হিসেবে কৃষি ও বসতভিটার জমি খুব কমই রয়েছে। নিজস্ব কৃষি জমির সংকট থাকায়, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য সরকার কর্তৃক জমি অধিগ্রহণের কারণে স্থানীয়দের কৃষি পণ্যের উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে দিন দিন। তাছাড়া পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে ফসল চাষের ধরণ অমূলভাবে পাল্টে গিয়েছে-যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে স্থানীয় খাদ্যের সরবরাহ ও চাহিদার ওপর।
জলবায়ু পরিবর্তন সংকট মোকাবেলায় যেসব উদ্যোগ গ্রহণ যেতে পারে
মহেশখালীর জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে নেয়া হয়েছে অনেক উদ্যোগ। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে সোনাদিয়া দ্বীপের ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল করে জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে তা বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর, প্যারাবন সৃষ্টি, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পরিবেশ দূষণ মোকাবেলায় সামাজিক বনায়ন ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট্রেশনের মতো কার্যক্রম গ্রহণ করা।
এদিকে ‘মাতারবাড়ি’ তে মেগা প্রজেক্টের বাস্তবায়নের সময় পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে বেশ কিছু কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্যোগের সময় জানমাল রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীল বসতি ও জীবিকায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য তেমন কোনো তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যোগ নেয়া হয়নি বললেই চলে। তাছাড়া কৃষি, পশু-প্রাণিসম্পদ, মৎস, বন অধিদপ্তরের মাঝে সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক উদ্যোগই কার্যকর হচ্ছে না।
মহেশখালীতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ইপসা’ (YPSA) ‘Women-Led Climate Resilience Program’ প্রকল্পটির আওতায় জলবায়ু সহনশীল ও অভিযোজিত জীবিকায়নের, SRHR, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, WASH (Water and Sanitation Hygiene) ইত্যাদির উপরে স্থানীয়দের জ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া জাতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’ (BRAC) কক্সবাজার ও মহেশখালীর মতো উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেকসই, সাশ্রয়ী ও উপযোগী বসতভিটা নির্মাণের একটি প্রকল্প ‘Climate Resilient Housing: An Adaptation Initiative towards a Sustainable Future in Coastal Bangladesh’ বাস্তবায়ন করেছে- যা মডেল হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করছে।
‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স বা BTS’ ‘Blue Economy and Inclusive Development for Climate Justice’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যেখানে স্থানীয়দের জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন করার ও টেকসই জীবিকায়ন নিশ্চিতে সুরক্ষিত বসতভিটা প্রস্তুতি, স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ, সোলার প্যানেলের ব্যবহার, পুষ্টি নিরাপত্তায় বসতভিটায় সবজি চাষ ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা করা হয়।
আরো পড়ুন: অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও অভিবাসী নারীর ক্ষমতায়ন
বর্তমানে উপজেলাটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে টেকসই ও দুর্যোগ সহনশীল জীবন ও জীবিকায়ন নিশ্চিতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (PKSF) ও গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের (GCF) অর্থায়নে বাস্তব ইনিসিয়েটিভ ফর পিপল’স সেলফ-ডেভেলপমেন্ট Resilient Homestead and Livelihood Support to the Vulnerable Coastal People of Bangladesh (RHL) নামে একটি ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মে ২০২৪ হতে। ‘বাস্তব’ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ পরিবারের সাথে কাজ করছে তাদের অভিযোজিত ও টেকসই বসতভিটা ও জীবিকায়ন নিশ্চিতে। প্রকল্পের অধীনে বিনামূল্যে অতি দরিদ্র ও দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে জলবায়ু সহনশীল ও স্থিতিস্থাপক উঁচু ঘর ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ করা দেয়া (সোলার প্যানেল ও বন্ধু চুলাসহ, যা দুর্যোগের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে), মাচাং পদ্ধতিতে ছাগল পালনের জন্য ঘর করে দেয়া, বসতভিটায় ও পতিত জমিতে সবজির চাষ, কাঁকড়া চাষ, ঝোড়ো বাতাস প্রতিরোধী বৃক্ষরোপ, উপকূল অঞ্চল রক্ষায় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট্রেশন ও প্যারাবন সৃষ্টি, এবং স্থানীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মাঝে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে-যা ইতিমধ্যে উপজেলাটিতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সরকার, উপজেলা প্রশাসন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কারণে প্রকল্পটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আশা করা যায়, প্রকল্পটি সঠিকভাবে ও স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়ন হলে আগামী ২০২৯ সালের ভিতর মহেশখালীতে জলবায়ু অভিযোজনে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
আরো পড়ুন: অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তি’ কী এবং কেন?
পরিশেষে বলা যেতে পারে, ‘মহেশখালী উপজেলা’ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, তীব্র ঘূর্ণিঝড়, নোনা পানির অনুপ্রবেশ, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা এখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইতিমধ্যে উপজেলার অনেক মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছে, অনেক মানুষ অন্যত্র কর্মসংস্থান বা জীবিকার প্রয়োজনে অভিবাসন করেছে। এছাড়াও অনিশ্চিত জীবিকায়ন ও কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে এই অঞ্চল ‘অনিরাপদ অভিবাসন বা মানব পাচারের’ উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এই ঝুঁকিগুলো মোকাবেলায় বিকল্প জীবিকায়ন যেমন-পরিবেশবান্ধব কৃষি, বিকল্প মৎস্য চাষ, কাঁকড়া-চিংড়ি চাষ, শুটকি প্রক্রিয়াকরণ, পান চাষ, পর্যটন, কুটিরশিল্প, ট্রেডভিত্তিক কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য টেকসই উপায়ে আয়ের উৎস সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং স্থিতিশীল জীবনযাপন করতে পারে।
লেখক: সহকারী পরিচালক (প্রোগ্রাম), বাস্তব ইনিসিয়েটিভ ফর পিপল’স সেলফ-ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ
ইমেইল: aminul_haque2000@yahoo.com