বিগত আগস্ট ২০২৩ এ ইতালি সরকার ৪০,০০০ মৌসুমী শ্রমিক হিসেবে অভিবাসী কর্মী নেয়ার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করেন (যা বৈধ অভিবাসনের জন্য ‘ক্লিক ডে’ নামে পরিচিত), যেখানে প্রথম দিনেই প্রায় ৮২,০০০ এরও অধিক নন-ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো হতে আবেদন জমা পরে (সূত্র: ইনফো- মাইগ্রেন্ট, ১৪ ডিসেম্বর’২৩)। ইউরোপের দেশগুলোতে শ্রমিকদের উচ্চ মজুরি, উন্নত জীবন যাপনের হাতছানি, ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ হতে অনেকেই ইতালিতে অভিবাসনের সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে ইতালিতে অভিবাসনের কয়েকটি প্রধান কারণের ভিতর অন্যতম হচ্ছে ইউরোপের শেনজেনভুক্ত অন্যান্য উন্নত দেশে অভিবাসন ও নাগরিকত্ব গ্রহণ। শ্রম অভিবাসন, বা শরণার্থী/আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে ইউরোপে প্রবেশের কারণ হিসেবে শুধু দারিদ্রতা, কর্মসংস্থানের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতিগত বিদ্বেষ, কিংবা জলবায়ুর পরিবর্তনকে নিয়ামক হিসেবে দেখলেই চলবে না, বরং অনেকেই পারিবারিকভাবে স্বচ্ছল থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র ইউরোপে স্থায়ীভাবে বসবাস করার উদ্দেশ্যে এই ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসনের পথকে বেছে নেন। কিন্তু বৈধভাবে অভিবাসনের সুযোগ সীমিত থাকা ও দক্ষতার অভাবে, প্রত্যাশার তুলনায় খুব কম সংখ্যক শ্রমিকই সেই সুযোগ পেয়ে থাকেন। ফলে, অনেকেই প্রস্তুতি নেন যে কোনো উপায়ই হোক ইতালিতে তথা ইউরোপে প্রবেশের।
আরো পড়ন : জাতীয় বাজেট: অভিবাসী শ্রমিকদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
ইতালিতে বৈধ শ্রম অভিবাসনের সুযোগ কি আছে?
বিএমইটির (BMET) পরিসংখ্যান অনুসারে, বিগত ২০২১-২৩ এই তিন বছরে মাত্র ২৪,৪৯০ জন বাংলাদেশ হতে বৈধ ভাবে ইতালিতে শ্রমিক হিসেবে অভিবাসন করেছেন। যদিও গত ২০২৩ এর জুনে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ইতালি সরকারের একটি সমঝোতা চুক্তি (MoU) হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে ইতালিতে অবকাঠামো নির্মাণ, জাহাজশিল্পে ও পর্যটন শিল্পের জন্য দক্ষ শ্রমিকদের অভিবাসনের নতুন পথের সৃষ্টি হয় (সূত্র: দি বিজনেজ স্ট্যান্ডার্ড)। এছাড়া, ইতালি সরকার ২০২৩ হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৪,৫০,০০০ অভিবাসী কর্মীর (কৃষি, কেয়ার গিভার, লজিস্টিক ড্রাইভার, মেকানিক, ও ফুড প্রসেসিং কারখানা) ‘Flussi ডিক্রির’ আওতায় (বাংলাদেশসহ নির্বাচিত ৩৩টি দেশে হতে) নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে (২০২৩ সালে ১,৩৬,০০০ জন, ২০২৪ সালে ১,৫১,০০০ জন ও ২০২৫ সালে ১,৬৫,০০০ জন)। সেক্ষেত্রে মৌসুমী ভিসার (সিজনাল) মেয়াদ ২০ দিন হতে ৯ মাস, কিংবা ২ বছর অব্দি হতে পারে। যদিও ইতালি সরকার বিগত ২০২৩ সালে নন-ইউরোপিয়ান দেশগুলো হতে মাত্র ৮২,৭০৫ জন শ্রমিক নিয়েছিলেন, যা আমাদের দেশের তরুণদের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। তাছাড়া সিজনাল বা নন-সিজনাল ওয়ার্ক ভিসা প্রাপ্তির জন্য অত্যাবশকীয় কিছু শর্ত রয়েছে (যেমন: চাকুরীর নিয়োগপত্র থাকা, নন-ইউরোপিয়ান দেশের নাগরিক হওয়া, দেশে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকা, ইতালিয়ান ভাষা জানা, এবং প্রাথমিক পর্যায়ে নিজের খরচ বহনের সামর্থ থাকা ইত্যাদি), যা কিছু ক্ষেত্রে বৈধ শ্রম অভিবাসনের প্রক্রিয়াকে জটিল ও সময় সাপেক্ষ করে তোলে। যার ফলে আমাদের দেশে হতে অনেকেই উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, বা ভূমধ্যসাগর কিংবা বলকান অঞ্চল (যেমন: সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো, বসনিয়া, স্লোভেনিয়া) হতে ইতালিতে শরণার্থী আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে অভিবাসনের চেষ্টা করেন।
ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালি অভিমুখে যাত্রা ও প্রতিবন্ধকতা:
২০২২ সালে, বাংলাদেশ হতে ১৫,২২৮ জন অভিবাসী সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুট (বা সি.এম.আর)-এর মাধ্যমে ইতালিতে অভিবাসন করেছিলেন, যাদের অধিকাংশই লিবিয়া হয়ে সমুদ্র পথে ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছিলেন। এই রুটে ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রায় ১৪ শতাংশ বা তৃতীয় সর্বাধিক প্রতিনিধিত্বকারী দেশ ছিল বাংলাদেশ। যদিও ২০১৭ সাল হতে এই রুটে লিবিয়া হতে ইতালিতে অনুপ্রবেশে মিশরীয়, তিউনিসিয়ান ও বাংলাদেশীদের সংখ্যা বেশি রয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে (সূত্র: ফ্রন্টেক্স)।
২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত (ডিটিএম রাউন্ড ৪৫ অনুসারে) লিবিয়ায় আসা অভিবাসীর ভিতর ২১,৬৫৩ জন বাংলাদেশি ছিলেন, যা ওই দেশের মোট অভিবাসী জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ। এর ভিতর ২০২২ সালে ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার সময় মোট ৪,৪৪৮ জন বাংলাদেশিকে আটক করে লিবিয়ায় পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়। লিবিয়ার আটক কেন্দ্রে (ডিটেনশন ক্যাম্পে) বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যাও অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি রয়েছে।
যাত্রাপথ:
আইওএমের (লিবিয়া) এক জরিপ চলাকালীন সময় লিবিয়ায় সাক্ষাৎকার নেওয়া বেশিরভাগ ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশীর প্রায় ৫৭% বাংলাদেশিরা বলেছেন যে তারা একটি নির্দিষ্ট দলের মাধ্যমে লিবিয়াতে গিয়েছিলেন, যার মধ্যে প্রায় ৫৯% একা এবং ৪১% পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়স্বজনের সাথে গিয়েছিলেন। এছাড়া উক্ত জরিপ থেকে আরও জানা যায় যে, প্রায় ৪৩ শতাংশ অভিবাসীরা দালাল বা এজেন্সির সহায়তায় একা লিবিয়া গিয়েছিলেন বিমানযোগে অনুমোদিত রুটে (সংযুক্তি আরব আমিরাতে দুবাই, বা তুরস্কের ইস্তানবুল থেকে ত্রিপোলি বা বেনগাজিতে)। এছাড়া সাক্ষাৎকার নেওয়া অনেক অভিবাসীরা জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ থেকে আগত প্রায় ৩৬% অভিবাসী তুরস্ক হয়ে লিবিয়ায় ভ্রমণ করেছিলেন, প্রায় ৩৮ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সরাসরি বা ট্রানজিট নিয়ে, এবং ১৩% মিশর হতে লিবিয়াতে গিয়েছিলেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালীয় অনুপ্রবেশের জন্য। উল্লেখ্য, লিবিয়াতে যাওয়া অধিকাংশ বাংলাদেশিরা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও যশোর জেলা হতে আগত।
ইতালি অভিবাসনের ব্যয়:
সাধারণত, বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় যাতায়াতের খরচ জনপ্রতি প্রায় ৪৫০ মার্কিন ডলার থেকে ৪,৮৮৯ মার্কিন ডলারের মধ্যে হয়ে থাকে, যা পরিবহণের মাধ্যম এবং ভ্রমণ পথের উপর নির্ভর করে কম বেশি হয়। এছাড়া লিবিয়া থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার জন্য জনপ্রতি ৩,০০০ থেকে ৪,০০০ মার্কিন ডলারের মতো খরচ হয়, ফলে বাংলাদেশ থেকে ইতালি পৌঁছানোর জন্য গড়ে একজন অভিবাসন প্রত্যাশীর প্রায় ৮,০০০ মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয় হয়। কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে এবং অভিবাসীদের ভাষ্যমতে, ভাগ্য খারাপ হলে, অনেকে মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পরে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করেন যা জনপ্রতি খরচ ১০,০০০ হতে ১৫,০০০ মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকে। শুধু তাই নয়, অনেকে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নানান কারণে মৃত্যুবরণ করেন ও নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে ধরা পরে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হন।
ইতালিতে আগমন:
বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীরা বেশ কয়েক বছর ধরে সেন্ট্রাল মেডিটেরেনিয়ান রুট (বা সি.এম.আর)-এর মাধ্যমে ইতালিতে যাচ্ছেন, যাদের অধিকাংশই একাধিক পথ বা রুটের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে অভিবাসন করে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে আগত অভিবাসীদের সংখ্যা ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৭,৮৩৮ থেকে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৫,২২৮-এ পৌঁছেছে। ফলে ধারণা করা যায় যে, ২০২২-২৩ সালে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালিতে আগত বাংলাদেশী অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা মানব পাচারের জন্য নতুন নতুন রুট বা প্রক্রিয়া সৃষ্টিতে পাচারকারীদের সহায়তা করছে।
লিবিয়ায় প্রত্যাবর্তন:
ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার সময় যাদের আটক করা হয়েছিল এবং লিবিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তাদের ভিতর বাংলাদেশিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ছিল। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে আসা মোট ৪,৪৪৮ ইতালী অভিবাসন প্রত্যাশীকে ইতালিতে পৌঁছানোর পূর্বেই বা যাত্রাপথে আটক করে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে উপলব্ধি করা যায় যে, আটককৃত এবং লিবিয়ায় ফেরত আসা অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসীদের অনুপাত সেই ২০১৯ সাল থেকে ক্রমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন:
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে বিভিন্ন দেশের উপকূল হতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ গমনের চেষ্টাকালে ২০২৩ সালে তিন হাজারেরও বেশি অভিবাসী মৃত্যুবরণ এবং নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অবৈধ অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় এবং লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী তাদের নজরদারি জোরদারকরণের ফলে বর্তমানে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রা অত্যন্ত বিপদজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অতি সম্প্রতি (১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২৪) লিবিয়া উপকূল থেকে ৫২ জনের একটি অভিবাসীর দল ভূমধ্যসাগর পারি দেয়ার সময় তিউনিসীয় উপকূলে তাদের বহনকারী নৌকাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী নৌকাটি থেকে ৯ জন অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃতদেহ এবং ৪৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। জীবিত অবস্থায় উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন। এছাড়াও বর্ণিত দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারী অধিকাংশ বাংলাদেশি নাগরিক বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে (সূত্র: বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়া)।
এছাড়া অনেক বাংলাদেশী লিবিয়াতে অবৈধভাবে ও অনুনোমোদিত অবস্থানের জন্য বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রয়েছে। সম্প্রতি লিবিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস হতে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনের অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সহযোগিতায় বেনগাজী থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে ১৩৯ জনকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। এছাড়া একই প্রক্রিয়াতে ১৮ই জানুয়ারি ২০২৪ তে ১৩১ জনকে ও ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ১৪০ জনকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ত্রিপলী ও বেনগাজীর ডিটেনশন সেন্টারে আটকসহ বিপদগ্রস্ত মোট ৯৭৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে লিবিয়া আইওএমের সহায়তায় বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করে হয়েছে, যাদের অধিকাংশই অবৈধ উপায়ে লিবিয়াতে অবস্থান করছিলো ও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে অভিবাসনের চেষ্টায় ছিলেন (সূত্র: বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়া)।
আরো দেখুন : অভিবাসীদের সামাজিক সুরক্ষায় নিরাপত্তা মডেল: সুযোগ ও সম্ভাবনা
বৈধ অভিবাসনের পন্থা কি?
যেহেতু আমাদের সরকারের সাথে ইতালির সরকারের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে, এবং মৌসুমী ও চুক্তিভিত্তিক অভিবাসী (নন-ইউরোপিয়ান) শ্রমিক গ্রহণের ৩৩টি দেশের তালিকাতে বাংলাদেশ রয়েছে, সে হিসেবে আমাদের দক্ষ ও যোগ্য শ্রমিকদের সুযোগ রয়েছে বৈধ ও অনুমোদিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইতালি বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে অভিবাসনের। সে ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে কর্ম ও ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নে। এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাহিদা অনুসারে দক্ষ মানবসম্পদ প্রেরণ করার জন্য কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্টদের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসন নিশ্চিতে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এর তদারকি ও নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি, অবৈধভাবে ও ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে ইউরোপে অভিবাসনের ব্যাপারে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। এর জন্য পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও এর অধীন ভিজিলেন্স টাস্ক ফোর্সের কর্মকান্ডের ব্যাপ্তি ও উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্য, কিংবা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ (যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াতে) উচ্চ বেতনে বৈধ অভিবাসনের সুযোগ থাকলেও অনেক বাংলাদেশিরাই শেনজেন অন্তর্ভুক্ত দেশ যেমন ইতালি, ক্রোরেশিয়া ও হাঙ্গেরীতে যাওয়ার জন্য আগ্রহী বেশি। বিশ্বায়ন ও বৈশ্বিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের ফলে- পাশ্চাত্যের প্রতি আমাদের দেশের তরুণদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে। তাছাড়া সুযোগ সন্ধানী কিছু গোষ্ঠীর ও মানবপাচারকারীদের প্রলোভনে পরে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক স্বপ্নসন্ধানী তরুণ ও যুবকরা বৈধভাবে না পেরে হতাশ হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে একদিকে যেমন বিপুল পরিমান অর্থ লগ্নির ঝুঁকি থাকে বা অপচয় হয়, আর একদিকে থাকে জীবনের ঝুঁকি। তাই আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রয়োজন তরুণ ও অভিবাসন প্রত্যাশী যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা ও বৈধ উপায়ে বিদেশে অভিবাসনে সচেতন করা।
আরো দেখুন : অভিবাসীদের কল্যাণ কি শুধু অভিবাসীদের অর্থেই সীমাবদ্ধ?
স্বীকারোক্তি: উক্ত প্রবন্ধটি ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মার্চ ২০২৩: বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালিতে অভিবাসন, আইওএম, লিবিয়া’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশনা হতে অনুবাদিত, উৎসাহিত ও অনুসৃত। প্রবন্ধে উল্লেখিত অন্যান্য উপাত্ত-তথ্যের সূত্র প্রদান করা হয়েছে ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব চিন্তার ফসল।
লেখক : আমিনুল হক তুষার, শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক ও উন্নয়ন কর্মী, উপদেষ্টা, বাংলাদেশী অভিবাসী নারী কর্মী এসোসিয়েশন (বমসা)