মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি উন্মুক্ত শ্রম বাজার নীতির পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটির একটি মানবাধিকার সংগঠন। মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হিমানিটারিয়ান অরগ্যানাইজেশন (এমএইচও) বলেছে, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই উন্মুক্ত বাজার নীতি ‘একচেটিয়াকরণ এড়ানোর ক্ষেত্রে একটি আদর্শ চর্চা’।
বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন একটি মানবাধিকার সংস্থা বলেছে যে, একটি উন্মুক্ত বাজার নীতি শ্রমিক নিয়োগের খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি কর্মীদের ওপর আর্থিক বোঝা কমিয়ে আনবে
মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হিম্যানিটারিয়ান অরগানাইজেশন (এমএইচও) এর মহাসচিব হিশামুদ্দিন হাশিম বলেছেন, উন্মুক্ত বাজার নীতি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং বিদেশি শ্রম নিয়োগে ‘বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন ব্যক্তিদের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটকে প্রতিরোধ করতে পারে।’ তিনি আরো জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান প্রথা অনুসারে, শ্রমিকদের অভিবাসন খরচ এবং অন্যান্য নিয়োগ-সম্পর্কিত খরচ শ্রমিকরা বহন করবে বলে উল্লেখ করা আছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) কর্তৃক মালয়েশিয়ায় উন্মুক্ত বাজার নীতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানোর পর জনাব হিশামুদ্দিন মন্তব্য করে বলেছিলেন যে, ‘বৈধ নিবন্ধনসহ সমস্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সম্ভাব্য শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অনুমতি দেয়া উচিৎ।’
বায়রার মুখপাত্র শামীম নোমান বলেছেন, ‘একটি উন্মুক্ত বাজার নীতি নিয়োগের খরচ কমিয়ে আনবে এবং শ্রমিকদের ওপর আর্থিক বোঝা হ্রাস করবে।’
হিশামুদ্দিন হাশিম বলেন, এক্ষেত্রে ‘একটি বিশেষ বাছাই কমিটি কর্তৃক নিয়োগ ব্যবস্থার তদারকি করা উচিৎ। ‘রিক্রুটিং এজেন্সিগুলির জন্য একটি স্বাধীন এবং স্বচ্ছ আবেদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই উন্মুক্ত বাজার নীতি আসা উচিৎ। নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করতে এবং তাদের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করতে একটি বিশেষ নির্বাচন কমিটি নিয়োগ করা উচিৎ।’ এক্ষেত্রে অবশ্য তিনি এও বলছেন, ‘বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্থানীয় শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়ার পর বিদেশি শ্রমিক নেয়া হওয়া উচিৎ।’
এর কারণ জনাব হাশিম যুক্তি দেন, বর্তমানে আনুমানিক ৫৬ লাখ বেকার স্থানীয় শ্রমিক রয়েছে। আর রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা সীমিত করে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের অতিরিক্ত নিয়োগের সমস্যার সমাধান হবে না।
নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক আদ্রিয়ান পেরেইরা বলেছেন, ‘বিদেশি কর্মীদের ওপর একাধিপত্য ঘটেছে, কারণ সেখানে কোনো তদারকির ব্যবস্থা ছিল না এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে আদৌ কোনো মানদণ্ড প্রকাশ করা হয়নি।’ ‘তবে যদি উন্মুক্ত বাজার থাকতো তাহলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশনা মোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিযোগিতা থাকতো’-বলেন তিনি।
ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারার্স (এফএমএম)ও এ বিষয়টিকে সমর্থন করে বলেছে, একটি উন্মুক্ত শ্রম বাজার নীতি বৃহত্তর প্রতিযোগিতার নিশ্চয়তা দেবে এবং নিজ পছন্দকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা ও কর্মী-উভয়কে আরো সুযোগ দেবে। একইসঙ্গে সু-শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার ওপর আস্থা জোগাতে সহায়তা করবে।
আরো পড়ুন ●মালয়েশিয়ায় যারা ‘অবৈধ’ পথে আসে, তারা ‘গরীব নয়’! ●মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের সমান সুরক্ষা দেয়ার দাবি অধিকারকর্মীদের
‘কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি উন্মুক্ত, ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতিকে সমর্থন করে এফএমএম। কারণ আমরা চাই না যে, নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীরা একইভাবে কোনো সিস্টেমের শিকার হোক’-বলেন সভাপতি সোহ থিয়ান লাই। ‘দিনশেষে নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীর ওপর অপ্রয়োজনীয় খরচের বোঝা চাপিয়ে দেয়া উচিত নয় নিয়োগ ব্যবস্থার। নিয়োগ ব্যবস্থায় আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটি অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি অনুসরণ করবে। যা কর্মীদের এবং তাদের অধিকার রক্ষা করবে।’
উল্লেখ্য, তিন বছর বন্ধ থাকার পর নতুন করে বাংলাদেশের অন্যতম আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় নতুন করে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারভানান নিজ নিজ দেশের পক্ষে কুয়ালালামপুরে এই স্মারক চুক্তি সাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী যেকোন বাংলাদেশী নাগরিক মালয়েশিয়ায় শ্রমিক হিসেবে আবেদন করতে পারবেন।
সূত্র: ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে