বৃহস্পতিবার, 21 নভেম্বর, 2024

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অভিবাসন অভিজ্ঞতা

ড. রঞ্জন সাহা পার্থ

বৈশ্বিক অভিবাসীরা শিকড়হীন নন বরং তারা সক্রিয়ভাবে দেশকে উপস্থিত করেন-গার্ডনার

বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক বিদ্যা জাগতিক পরিসরে ‘অভিবাসন’ একটি বহুল প্রচলিত প্রত্যয় হিসেবে চিহ্নিত। নগরবিদ, অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে অভিবাসনের ফলে দ্রুত নগরায়ন, রেমিটেন্স, কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণার প্রবণতা লক্ষণীয়। গ্রাম থেকে শহরে সমাজে অভিবাসন যেমন আগ্রহের জায়গা হিসেবে গবেষকদের আকৃষ্ট করেছে, তেমনি বিদেশে অভিবাসন ও রেমিটেন্স এর প্রবাহ বৃদ্ধিসহ ডায়াসপরিক কমিউনিটি নিয়োগ গবেষণায় আগ্রহেরও কমতি নেই।

অভিবাসনের ফলে অর্থনৈতিক সাবলম্বিতার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে গবেষকদের কাজ গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর পুনঃসংজ্ঞায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক অর্থে ‘অভিবাসন’ ব্যতীত বর্তমানে গ্রামীণ সমাজ কাঠামো ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্রামের পরিবার কাঠামো, জ্ঞাতিসম্পর্ক, রাজনীতি, অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো অভিবাসন প্রক্রিয়া দ্বারা ভিন্ন রূপে আবর্তিত হচ্ছে।

ষাট ও সত্তরের দশকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পেশা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কৃষি নির্ভর হলেও কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভরতা কৃষি থেকে মানব শ্রমের গুরুত্ব হ্রাস করে এবং শহরে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়িত সমাজে কর্মের সুযোগ তৈরি করেছে। এ সময়কালে বাংলাদেশ হতে কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে অভিবাসনের হারও বাড়তে থাকে।
ঔপনিবেশিক সময়কালে আফ্রিকা ও ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় অভিবাসন এর অভিজ্ঞতা আলোচনাকালে অনেক গবেষক অভিবাসনকে দেখতে পান ‘নেগেটিভ’ বিষয় হিসেবে। যেমন: শ্রমিকের শ্রম শোষণ ও পুজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের শোষণের ফলাফল হিসেবে, যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন এর কারণ হিসেবে বা অভিবাসী জনগোষ্ঠীর দুর্নীতি বা অপরাধ প্রবণতার বিষয় হিসেবে।

পরবর্তীতে আধুনিকায়ন তত্ত অভিবাসনকে প্রগতির পরিচায়ক হিসেবে দেখালেও নির্ভরশীলতা তত্ত অভিবাসনকে দেখিয়েছে দুই প্রান্তের পারস্পরিক ও অসম বৈষম্যমূলক সম্পর্কেরও মধ্য দিয়ে। এই সময়কালে অভিবাসনকে দেখা হয়েছে, স্থানীয় সংস্কৃতির ভাঙ্গনের কারণ হিসেবে (গার্ডনার, ১৯৯৫)।

একই সঙ্গে ১৯৬০ এর দশক হতে সমাজ গবেষকগণ সমাজ কাঠামো ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা ব্যাখ্যায় অভিবাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করেন। আশির দশকে অভিবাসন মডেল বিশেষত ‘‘পুশ-পুল’’ মডেল অভিবাসন বিষয়ক গবেষণাকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে পুশ অভিবাসনকে ‘জোরপূর্বক’ স্থানান্তর আর পুলকে নিজের পছন্দের ভিত্তিতে অভিবাসনকে নির্দেশ করা হয়ে থাকে। এই মডেলের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল ‘স্থান’ ও ‘স্থানে’র পরিবর্তন কীভাবে উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত তার চিহ্নিতকরণ (Addelton, 1992)। ব্যক্তি জোরপূর্বক হোক বা নিজস্ব পছন্দের কারণেই হোক না কেন, কোন প্রক্রিয়ায় বা কোন পরিস্থিতিতে নতুন বাস্তবতাকে মোকাবেলা করে বা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, তা ব্যাখ্যার দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

আরো পড়ুন: গ্রামীণ অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে রেমিট্যান্সের যথোপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের সুযোগ

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ হতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন বাড়তে থাকে, গবেষকদের অভিবাসন নিয়ে গবেষণার আগ্রহও বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিশেষত: ইংল্যান্ড ও আমেরিকাতে অভিবাসন প্রবণতা ঔপনিবেশিক আমল থেকেই লক্ষণীয়। তবে বিভিন্ন গবেষণয় ১৯৮০ এর দশককে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সময়কালেই মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার তৈরী হয় এবং বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অভিবাসিত হতে শুরু হয়।

অভিবাসন এর প্রভাব মূল্যায়ন বিষয়ক গবেষণায় অর্থনীতিবিদদের অংশগ্রহণ খুব বেশি, যেখানে রেমিটেন্স প্রবাহ কীভাবে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি করে বা স্থানীয় পরিসরের কাঠামোগত উন্নয়ন করে-এরূপ বিষয়াবলী গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়।

নৃবিজ্ঞানীরা এথনোগ্রাফিক গবেষণায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অভিবাসনের গুরুত্ব অনুসন্ধানে মনোযোগী হন (গার্ডনার, ১৯৯৫; আহমেদ, ২০০৮)। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অভিবাসনকালে ভৌগলিক ‘স্থান’ কোন স্থির বিষয় নয়; ‘দেশ’-‘বিদেশ’ এর স্থান শুধু ভৌগলিক বিষয় নয়; এই স্থান ও ভৌগলিক বিষয়ের সঙ্গে অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক মতাদর্শ ও মূল্যবোধের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

গার্ডনার বাংলাদেশের সিলেটের তালুকপুর গ্রামের গবেষণায় দেখান যে, কীভাবে বৃটেন ও পশ্চিম এশিয়ায় অভিবাসন স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকে আন্তঃসম্পর্কিত করে এবং দেশ-বিদেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে (গার্ডনার, ১৯৯৫)। তিনি মনে করেন, অভিবাসন শুধু ভৌগলিক বিষয় নয় এর রাজনৈতিক দিকও বর্তমান।

দেশ ও বিদেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক তা একমূখী বা শুধু অর্থনৈতিক নয়, এখানে মানুষ ও পণ্যের আদান-প্রদান ঘটে। এর মাধ্যমে উভয়মুখী সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটে, যেখানে সরল রৈখিকভাবে পশ্চিমাকরণ ও আধুনিকীকরণ ঘটে না, ‘দেশ’ এ যেমন স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ‘বিদেশী’ সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া ঘটান। তার মতে, বৈশ্বিক অভিবাসীরা শিকড়হীন নন বরং তারা সক্রিয়ভাবে দেশকে উপস্থিত করেন।

আরো পড়ুন: চীনে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা শ্রমজীবীরা

একইভাবে বিদেশও দেশকে প্রভাবিত করতে পারে। দেশ ও বিদেশ মানুষের চলাচলের মধ্য দিয়ে আন্তঃসম্পর্কিত এবং তা একই প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়। অভিবাসন কেবল মূল্যবান রেমিটেন্স নিয়ে আসে না বরং তার মাধ্যমে ব্যক্তি সামাজিক মর্যাদা, সম্মান ও অভিজ্ঞতা লাভ করেন। বিদেশে থাকার ফলে সাংস্কৃতিক পুঁজি অর্জন করেন, যা অনেক সময় ক্ষমতার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এ কারণে অভিবাসন ক্ষেত্র বিশেষে আয়ের উৎস নয়, ক্ষমতার সম্পর্কের উৎসও (গার্ডনার,১৯৯৫, পার্থ, ২০২০)।

টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার প্রেক্ষাপটে এথনোগ্রাফিক গবেষণার অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে যে, বিদেশে অভিবাসিত হলেই ব্যক্তি তার দেশের মূল্যবোধকে ত্যাগ করে না বরং শেকড়ের সাথে মূল্যবোধকে সম্পর্কিত করে, দেশ বিদেশের সংস্কৃতি আদান প্রদান করে, যা একমূখী নয় বরং বহুমুখী চরিত্র বিদ্যমান।

দেশ বিদেশে মানুষের চলাচলের মাধ্যমে অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও মতাদর্শের আদান-প্রদান ঘটে। অভিবাসিত জনগোষ্ঠীর সাথে স্থানীয়দের সম্পর্ক শুধু রেমিটেন্স নির্ভর নয়, এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক পুঁজি যেমন-মর্যাদা, ক্ষমতা ও সম্মানের মতো বিষয় জড়িত। অভিবাসিতদের সঙ্গে স্থানীয়দের ক্ষমতার সম্পর্কও ভৌগলিক অবস্থানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

অভিবাসনের কারণে পরিবার ও জ্ঞাতি সম্পর্কের রূপান্তরশীল চিত্রও দৃশ্যমান। আপাতদৃষ্টিতে অভিবাসন গ্রামের যৌথ পরিবারের ভাঙ্গনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখলেও তা আবার নতুন ধরনের সম্পর্কের জালে কীভাবে আবদ্ধ করে তা অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন রয়েছে।

অভিবাসন গ্রামীণ যৌথ জীবনের ভাঙ্গন ঘটাচ্ছে এটা ভৌগলিক দৃষ্টিকোন থেকে সত্য এবং এটিও দৃশ্যমান যে, অভিবাসনের ফলে গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে মানুষজন একক পরিবারের মধ্যে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে পরিবারের বয়োজেষ্ঠ্য অর্থাৎ মা-বাবা, দাদা-দাদিরা গ্রামেই বসবাস করে। বিবাহিত বা বিয়ের পর অভিবাসিত অনেকেই তার গ্রামের পরিবার বা আত্মীয় স্বজনদের মাসিক খরচও সরবরাহ করে থাকেন।

আবার এটিও দেখা গিয়েছে যে, বিদেশে অভিবাসিত জনগোষ্ঠী আপদকালীন সময়ে যোগান হিসেবে বাবা মায়ের গ্রামের সম্পত্তিও বিক্রি করে নিয়ে যাচ্ছেন (পার্থ, ২০২০)।
আবার রেমিটেন্স এর প্রবাহ গ্রামের বাজার ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে। গ্রামে বাসস্থানের জন্য যেমন দালান কোঠা তৈরী হচ্ছে ঠিক তেমনি সুপার মার্কেট এর মতো প্রতিষ্ঠান তৈরী হচ্ছে। যেখানে কর্মরত আছে অভিবাসীদের ভাই বা অন্য কোনো আত্মীয়। এ ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য গ্রামের অর্থনীতি তথা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তন আনছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে কৃষিতে পুঁজি বিনিয়োগের ব্যাপারটিও লক্ষ্য করা গিয়েছে। শুধু বিদেশ অভিবাসনকারীরাই নয়, অভ্যন্তরীণ অভিবাসনকারীদেরও কৃষিতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে দেখা গেছে। ট্রাক্টর বা পাম্প ক্রয় করে তা ভাড়া খাটানোর ব্যাপারটিও এখানে অনেকটাই প্রচলিত।

আবার গ্রাম্য বাজারের আয়তনগত পরিধিও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারের আশেপাশে যেসব খালি জায়গা ছিল সেই জমির মালিক ইটের তৈরী বা টিনের তৈরী ঘর নির্মাণ করে তা দোকান হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। এই ধরনের নির্মাণ কাজের সঙ্গেও রেমিটেন্সের যোগসূত্র রয়েছে।

আরো পড়ুন: অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে চাপ কমাবে টেকসই গ্রামীণ উন্নয়ন পরিকল্পনা

গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জানা যায়, বিদেশ থেকে অভিবাসিতদের প্রেরিত অর্থ বাজারে বিনিয়োগের বড় উৎস হিসেবে কাজ করে। এই রেমিটেন্সের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাড়ী বা দোকান তৈরী করে তা ভাড়া দেয়া হচ্ছে। বাজারের আশেপাশে যাদের জায়গা আছে বিনিয়োগের এই মাধ্যমটি তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

পূর্বে গ্রামের অর্থনীতি রাজনীতি ও মর্যাদার সঙ্গে ভূমির মালিকানা প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু বর্তমানে ভূমিহীন পরিবারের সন্তান ও অভিবাসনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে গ্রামে বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন ধরনের সামাজিক শ্রেণির সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন।

বিদেশ ফেরত অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি গ্রামে নিজেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করছেন। এ ধরনের প্রভাব প্রতিপত্তি ও গ্রামীণ বাজার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে। বিত্তশালীদের আত্মীয় স্বজনরা গ্রামের ব্যবসা স্থাপন করে নতুন ধরনের সামাজিক শ্রেণির উত্থান ঘটাচ্ছেন যা চিরায়ত কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে ছিল অনেকটাই অনুপস্থিত।

বর্তমান সময়ে কৃষিতে পুঁজি বিনিয়োগ অন্যান্য ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়। বর্তমান সময়ে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি এবং মাছ চাষ প্রকল্প ও লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিত। অভিবাসনকারীদের অনেকেই বেশ কিছুদিন পর জমানো টাকা নিয়ে গ্রামে ফিরে এসে মাছ চাষ বা হাঁস-মুরগির খামার দিচ্ছেন। পুকুর কেটে মাছ চাষ বা হাঁস মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা এখন গবেষণা এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ব্যবসা। নিজ বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বেকারত্ব ঘুচিয়ে এখন এটি গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন বিষয় হিসেবে সংযোজিত হয়েছে।

বিশ বছর আগেও যেখানে বাজার ছিল মূলত কাঁচাবাজার, মুদি দোকান এবং চায়ের দোকানের সমষ্টি, বর্তমানে সেখানে বেকারি শপ, বৃহৎ মুদি দোকানসহ নানা ধরনের বাজার গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যাংক-বীমার মতো প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক, বীমা, এনজিও এবং কিন্ডারগার্টেন এর মতো প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটানোর জন্য কম্পিউটার কম্পোজ ও প্রিন্টার, ফটোকপির দোকান গ্রামের বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শহর ও গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরো পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে আরব অভিবাসনের উত্থান-পতনের ইতিহাস

উল্লেখ্য যে, গ্রামীণ সমাজের এই পরিবর্তন শুধু অভিবাসনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে না। কিন্তু অভিবাসিত জনগোষ্ঠীর সাথে দেশের মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ এই পরিবর্তনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে।

যোগাযোগের এই উভয়মুখী কারণকে কেন্দ্র করে গ্রামে নাগরিক জীূবনের ভোগবাদী আচরণের সম্প্রসারণ ঘটছে। কোন কোন গ্রামে চিরায়ত বাজার ব্যবস্থার পাশাপাশি কফি শপ, বিউটি পার্লার, ফাস্ট ফুড শপ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপিত হয়েছে। বিদেশে অভিবাসিত ব্যক্তি শুধু দেশে বিদেশের যোগাযোগ ঘটাচ্ছে না, দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তির বিস্তার ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার মাধ্যমে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্কেও পুনঃনির্মাণ করছে। অভিবাসন তাই বলা যায়, অভিবাসন ‘দেশ-বিদেশ’ এর স্থান শুধু ভৌগলিক বিষয় নয়; অভিবাসিতদের সাথে দেশের সম্পর্ক শুধু রেমিটেন্স নির্ভর নয়-এসব বিষয়ের সাথে অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক মতাদর্শ ও মূল্যবোধের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

তথ্যসূত্র:

Addelton, j. (1992) Undermining the Centre: The Gulf Migration and Pakistan (Karachi:Oxford University Press).

Gardner, K (1995) Global Migrants and Local Lives: Travel and Transformation in Rural Bangladesh, Oxford, Oxford University Press

Gardner, K and Ahmed z. (2006) Place, Social Protection and Migration in Bangladesh: A Londoni Village in Biswanath, Working Paper, T18, Development Research Centre, (DRC) on Migration, Globalization and Poverty, Brighton, University Of Sussex, UK

পার্থ রঞ্জনসাহা (২০২০) গ্রামীণ সমাজ ও কৃষি কাঠামো: সাম্প্রতিক পরিবর্তন, সংবেদ, ঢাকা।

লেখক: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Get in Touch

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related Articles

অভিবাসীর সঙ্গে থাকুন

10,504FansLike
2FollowersFollow
96SubscribersSubscribe

সাম্প্রতিক ঘটনা