বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পালিত হতে যাচ্ছে জাতীয় প্রবাসী দিবস (National Expatriates Day)। ‘প্রবাসীর কল্যাণ, মর্যাদা-আমাদের অধিকার/স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় তারাও সমান অংশীদার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর জাতীয় পরিসরে উদযাপিত হবে দিবসটি।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত অগণিত অভিবাসী কর্মী, প্রবাসী ও অনিবাসী বাংলাদেশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। তাদের এ অবদানের স্বীকৃতি জানানোর উদ্দেশ্যে গৃহিত এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয় ও সময়োপযোগী।
আরো পড়ন : জাতীয় বাজেট: অভিবাসী শ্রমিকদের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অভিবাসীদের রয়েছে বিশাল অবদান। একদিকে তারা যেমন রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন, অন্যদিকে দেশে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্প-কারখানার প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্রতা হ্রাসে অবদান রাখছে।
যদিও অভিবাসী শ্রমিকদের অবদান ও অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদানে বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১৮ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
শুধু দিবসভিত্তিক অভিবাসীদের স্মরণ করা, কিছু উপহার বা স্মারক দেয়ায় ভিতর দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেই হবে না, বরং প্রয়োজন বছরব্যাপী গুণগত মান বজায় রেখে ও কার্যকরীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রদান অব্যাহত রাখা।
কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে অভিবাসীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিবস পালনের জন্য আমাদের দাবি ছিলো অনেক দিনের। তবে শুধু দিবসভিত্তিক অভিবাসীদের স্মরণ করা, কিছু উপহার বা স্মারক দেয়ায় ভিতর দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেই হবে না, বরং প্রয়োজন বছরব্যাপী গুণগত মান বজায় রেখে ও কার্যকরীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা প্রদান অব্যাহত রাখা।
যদিও বর্তমান সরকার অভিবাসী বা অনিবাসী বাংলাদেশিদের বহুমুখী সেবার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করেছে। তবে তা আদৌ সেবা গ্রহণকারী অভিবাসন প্রত্যাশী বা প্রত্যাবর্তিত ব্যক্তির সন্তুষ্টি অর্জন করেছে কিনা- তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
শ্রম অভিবাসনের বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শ্রম অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদনের জন্য কাজ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। বিএমইটির সূত্র ও উপাত্ত অনুযায়ী, এখন অব্দি ১ কোটি ৫৭ লাখের অধিক (১৯৭৬ সাল হতে ২০২৩) মানুষের বৈধভাবে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ধারণা করা হয়, প্রতিবছর কর্মসংস্থান ছাড়াও লক্ষাধিক মানুষ বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যও অভিবাসন করছেন।
যদিও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু ধারণা করা হয়, বিশ্বের প্রায় ১৬৮টি দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষের অধিক বাংলাদেশী বসবাস করছেন। বিএমইটির পরিসংখ্যান মতে, বিগত ২০২২ সালে ১১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন বিদেশে গিয়েছেন, আর ২০২৩ (নভেম্বর অব্দি) এ সংখ্যাটি প্রায় ৯ লক্ষ ৮৯ হাজার। যার ভিতর নারী অভিবাসী কর্মী ২০২২ সালে ছিল এক লক্ষ পাঁচ হাজার ৪৬৬ জন আর ২০২৩ এ হয়েছে ৬০ হাজার ২৫৪ জন।
যদিও সংখ্যায় অভিবাসনের চিত্রটা অনেক বড়, কিন্তু দক্ষ শ্রমিক প্রেরণে আমরা কি আদৌ সফল? বিএমইটির পরিসংখ্যান আরো বলছে, ২০২১-২২ সালেও প্রায় ৭৭% ছিল অদক্ষ, ২০% ছিল দক্ষ ও ২.৫২% ছিল স্বল্প দক্ষ। অর্থাৎ, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী প্রেরণে আমরা এখনো সমর্থ হতে পারিনি।
এছাড়া অনিরাপদ অভিবাসন, শ্রম পাচার বা মানব পাচারের মতো ঘটনা তো ঘটছেই।
অন্যদিকে, আমাদের কাছে বিদেশ ফেরত কর্মীদের সঠিক পরিসংখ্যান বা গবেষণা পত্র না থাকায় বিদেশে অভিবাসী কর্মীদের অবস্থান ও দেশে ফেরত পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে ধারণাও সুস্পষ্ট নয়।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিগ্রস্থ জেলার অভিবাসন চিত্র
পরিসংখ্যান অনুযায়ী কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ জেলাতে শ্রম অভিবাসনের হার উচ্চ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিগ্রস্থ ও উপকূলবর্তী জেলাগুলোও আজ বিদেশে শ্রম অভিবাসনে পিছিয়ে নেই।
সাইক্লোন, জলোচ্ছাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, সুপেয় পানি ও কৃষজ জমির স্বল্পতা ইত্যাদির কারণে আজ ভোলা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, খুলনা, বরগুনা ও কক্সবাজারের মতো জেলা হতে অন্তঃ ও আন্তঃ অভিবাসন বাড়ছে। এমনকি, এসব অঞ্চলের মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে অভিবাসনের জন্য ঝুঁকি নিচ্ছেন, বেছে নিচ্ছেন অনিরাপদ ও অবৈধ অভিবাসনের পন্থা।
আরো দেখুন : অভিবাসীদের সামাজিক সুরক্ষায় নিরাপত্তা মডেল: সুযোগ ও সম্ভাবনা
তাছাড়া, এই উপকূলীয় জেলাগুলোতে শ্রম অভিবাসনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সেবার ঘাটতিও রয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাও এই জেলাগুলোতে শ্রম অভিবাসন নিরাপদ ও চাহিদা ভিত্তিক করতে খুবই কম প্রকল্পের উদ্যোগ নিচ্ছে। ফলে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এসব অঞ্চলের মানুষ অনিরাপদ ও অনিয়মিত অভিবাসনের দিকে বেশি ঝুঁকছেন ও প্রতারিত হচ্ছেন।
দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের হালচাল
প্রতিবছর শ্রম অভিবাসনে ইচ্ছুক কর্মীরা তাদের বিদেশগমনের ছাড়পত্রের জন্য সরকারি কল্যাণ তহবিলে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ প্রদান করে থাকে। বিএমইটির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ অনুসারে বিগত বছর এসব কর্মী প্রায় ৩৪.২২ মিলিয়ন ইউএস ডলার (৩৯০ কোটি টাকা+) সমপরিমাণ অর্থ কল্যাণ তহবিলে প্রদান করেছেন।
এই তহবিল সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড (বা কল্যাণ বোর্ড) এর মাধ্যমে অভিবাসীদের জন্য খরচ করে থাকেন। যেমন: প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন প্রদান, মৃত কর্মীর লাশ দেশে আনয়ন, ক্ষতিপূরণ প্রদান, শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, চিকিৎসা সহায়তা, বিভিন্ন ভাতা প্রদান, ইত্যাদি।
যদিও সরকার শ্রমিকদের ও দেশের বেকার যুবকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছেন ও বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরী ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদান করছে, কিন্তু দক্ষ শ্রমিক প্রেরণে আমরা বরাবরই পিছিয়ে থাকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায়।
আরো দেখুন :অভিবাসনে মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও নিয়ন্ত্রণের কথকতা
তাছাড়া, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ও জেলা পর্যায়ে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (ডেমো) গুলোতে জাতীয় বাজেট হতে বরাদ্দও বরাবরই কম থাকে, তার সঙ্গে রয়েছে মানবসম্পদের ঘাটতি। যেমন: বিএমটিতে পাঁচ হাজার ১২৪ জন জনবলের বিপরীতে রয়েছে দুই হাজার ৫৬২ জন, যেখানে টিটিসিগুলোতে থাকার কথা তিন হাজার ৫০০ এর অধিক কর্মচারী-কর্মকর্তা, সেখানে তা পর্যাপ্ত নয়।
আমরা জানি, বর্তমানে ৭০টি টিটিসি ও ১১টি ডেমো (জেলা কর্মসংস্থান ও মানবসম্পদ কার্যালয়) হতে তিনদিন ব্যাপী বাধ্যতামূলক প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়। বিগত ২০২১-২২ অর্থ বছরে আট লাখ ৫৬ হাজার ৩০৫ জনকে এই ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়েছে। যেখানে পুরুষ অংশগ্রহণকারী ছিল আট লাখ ১৭ হাজার ৭২৬ জন আর নারী ছিল ৩৮ হাজার ৫৭৯ জন। কিন্তু সর্বমোট অভিবাসন হয়েছে নয় লাখ ৬৬ হাজার ৫০৩ জনের, অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজারের মতো কর্মী প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনে অংশ নেননি।
আমরা এও জানি, আমাদের নারী শ্রমিকরা বেশিরভাগই গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে যান, কিন্তু বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, বিগত বছর এক লাখ পাঁচ হাজার ২৪২ নারী কর্মীর বিপরীতে ৩৮ হাজার ৫৭৯ জন প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনে অংশগ্রহণ করেছে, আর মাত্র ২২ হাজার ৬২৭ জন দুই মাস মেয়াদি হাউসকিপিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তার মানে, প্রায় ৪৪ হাজার নারী কর্মী কোনো প্রশিক্ষণেই অংশগ্রহণ করেননি, অথবা করলেও কোনো এক কারণে তা রেকর্ডভুক্ত হয়নি।
অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও অভিবাসী নারীর ক্ষমতায়ন
অন্যদিকে, হেভি ইকুইপমেন্ট অপারেশন এর মতো চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও বেশ স্বল্প বা অপ্রতুল। বিগত বছর মাত্র তিনটি টিটিসি হতে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও নীলফামারী) মাত্র ২৪০ জনকে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের শুধু রাজমিস্ত্রি, ওয়েল্ডিং, হাউসকিপিং বা স্যানিটারির প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, যেসব ট্রেডে বা সেক্টরে দক্ষ কর্মীর বিদেশে চাহিদা রয়েছে-সেই ক্ষেত্রগুলোতে কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
দক্ষতার স্বীকৃতি প্রদান
অভিবাসী শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি দিতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, যার ভিতর একটি হচ্ছে আরপিএল প্রদান (Recognizing Prior Learning-RPL), যা বর্তমানে বিভিন্ন কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে স্বল্পমূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু, তা যে খুব ফলপ্রসূ হচ্ছে, বা বিদেশ ফেরত কর্মীদের আগ্রহী করছে- তা নয়। সরকারি হিসেবে ২০২১-২২ সালে মাত্র পাঁচ হাজার ৭৭৪ জন এই সনদ নিয়েছেন, যার ভিতর ৭১৫ জন মন্ত্রণালয়ের ফান্ডে, ৪০০ জন আইএলওর ফান্ডে ও বাকি চার হাজার ৬৫৯ জন নিজ খরচে এই সনদ নিয়েছেন। তার মানে হলো, উদ্যোগটি চমৎকার হলেও বিদেশ ফেরত ও দক্ষ কর্মীরা এই বিষয় জানেন না, অথবা কোনো এক কারণে তারা আগ্রহী নন।
দক্ষ কর্মী তৈরী ও নিরাপদ অভিবাসন প্রসারে ঘাটতি কোথায়?
আসলে যুযোপযোগী প্রতিটি উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা দক্ষ কর্মী প্রেরণ ও শ্রম অভিবাসনকে নিরাপদকরণে এখনো পিছিয়ে আছি। কারণ হিসেবে
প্রথমত-বলা যায়, সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর পেশাদারিত্বের অভাব এবং প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মকর্তা- কর্মচারীর স্বল্পতা।
দ্বিতীয়ত-সম্পদ বা রিসোর্স এর কার্যকরী ব্যবহার ও সঠিক বন্টন ও একটি বাঁধা- যার কারণে শ্রম অভিবাসনে ইচ্ছুক কর্মীরা সঠিক সেবাটি পান না ।
তৃতীয়ত-সরকারি- বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সেবার ভিতর সমন্বয়ের অভাব।
চতুর্থত-সেবার বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রচারপ্রচারণার অভাব। সে সব কারণে, আমরা শ্রম অভিবাসী কর্মীদের সঠিক সেবাটি কার্যকর ভাবে প্রদান করতে পারছি না। তাছাড়া, অন্যান্য প্রবাসী বা অনিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সরকারি অনেক সেবা প্রাপ্তি বেশ কঠিন।
আমাদের কি করণীয়?
প্রথমত: আমাদেরকে সরকারি সেবা সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারকে জানাতে হবে, সেবার প্রচার করতে হবে, স্থানীয় প্রশাসনকে প্রশিক্ষিত করতে হবে, ও প্রয়োজনে ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে তথ্য সেবা প্রদান করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: সরকারি প্রতিষ্ঠানে (ডেমো, টিটিসি) কর্মীর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে হবে, ও কর্মকর্তা – কর্মচারীকে অভিবাসী সেবা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
তৃতীয়ত: আরপিএল, ও অন্যান্য ট্রেড ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ফি পরিমাণ কমাতে হবে ও প্রয়োজনে কল্যাণ বোর্ডের অর্থ হতে বরাদ্দ দিয়ে বিদেশগামী কর্মীদের কারিগরী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান ও ইকুইপমেন্ট ক্রয় করতে হবে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সাজাতে হবে।
চতুর্থত: পিছিয়ে পড়া ও জলবায়ু ঝুঁকিসম্পন্ন জেলাগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে, সেখান হতে নিরাপদ শ্রম অভিবাসনের হার বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
পঞ্চমত: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রম অভিবাসন সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রবাসী, অভিবাসী ও অভিবাসী পরিবারকে সম্পৃক্তকরে প্রকল্পের কাজ সাজাতে হবে ও অধিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রবাসীরা দেশের কোনো উৎপাদিত পণ্য বা সেবা সরাসরি ভোগ করেন না অথবা গ্রহণ করেন না। বরং তাদের প্রেরিত রেমিট্যান্সে দেশে অবস্থিত তাদের পরিবার স্বচ্ছন্দে জীবন ও জীবিকা নির্বাচন করে থাকেন, দেশ হয় বৈদেশিক মুদ্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আরো দেখুন : অভিবাসীদের কল্যাণ কি শুধু অভিবাসীদের অর্থেই সীমাবদ্ধ?
তাই তাদের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি দিন পালন আবশ্যিক। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে যে, শুধু একটি দিন উদযাপন করে তাদের অবদানকে স্বীকৃত প্রদান করলেই হবে না, বরং তাদের জন্য সেবা সহজীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, দক্ষতা প্রশিক্ষণের মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাদের সঙ্গে ঘটা প্রতারণাসমূহের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই জাতীয় প্রবাসী দিবস পালন সফল হবে।
লেখক : আমিনুল হক তুষার, শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষক ও উন্নয়ন কর্মী, উপদেষ্টা, বাংলাদেশী অভিবাসী নারী কর্মী এসোসিয়েশন (বমসা)